ট্যুর প্যাকেজের প্রতারণা, বুকিং মানির নামে কোটি টাকা আত্মসাৎ

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-12-05 17:06:43

ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠান ‘ট্রিপকার্ড’ নামে একটি প্রতারক চক্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে আসছিল। এর মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণার শিকার হয়েছেন শতাধিক মানুষ।

রাজধানীর গুলশান এলাকার বাসিন্দা জুঁই আক্তার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত একটি কলেজে পড়াশোনা করেন। সম্প্রতি ভ্রমণের উদ্দেশ্যে মালদ্বীপ যাওয়ার জন্য ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠান ‘ট্রিপকার্ড’ ফেসুবকের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন।

অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় কম মূল্যে আকর্ষণীয় প্রাইজ দেখে আকৃষ্ট হন জুঁই। এরপর ভিসা ও অন্যান্য খরচের জন্য ৫৫ হাজার টাকা দেন। কিন্তু টাকা দেওয়ার কিছু দিন পরই দেখতে পান তাদের ‘ট্রিপকার্ড’র অফিস বন্ধ। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তারা অফিস ছেড়ে চলে গেছেন। নানাভাবে চেষ্টা করেও আর যোগাযোগ করতে পারেন নি। পরিবার নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার আশায় টাকা দিয়ে প্রতারণার শিকার হন জুঁই। 

মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টু রোডে ডিবিতে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘ট্রিপকার্ড’ নামের কথিত এই ট্যুর অপারেটর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন পেইজের মাধ্যম বিজ্ঞাপন দিত। তারা বিভিন্ন প্যাকেজের আওতায় দিন ও রাত থাকা, হোটেলে বুকিং, এয়ারপোর্ট পিকআপ, ড্রপআপ, গাইডের মাধ্যমে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণের ট্যুর প্যাকেজ ঘোষণা করে। এক সঙ্গে ৪০ জনের ভিসা ও বিমানের টিকেট কাটাসহ সকল দায়িত্ব নিজেরাই পালন করার আশ্বাস দেয়। ফলে কম টাকায় সকল সুবিধা দেওয়ার ঘোষণা দেয়।  অপুর নেতৃত্বে চক্রটি গত ছয় মাসে ৫৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ‘ট্রিপকার্ড’র নামের ওয়েবসাইটের ড্যাশবোর্ডের তথ্যে গত ছয় মাসে শতাধিক মানুষের সঙ্গে প্রতারণার তথ্য পেয়েছে।


সম্প্রতি, রাজধানীর বনানী থানায় এক ভুক্তভোগী বাদী হয়ে ‘ট্রিপকার্ড’র নামের কথিত এই ট্যুর অপারেটরের বিরুদ্ধে মামলা করেন এক ভুক্তভোগী। মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, চলতি বছরের ১৯ আগস্ট ফেসবুকের মাধ্যমে কক্সবাজারসহ মালদ্বীপ, শ্রীলংকার, থাইল্যান্ডে ট্যুর প্যাকেজের বিভিন্ন লোভনীয় অফার দিয়ে আসছে। পরবর্তীতে কম টাকায় বিদেশে ঘুরতে যাওয়ার জন্য তিন বন্ধু মিলে ট্যুর প্যাকেজে মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা এবং দুবাই যাওয়ার জন্য বুকিং দেন। এজন্য তারা কয়েক দফায় ব্যাংক ও নগদে প্রায় তিন লাখেরও বেশি টাকা জমা দেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঘুরতে যাওয়ার জন্য টাকা পয়সা দেওয়ার পরেও বিদেশে আর নিয়ে যায় না। বরং নানাভাবে কালক্ষেপণ করতে থাকে। এমন কি টাকা চেয়ে যোগাযোগ করলে কথিত এই ‘ট্রিপকার্ড’র মালিক বাদীকে হত্যার হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে অফিসসহ যোগাযোগের সকল নাম্বার বন্ধ করে দেয়। প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে মামলা করেন ওই ভুক্তভোগী।

মামলা তদন্তে নেমে পর্যটকদের বিশ্বাসকে পুঁজি করে প্রতারণায় জড়িত চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহনাগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- চক্রের মূলহোতা ও প্রতিষ্ঠানের মালিক সাইফুল আলম ওরফে অপু ও তার আপন ভাই মো. আহাদ আলম ওরফে তালহা ও প্রতিষ্ঠানের কথিত এডমিন মো. আমিনুল ইসলাম। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ, ১৪টি পাসপোর্ট, ১০টি মোবাইল ফোন, ১৫টি সিমকার্ড, ২টি ল্যান্ডফোন, একটি ওয়াকিটকি সেট, একটি সিপিইউ ডেক্সটপ, পাঁচটি এটিএম কার্ড, ছয়টি ব্যাংক চেক উদ্ধার করা হয়।

এই সকল প্রতারক চক্রের হাত থেকে সর্তক থাকার আহবান জানিয়ে গোয়েন্দা প্রধান বলেন, যে কোন ওয়েবসাইট বা ফেইসবুক পেইজে পরিচয় নিশ্চিত না হয়ে লেনদেনের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। আকর্ষণীয় ও কম মূল্যের বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ না হয়ে, বৈধ লাইসেন্সধারী ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে সেবা নিতে হবে। কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির মাধ্যমে এ ধরনের প্রতারণার শিকার হলে থানায় মামলা বা অভিযোগ দিতে হবে। এছাড়া নিজের পাসপোর্ট কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর