‘টাকা কবে পাবেন তারিখ দিতে পারবো না’

, জাতীয়

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 23:40:55

টাকা কবে পাবেন তারিখ দিতে পারবো না। এক মাস পরে ফোন দেবেন, তখন যদি আসতে বলি তারপর আসবেন। আর যদি চেক রেডি না হয় তাহলে! তখনকার কথা তখন বলবেন, আগেই কিছু বলতে পারবো না।

হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সিনিয়র এক্সিকিউটি ভাইস-প্রেসিডেন্ট (হেড অব ট্রেনিং রিসার্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) ফরিদ জামান বিমা দাবি পরিশোধের বিষয়ে গ্রাহককে এভাবেই বিদায় করতে চাইলেন।

শফিকুল ইসলাম নামের ওই ব্যক্তি এবার তাকে অনুরোধ করলেন, দেখেন আমি দুই বছর ধরে ঘুরতেছি। এর আগেও অনেকবার এভাবে আমাকে বলা হয়েছে। যে ফোন নম্বর দিয়েছেন সেই ফোনও রিসিভ করা হয় না। গ্রাহকরা আমাকে চাপের মধ্যে রেখেছে। আমি ভয়ে ভয়ে তাদের এড়িয়ে চলি। ফরিদ জামান এবার তাকে একই জবাব দিলেন, আপনি সামনে মাসের (সেপ্টেম্বর) ২৫ তারিখে ফোন দিয়ে জেনে নেবেন। আমি যদি আসতে বলি তবেই আসবেন, না হলে আসবেন না। এর বেশি কিছু বলতে পারবো না।

শফিকুল ইসলাম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ওদের পেছনে ঘুরতে ঘুরতে হয়রান হয়ে গেছি। আমার জীবন যায় যায় অবস্থা। অফিসে এলে তারা কোনো তারিখ দেয় না। আবার এলাকায় গেলে গ্রাহকদের চাপ। কান ধরেছি জীবনে আর বিমা নয়।

তিনি বলেন, আমার তালিকায় থাকা গ্রাহকরা খুবই গরিব মানুষ। ক্ষুদ্র বিমা করেছে, খেয়ে না খেয়ে টাকা জমা দিয়েছে। রোজিনা আক্তার (পলিসি নম্বর-০০০০০০৪৯৭০৪০) অন্যের বাসা-বাড়িতে কাজ করেন। তার পাওনা টাকার পরিমাণ মাত্র ৫ হাজার ১৬৭ টাকা। সেই টাকার জন্য দেড় বছর ধরে ঘুরতে হচ্ছে। হাসিনা বেগমের পাওনা মাত্র ২ হাজার ৩৩৩ টাকা। সেই টাকার জন্য বছরের পর বছর এভাবে ঘুরানো হচ্ছে।

ফরিদপুর থেকে একজন গ্রাহক এসেছিলেন বিমা দাবির চেক নিতে। তিনিও দীর্ঘদিন ধরে এভাবে ঘুরছেন। ভদ্রলোক তার স্ত্রীর অসুস্থতার কথা বলেও কোন সুরাহা করতে পারলেন না। তিনি আক্ষেপ করে বললেন, যেভাবে ঘুরাচ্ছেন, আসা-যাওয়ায় সব টাকা খরচ হয়ে যাবে।

সিঁড়ির গোড়ায় একজন জানালেন, এভাবে ঘুরে লাভ হবে না। লাইন করতে পারলে সহজেই পাবেন। অনেকেই নাকি এভাবেই নিজের পাওনা তুলছেন। তার এই ইঙ্গিতপুর্ণ কথায় অর্থ হচ্ছে, কমিশন দিলে কাজ হবে, না হলে ঘুরতে থাকেন। অর্থাৎ হোমল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের ঘুষ দুর্নীতি ‍ঢুকে পড়েছে। যারা ঘুষ দিচ্ছেন তাদের চেক হচ্ছে, অন্যদের ঘুরতে হচ্ছে মাসের পর মাস।

ওই গ্রাহকদের বিদায়ের পর আমার বিমা দাবির চেক নিয়ে আলাপ শুরু। ২০২১ সালে বিমার মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে, টাকা দেওয়ার কথা ২০২২ সালে। ওই বছর গেলে ৭ মাস পর ১৭ ‍জুলাই ২০২৩ তারিখে চেক দেওয়ার কথা বলেছিলেন। এরপর গেল আগস্টে যেতে বলেছিলেন। এবার আর তারিখ দিলেন না, এবার ফোন দিতে পারমর্শ দিলেন। ফোন দিয়ে জানতে হবে কেনো? আজকে চেক হচ্ছে না, কবে হবে জানান। উত্তর দিলেন, কোম্পানি তার নিজস্ব সিদ্ধান্তে চলবে, এর চেয়ে বেশি বলতে পারবো না।

বাংলাদেশে বিমা সম্পর্কে গ্রাহকদের মধ্যে এক ধরনের নেতিবাচক ধারণা বিদ্যমান। কয়েক দশক ধরে সেই ধারায় কিছুটা পরিবর্তন আসছিল। কিন্তু হোমল্যান্ডের মতো কিছু প্রতিষ্ঠানের কারণে মানুষ বিমার প্রতি বিমুখ হয়ে উঠছে।

বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জাহাঙ্গীর আলম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, গ্রাহকদের ভোগান্তির কারণে লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বদনাম হচ্ছে। আমাদের কাছে অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেই। নানাবিধ অনিয়মের কারণে হোমল্যান্ডের সিইওকে কর্মহীন করে রাখা হয়েছে। পর্ষদকে ডেকে বলা হচ্ছে, কোন রকম ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের চেয়ারম্যান এ বিষয়ে খুবই তৎপর। যারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন, তারা আমাদের কাছে অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর