ধান ও পশুর দাম নিম্নমুখী, সার-বীজ কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন কৃষকরা

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, লালমনিরহাট | 2023-11-29 15:36:56

লালমনিরহাটের পুরোদমে ভুট্টা, আলু, পেঁয়াজ, রসুন চাষাবাদের কাজ ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। সার, বীজ, কীটনাশক কিনতে ঘরের ধান ও গৃহপালিত পশু বিক্রি করছেন তারা। কিন্তু বাজারে আমন ধান আর পালিত বিভিন্ন পশুর দাম প্রতিনিয়ত নিম্নমুখী হচ্ছে। প্রতিবছর ৩টি লাভজনক ফসল চাষাবাদের মধ্যে অন্যতম হলো, আমন ধান চাষ।

এ ফসল ঘরে তুলে এবং বাজারে বিক্রি করে কৃষক প্রয়োজনমত সার, বীজ, কীটনাশক কিনে ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসল চাষাবাদের প্রস্তুতি নেয়। এবারে হাটবাজারে বাইরের ক্রেতা না আসায় কাঙ্খিত দরে ধান ও পশু বিক্রয় হচ্ছে না।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিগত বছরের তুলনায় এ বছরে আমন ধান ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু বাজারে ধানের দাম নিম্নমুখী। শুধু ধান নয় অন্যান্য কৃষিপণ্য ও গৃহপালিত পশুর উপযুক্ত দামও মিলছে না। গত দশ দিনে মণ প্রতি (৪০ কেজি এক মণ) ১০০ থেকে ১১০ টাকা পর্যন্ত কমেছে ধানের দাম। এতে হাটবাজারে ধানের দামের পাশাপাশি গৃহপালিত পশু/গরু-মহিষের দামও নিম্নমুখী হওয়ায় বিপাকে পড়েছে কৃষকরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পাটগ্রাম উপজেলা কার্যালয় জানায়, এ জেলায় এক লাখ ৩ হাজার হেক্টর চাষযোগ্য জমি রয়েছে। জেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার ৩শত হেক্টর জমিতে আর ভুট্টা ৩২ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে। এ ছাড়া পেঁয়াজ ৯০০ হেক্টর ও রসুন ৪০০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।

কৃষি বিভাগ জানায়, লালমনিরহাটের বিভিন্ন চরাঞ্চলের ৪৫ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার আবাদ করা হয়ে থাকে।

একাধিক কৃষক জানান, বর্তমান বাজারে একমণ আমন ধান বিক্রয় হচ্ছে ১০৫০ থেকে ১০৭০ টাকা। গত দশ দিন আগে ছিল ১১৫০ থেকে ১১৮০ টাকা। ধানের উৎপাদন খরচ পড়ে সবমিলে মণপ্রতি প্রায় ৯০০ টাকা। ২৫ শতাংশ (স্থানীয় ভাষায় এক দোন) জমিতে ধান হয় ১৩ থেকে ১৪ মণ। বর্তমানে কৃষি উপকরণের দাম বেশি। ধান বিক্রয় করে চাষাবাদের খরচ আর নিজের (কৃষকের) পারিশ্রমিক ঠিকমত হচ্ছে না। ভুট্টা ও অন্যান্য আবাদ শুরু করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। একই অবস্থা জানা গেছে ফার্মে পালিত পশু/গরু-মহিষ নিয়ে। গত একমাস আগে বাজারে যে গরু-মহিষ বিক্রি হত তা প্রতিটিতে কমেছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা।

পাটগ্রাম উপজেলার একাধিক ধান ও চাল ব্যবসায়ী জানায়, জেলার পাটগ্রাম উপজেলার রসুলগঞ্জ হাটবাজারটি মূলত বাইরের বিভিন্ন খরিদদার/ক্রেতার উপর নির্ভরশীল। অবরোধ আর হরতালে বাইরের কোনো খরিদদার না আসায় এবং এখান হতে ধান কিনে বাইরে পাঠানো সম্ভব না হওয়ায় ধানের দর কিছুটা কমেছে।

তবে কৃষকদের দাবি- স্থানীয় অটোরাইস মিল মালিক ও ব্যবসায়ীরা কৃষকদেরকে হরতাল অবরোধের নামে ঠকাচ্ছেন। তারা ইচ্ছে করেই ধানের দর কম নির্ধারণ করে কিনছেন। অবশ্য মিলচাতাল মালিকেরা এ অভিযোগ অস্বীকার করেন।

জগতবেড় ইউনিয়নের কৃষক আতাউর রহমান বলেন, ৩৫ দোন/৯ একর জমিতে আমন ধান চাষাবাদ করেছি। সরকার ধানের দর নির্ধারণ করে দিয়েছে ১২০০ টাকা। কিন্তু বাজারে একহাজার বা একহাজার বিশ টাকা। একজন কৃষক কঠোর পরিশ্রম করে ধান আবাদ করে ন্যায্য দাম না পেলে খুব খারাপ লাগে। সবকিছুর দর ঊর্ধ্বগতি। আমরা মহাচিন্তায়।

পাটগ্রাম উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শ্যামল চন্দ্র রায় বলেন, পশুর (গরু, মহিষ, ছাগল) দর কমার মূল কারণ খোঁজা কঠিন। মানুষ হয়ত কিনছে কম এজন্য দাম কম। পর্যবেক্ষণ করতে হবে-কি কারণে দাম কমেছে। পশুর দাম কম এটা বেশিদিন থাকবে না। কয়েকদিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।

লালমনিরহাট কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক হামিদুর রহমান জানান, এবারে ধানের আবাদ বেড়েছে। অপরদিকে সারের দাম সরকারি ভাবে কিছুটা বেড়েছে। এতে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পেলেও বর্তমান যে ধানের বাজার দর গত বছরের তুলনায় বেশি, সেটা কৃষকের জন্য লাভজনক। হতাশ হওয়ার কিছু নেই।

এ সম্পর্কিত আরও খবর