বাড়ছে যমুনার পানি, ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা

, জাতীয়

সাহিদুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, জামালপুর | 2023-09-01 22:05:47

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে তৃতীয় দফায় বৃদ্ধি পাচ্ছে যমুনা, ব্রহ্মপুত্র ও অন্যান্য নদের পানি। পানি বাড়ার সাথে সাথে ভাঙতে শুরু শুরু করেছে নদীর পাড়। গত কয়েক দিনে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের ২০টি পরিবারের বসতভিটা যমুনা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে অর্ধকোটি টাকার ব্যয়ে তিনতলা বিশিষ্ট সদ্য নির্মিত বড়খাল উচ্চ বিদ্যালয় ও শত শত পরিবারের বসত বাড়ি।

শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) সকালে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চিকাজানী ইউনিয়নের বড়খাল ও মাঝিপাড়া এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, পানি বাড়ার সাথে সাথেই বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) বিকাল থেকে বড়খাল, মাঝিপাড়া ও বওলাতলী খানপাড়া এলাকায় যমুনা নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, বিগত দিনে অল্প ভাঙন হলেও এবার তীব্র স্রোতে বসত ভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। গত কয়েক দিনেই যমুনা গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে দশটি পরিবারের বসতভিটা। এছাড়াও ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে আরও শতাধিক পরিবার। অনেকের শেষ সম্বল এই বসতভিটা। সবকিছু হারিয়ে অসহায়ের মত পথেই ঠাঁই হচ্ছে তাদের।

ভাঙনের শিকার হোসেন আলী খুট্ট বার্তা ২৪.কমকে বলেন, এক সময় আবাদী জমি বসতভিটা সবই ছিল তার। সর্বনাশা যমুনার গর্ভে তা বিলীন হয়ে গেছে। শেষবার যেখানে আশ্রয় নিয়েছিল সে স্থানটিও যমুনার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেল। এখন পরিবার নিয়ে মাথাগোজার ঠাঁই টুকুও নেই। অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে কোনো রকমে দিনপাত করছেন।

বড়খাল গ্রামের সুলতান মিয়া বার্তা২৪.কমকে জানান, দীর্ঘ দিন ধরে এ এলাকা যমুনার ভাঙনে জর্জরিত। পানি উন্নয়ন বোর্ড তড়িঘড়ি করে জিও ব্যাগ ফেলে সাময়িকভাবে ভাঙন রোধের ব্যবস্থা করে। সে চেষ্টাও বিফলে গেল এ বছর। যমুনায় তীব্র স্রোতের তোড়ে ভেঙে নেয় জিও ব্যাগের ডাম্পিং। ভাঙন রোধে স্থায়ী পদ্ধতি প্রয়োগের দাবি জানান তিনি ।

মাঝিপাড়া গ্রামের সুকুমার চন্দ্র দাস বলেন, যমুনার গর্ভে এ অঞ্চলের হাজার হাজার একর জমি ও শত শত মানুষের বসতভিটা বিলীন হয়ে গেছে। যমুনা যে ভাবে ভাঙছে স্থায়ী ব্যবস্থা না নেওয়া হলে অল্প সময়ের মধ্যে বড়খাল, মাঝিপাড়া ও বওলাতলী খানপাড়াসহ চরডাকাতিয়া ও খোলাবাড়ী যমুনার গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।আমাদের দিনরাত কাটছে এখন ভাঙন আতঙ্কে।


বড়খাল গ্রামের আলী হায়তার বাবুল ও শফিকুল ইসলাম জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের জিও ব্যাগের ডাম্পিং যমুনার স্রোতের কাছে তুচ্ছ। দেওয়ানগঞ্জের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে বড়খাল, মাঝিপাড়া ও বওলাতলী খানপাড়া গ্রামকে ভাঙনের হাত থেকে বাঁচাতে স্থায়ী ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে দেওয়ানগঞ্জের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে ঐতিহ্যবাড়ী বড়খাল গ্রাম।

ওই এলাকার তোতা মিয়া, মিজান, সবুজ মিয়াসহত আরও অনেকেই বার্তা২৪.কমকে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড গত ২০২১ সালের শুরুতে বড়খাল গ্রামে ভাঙন কবলিত যমুনার বামতীরে ১০০ মিটার বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়। বর্ষা মৌসুমের প্রথম দিকে তার ভাটিতে আরও ১৫০ মিটার বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করেন। সে ডাম্পিং তীব্র স্রোতে নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায় এবং পূর্বের ন্যায় আবারও ওই স্থানে ভাঙন শুরু হয়। তৃতীয় দফায় হঠাৎ করে যমুনার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে ভাঙন চাপে বড়খাল, মাঝিপাড়া ও বওলাতলী খানপাড়ায়।

চিকাজানী ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম আক্কাস বার্তা২৪.কমকে বলেন, জিও ব্যাগের ডাম্পিং এর পরিবর্তে ইটের ব্যারাক করে ভাঙনরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা না নিলে এ নদীর ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে না। যমুনার ভাঙন কবলিত বড়খাল, মাঝিপাড়া, বওলাতলী খানপাড়াসহ চরডাকাতিয়া হয়ে খোলাবাড়ি পর্যন্ত ভাঙনরোধের স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে জেলা পাউবোকে জানানো হয়েছে।

জামালপুর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডে নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বার্তা ২৪.কমকে জানান, যমুনার ভাঙন রোধের স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে সমীক্ষা চলমান রয়েছে। সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর