টাঙ্গাইলে ব্রিজ না থাকায় দুর্ভোগে পাঁচ লাখ মানুষ

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, টাঙ্গাইল | 2023-09-01 16:08:39

টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার কাশিলের ঝিনাই নদীর ব্রিজ ভেঙে যাওয়ায় প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ দুর্ভোগে ভুগছে। ঝিনাই নদীর এক পাড় ভেঙে যাওয়ায় ঠাই দাঁড়িয়ে রয়েছে ভাঙণ কবলিত দির্ঘ দিনের পুরাতন ব্রিজটি। খরস্রোতা নদীতে ঝুঁকি নিয়েই নৌকায় পারাপার হচ্ছে সাধারণ লোকজন এবং স্কুল ও কলেজগামী শিক্ষার্থীরা। দুই বছর আগে সেখানে একটি নতুন ব্রীজ নির্মাণ শুরু হলেও মাত্র তিনটি পিলারের কাজ সম্পান্ন হয়েছে। এতে করে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সময়মত ব্রিজ না হওয়ার জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতা গাফলতি ও অবহেলাকেই দায়ী করছেন স্থানীয় ভুক্তভোগী লোকজন।

২০০০ সালে ঝিনাই নদীর ওপর ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। ২০০৭ সালে বন্যায় এই ব্রিজটির ব্যাপক ক্ষতি হয়। ব্রিজের নিচের পিলারের রড বেরিয়ে আসে। ভেঙে যায় অনেক পিলার। এছাড়া ঝিনাই নদীর ব্যাপক ভাঙনে ব্রিজের উত্তর পাশে ৫’শ মিটার ভেঙে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। ফলে উপজেলা পাঁচটি ইউনিয়ন উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। উপজেলার উত্তরে রয়েছে কাশিল, বাসাইল, কাউলজানী ও ফুলকী ইউনিয়ন। দক্ষিণে রয়েছে হাবলা, কাঞ্চনপুর, ফতেপুর ও ডুবাইল ইউনিয়ন। মাঝ খানে ঝিনাই নদী। নদী ধারা বিচ্ছিন্ন রয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। ব্রীজ না থাকায় নৌকা দিয়ে নদী পারাপার হতে হচ্ছে এসব ইউনিয়নের লোকজনকে। আটটি ইউনিয়নের প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার হচ্ছে। আবাদি জমির ফসল ও কোন রোগী উপজেলা সদরে নিয়ে আসা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। চরম ভোগান্তিতে পড়েছে স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। নদী পাড়ে এসে দির্ঘ সময় দাড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। এতে অর্থ ও সময়ের অপচয় হচ্ছে।

টাঙ্গাইল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২৭০ মিটার ব্রীজটি নির্মাণের জন্য ২৬ কোটি ৫৯ লাখ ৮৭ হাজার ৪৩৯ টাকার দরপত্র আহবান করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ২০২০ সালের ২৩ মার্চ ব্রিজটি নির্মাণের জন্য কার্যাদেশ পায় ময়নুদ্দিন লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ৬ মাসের মধ্যে ব্রিজের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও নদীর পাড়ে মাত্র তিনটি পিলার করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ব্রিজটি নির্মাণ না হওয়ায় ভোগান্তি পোহাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ।

কাশিল দক্ষিণ পাড়া গ্রামের আব্দুর রহমান বলেন, ব্রিজ না থাকায় আমরা খুবই কষ্ট করছি। ছেলে মেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে চিন্তায় থাকতে হয়। তাছাড়াও নদী পাড়ে এসে নৌকা ধরতে না পারলে প্রায় ২০-২৫ মিনিট বসে থাকতে হয়। সময়মত পৌঁছানো যায় না। তিনি দ্রুত ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানান।

কাশিল উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র রাব্বি মিয়া বলেন, বর্ষা মাসে নৌকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হয়ে স্কুলে আসতে হয়। কখন ডুবে যাবে ভয়ে ভয়ে নদী পার হই।

কাশিল গ্রামের আন্না বেগম বলেন, এই ব্রিজ না থাকার কারণে আমাদের অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে। রোগী নিয়ে হাসপাতালে যেতে নৌকার জন্য বসে থাকতে হয়। আমরা চাই অতি তাড়াতাড়ি যেন এই ব্রিজটি করে দেয়।


কাশিল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক সচিন্দ্র চন্দ্র ঘোষ বলেন, ব্রীজ না থাকায় নাটিয়া পাড়ার সাথে বাসাইলের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এত বড় নদী পাড় হয়ে বিদ্যালয়ে আসতে আমাদের খুবই কষ্ট হয়। আমরা দ্রুত ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।

কাশিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রমজান আলী বলেন, জনস্বার্থে জরুরী ভিত্তিতে এই ব্রিজটি নির্মাণ করা দরকার। ব্রীজ না থাকায় আমাদের এই উপজেলাকে দুই ভাগে বিচ্ছন্ন করে রেখেছে। অপরিকল্পিত খনন ও গাইড বাঁধ নির্মাণ না করায় আগের ব্রীজ ভেঙে গেছে।

বাসাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপরিকল্পিত নদী খননের ফলে ব্রীজগুলো ভেঙে গেছে। তাদেরকে এ ব্যাপারে লিখিত ভাবে জানানো হলেও তারা এ ব্যাপারে কোন ব্যাবস্থা নেয়নি। বালু দস্যুরা প্রতিদিন নদী থেকে অবৈধভাবে ড্রেজিং করে বালু উত্তোলন করছে। এতে করে নথখোলা সেতুটিও হুমকির মুখে পড়বে। তিনি যথাসময়ে ব্রিজটি নির্মাণের দাবি জানান।

টাঙ্গাইল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নিবার্হী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, নদীর দিক পরিবর্তনের ফলে এখানে আগের ব্রীজটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। পানি উন্নয়নবোর্ডের নকশা অনুযায়ী এই ব্রিজটি পল্লী সড়কের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ঝিনাই নদী উপর কাশিল নামক জায়গায় হচ্ছে। ব্রীজের সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্ষার সময় কাজের দৃঢ় গতি ছিল। এখন পানি কমেছে দ্রুতই ঠিকাদার কাজ করবে। কাজ করলে সময় মতো কাজ শেষ হবে। আমরা ঠিকদারকে বলেছি ও চিঠি দিয়েছি সে অনুযায়ী সে দ্রুত কাজ করবে সেই অঙ্গীকার করেছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর