ভোটে শান্তি চান প্রার্থীরাও

ঢাকা, জাতীয়

ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-08-25 21:17:48

ভোটের বাকি আর মাত্র চারদিন। শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় সরগরম সারাদেশ। নির্বাচন কমিশনেও (ইসি) চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। জাতীয়-আন্তর্জাতিক সকল মহলের প্রত্যাশা শান্তিপূর্ণ ভোট। আর ভোটে শান্তি চান প্রার্থীরাও। তাদের প্রত্যাশা অবাধ ও সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভোটাররা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিয়ে নির্বিঘ্নে বাড়িতে ফিরতে পারবেন। শান্তিপূর্ণ ভোটের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে ভোটারদের মুখোমুখি হতেও প্রস্তুত এই শান্তিকামী প্রার্থীরা।

বেশ কয়েকজন প্রার্থীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, নির্বাচন অবাধ-সুষ্ঠু হলে ফলাফল যাই হোক তারা তা মেনে নেবেন। সবাই চান ভোটের দিন কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকুক। কোনভাবেই যেন ভোটের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্ট না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকাবেন বলেও জানা তারা।

নানা কারণেই আলোচিত ঢাকা-১৩ আসন। ঢাকার দুটি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে একটি ঢাকা-১৩ আসন। ফলে এই আসনের ভোটে নজর রয়েছে সবার। এছাড়াও ভোটের মাঠে প্রচারণায় বাধা ও গ্রেফতারের অভিযোগ রয়েছে বিএনপি প্রার্থীর। অন্যদিকে এই আসনের ভোটে কোন সংঘাতের সুযোগ নেই দাবি আওয়ামী লীগের। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে শান্তিপূর্ণ ভোটের বিষয়ে একমত এই আসনের প্রার্থীরা।

ঢাকা-১৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাদেক খান বার্তা২৪.কমকে বলেন, “আমি শতভাগ শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পক্ষে। কারণ ভোটে অশান্তি হওয়ার কোন কারণ নেই। সবাইকে ভোটারের কাছে যেতে হবে, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রিক করতে হবে। ভোটার যাকে পছন্দ করবে তাকেই ভোট দেবে। আমরা একটি শান্তিপূর্ণ ভোট চাই। আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বিএনপির সালাম সাহেবকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। ভোটের শান্তির জন্য আমরা সব কিছু করতে প্রস্তুত। প্রয়োজনে এক মঞ্চে সকল প্রার্থীদের ভোটারদের মুখোমুখি করতে যদি কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়, আমি সেই মঞ্চে একসঙ্গে দাঁড়াতে চাই। কারণ নির্বাচন তো একজনকে নিয়ে হয় না, সবাইকে নিয়েই হয়।”

এই আসনে ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির প্রার্থী আব্দুস সালাম বলেন, আমি সবসময় শান্তিপূর্ণ ভোটের পক্ষে। ভোটের মাঠে প্রচারণায় এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সঙ্গে কোন দ্বন্দ্ব হয়নি। ভোটে শান্তির নিশ্চয়তা দেয়ার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। ভোটরদের নিশ্চিয়তা দেবে সেখানে কোন সমস্যা হবে না। শান্তিপূর্ণ ভোটের জন্য প্রশাসনকে যেখানে কঠোর হওয়া দরকার কঠোর হতে হবে, যেখানে নমনীয় হওয়া দরকার নমনীয় হতে হবে। প্রয়োজনে আমি সকল প্রার্থীর সঙ্গে এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রচারণা চালাতে প্রস্তুত আছি। ভোটাররা যাকে ইচ্ছা ভোট দেবেন। কিন্তু ভোটকেন্দ্রে যেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকে। কেউ যেন সন্ত্রাসের শিকার না হন।

ঢাকা-১২ আসনের প্রার্থী গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, আমরা অবশ্যই ভোটে শান্তি চাই। শান্তিপূর্ণ ভোটের বিষয়ে আমরা আশাবাদি। শান্তিপূর্ণ ভোট আয়োজনের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন ও সরকারের। কিন্তু  এখন পর্যন্ত তাদের যে ভূমিকা আমরা দেখতে পারছি তাতে শান্তিপূর্ণ ভোট ও জনগণের অংশগ্রহমূল পরিবেশ নিশ্চিত হয়নি। আমরা মনে করি জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য সক্রিয় হবেন। এবং তারা ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চাইলে ভোট দখলের যারা চিন্তা করেন তারা সফল হবে না। তারপরেও আমরা আশাবাদি। আমরা জনগণের উপর ভরসা রাখতে চাইছি।

শান্তিপূর্ণ ভোট চান নড়াইল-২ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এবং বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাও। নড়াইলে এক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেছেন, ‘যেহেতু ইলেকশন। জয় পরাজয় তো আছেই। তাই প্রতিপক্ষও আছে। কিন্তু আমি চাই না যে, প্রতিপক্ষকে কেউ মানসিক বা শারীরিকভাবে আঘাত করুক। আপনারা একটু দেখবেন এটা, আমাদের প্রতিপক্ষ যারা আছেন তাদেরকে যেন কোনোভাবেই আঘাত না করা হয়। এসময় দলীয় নেতাকর্মীদের শান্তিপূর্ণ পরিবেশে প্রচার-প্রচারণা চালানোর অনুরোধ জানান মাশরাফি। জনগণকে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়ারও অনুরোধ জানান তিনি।

শান্তিপূর্ণ ভোটের বিষয়ে আশাবাদি বিশিষ্টজনরা। তবে এ ক্ষেত্রে প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলগুলোর সহনশীলতা জরুরি বলে মনে করেন তারা। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বার্তা২৪.কমকে বলেন, শান্তিপূর্ণ ভোটের জন্য প্রার্থীদের এক মঞ্চে দাঁড়ানোর বিষয়টি অবশ্যই ইতিবাচক। তবে প্রার্থীরা হয়ত সমস্যা নয়, কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতি উৎসাহ ও  রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন রকমের হামলার বিষয়গুলো সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। আমরা শান্তিপূর্ণ ভোটের জন্য আশাবাদি হতে চাই। তবে অবস্থা এখন পর্যন্ত ইতিবাচক নয়।

সম্প্রতি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল (ডিআই) আয়োজিত 'শান্তিতে বিজয়' শীর্ষক প্রচারণা অনুষ্ঠানে এক মঞ্চে দাঁড়িয়েছিলেন বরিশাল-৫ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহিদ ফারুক শামীম, জাতীয় পার্টির মরতুজা আবেদীন ও বিএনপি প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার। এসময় নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হলে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে এবং উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তারা। ভোটের দিন শান্তিপূর্ণভাবে ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন শান্তিকামী এই প্রার্থীরা।

এদিকে শান্তিপূর্ণ ভোটের বিষয়ে আশাবাদি প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের নেতারাও। তারাও মনে করেন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যাবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যে একাধিকবার শান্তিপূর্ণ ভোটের বিষয়টি উঠে এসেছে।

প্রসঙ্গত ৩০০ আসনে জনপ্রতিনিধি বাছাইয়ে আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট হবে। নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ১০ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ৪৮০ জন। এরমধ্যে ৫ কোটি ২৫ লাখ ৪৭ হাজার ৩২৯ জন পুরুষ ভোটারের বিপরীতে নারী ভোটারের সংখ্যা ৫ কোটি ১৬ লাখ ৪৩ হাজার ১৫১ জন। ২ কোটি ৪০ লাখ তরুণ ভোটার প্রথম ভোট দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা মোট ভোটারের ২২ শতাংশ। এবারের ভোটে মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৪০ হাজার ১৮৩টি। ভোটকক্ষ ২ লাখ ৬ হাজার ৪৭৭টি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর