হাতুড়ি দিয়ে কলেজ শিক্ষার্থীকে পেটালো প্রতিপক্ষরা

, জাতীয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজবাড়ী | 2023-09-01 05:32:45

ব্যথার যন্ত্রণায় হাসপাতালের বিছানায় ছটফট করছেন সজিব খান (১৯) নামের এক কলেজ শিক্ষার্থী। পাশে নিরুপায় হয়ে বসে রয়েছেন স্বজনরা। বড় ভাইয়ের সঙ্গে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ছোট ভাই সজিব খানকে লোহার চেইন ও হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছে প্রতিপক্ষরা।

সজিব খান রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের দূর্গাপুর গ্রামের মো. শাহিনুর আলী খানের ছোট ছেলে। তিনি জামালপুর কলেজের একাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী। লেখাপড়ার পাশাপাশি সজিব খান সময় পেলেই বাবাকে সহযোগিতা করার জন্য ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চালাত। আর ইজিবাইক চালাতে গিয়েই হামলার শিকার হয়।

এ ঘটনায় সজিবের বাবা মো. শাহিনুর আলী খান বাদী হয়ে গত ২৬ মে চার জনের নাম উল্লেখ করে ৬-৭ জনকে অজ্ঞাত করে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

অভিযুক্তরা হলো- বহরপুর ইউনিয়নের মধুপুর গ্রামের মো. নবিয়াল মন্ডলের ছেলে মো. হাছিব মন্ডল (১৯), সোহেল মন্ডলের ছেলে মো. মারুক মন্ডল (১৯), শাহিন মন্ডলের ছেলে মো. ইমন মন্ডল (১৮) ও ইলিশকোল গ্রামের মো. মনছুর মিয়ার ছেলে রবিন মিয়া (১৯)।

আহত সজিব খান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, কলেজ ছুটি থাকায় ২৬ মে শুক্রবার সকালে বাবার ইজিবাইকটি নিয়ে বের হয়ে বালিয়াকান্দির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। জামালপুর হতে বালিয়াকান্দি সরকারি কলেজ গেটের সামনে আসা মাত্রই ১০-১২ জন ইজিবাইক থামিয়ে আমাকে কলেজ মাঠে ধরে নিয়ে যায়। এরপর কিছু না বলেই তারা আমাকে লোহার চেইন ও হাতুড়ি দিয়ে এলোপাতাড়ি ভাবে শরীরের বিভিন্ন জায়গাতে পেটাতে থাকে।

এক পযার্য়ে আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তারা আমার ব্যবহৃত একটি স্মার্ট ফোন ও নগদ ২০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। আমার চিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে এসে আমাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে এনে ভর্তি করেন। আমি এখনো ব্যথায় ঘুমাতে পারছিনা। শরীরের পিঠের মাংসগুলো থেতলে গিয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডা. নাসির উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, বর্তমান সজিব হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। তার আরও কয়েকটি টেস্ট করানো হবে। আগের থেকে এখন একটু সুস্থ। তবে পুরোপুরি সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে।

সজিবের বাবা জানান, আমার বড় ছেলের সঙ্গে বিবাদীদের আগের ঝামেলা রয়েছে। বড় ছেলেকে না পেয়ে ওরা আমার ছোট ছেলেকে বেধড়ক পিটিয়েছে। ছেলেটি এখন ভীষণ অসুস্থ। মানষিক ভাবেও ভেঙে পড়েছে। কলেজেও যেতে পারছে না। কয়েকদিন পেরিয়ে গেলেও এখনো অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়নি। আদৌ বিচার পাব কিনা জানি না?

জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম ফরিদ হোসেন বাবু জানান, ঘটনা শোনার পর আমি হাসপাতালে ছেলেটিকে দেখতে যায়। ছেলেটিকে যে ভাবে হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হয়েছে তা খুবই দুঃখজনক। ছেলেটি ইজিবাইক চালিয়ে নিজের লেখাপড়ার খরচ নিজেই চালায়। এতো বড় ঘটনায় মামলা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখনো মামলা নথিভুক্ত না হওয়ায় আমি বিস্মিত। কেন হচ্ছে না তা বুঝতে পারছিনা।

থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, এ ঘটনায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিষয়টি জানতে অভিযুক্ত রবিন মিয়ার বাবাকে ফোন দিলে তিনি বলেন, আমার ছেলে নির্দোষ। সে বাড়িতে কাজ করছিল। তার এক বন্ধু তাকে ডেকে নিয়ে যায়। তবে আমার ছেলে সজিবকে মারধর করেনি। বিষয়টি স্থানীয় ভাবে মিমাংসা করার চেষ্টা চলছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর