ছোট্ট ওমরকে এমনভাবে মারতে পারলেন?

, জাতীয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো | 2023-12-10 20:50:26

দুই বছরের ওমর ফারুক। গোলগাল মিষ্টি চেহেরা। দেখলেই আদর করতে ইচ্ছে করবে যে কারও। সেই একরত্তি বাচ্চাটাকেই দেয়ালে আছড়ে মেরে ফেললেন পাষণ্ড মো. ইয়ামিন। লোমহর্ষক এই ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রাম নগরের ইপিজেড এলাকায়।

রোববার (১০ ডিসেম্বর) সকালে সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জানিয়েছেন নগর পুলিশের বন্দর জোনের উপকমিশনার শাকিলা সোলতানা।

এর আগে, শনিবার (৯ ডিসেম্বর) জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে পুলিশ নগরীর ইপিজেড থানার আকমল আলী রোডের পকেট গেট এলাকা থেকে ইয়ামিনকে গ্রেফতার করে।

পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতার ইয়ামিন শিশুটির মায়ের তৃতীয় স্বামী। আর নির্মম মৃত্যুর শিকার ফারুক ছিল তার মায়ের দ্বিতীয় স্বামীর সন্তান। তাই তার মাকে বিয়ে করলেও আগের সংসারের ছেলেকে সহ্য করতে পারতেন না ইয়ামিন। মায়ের অগোচরে শিশুটিকে সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়ে নির্যাতন করতেন ইয়ামিন। একপর্যায়ে তাকে দেয়ালে আছড়ে মেরেই ফেললেন।

ইপিজেড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হোসেন জানান, রওশনের ছেলেকে ইয়ামিন কোনোভাবেই সহ্য করতে পারতেন না। বিষয়টি আবার রওশন বুঝতে পারতেন না। তিনি যথারীতি ছেলেকে ইয়ামিনের কাছে রেখে কারখানায় কাজে চলে যেতেন। ৬ ডিসেম্বর রওশন কাজে যাওয়ার পর ইয়ামিন শিশুটির গায়ে সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়েছিলেন। সেটি বুঝতে পারেননি রওশন। পরদিন ইয়ামিন শিশুটিকে ধাক্কা দিলে দেয়ালের সঙ্গে লেগে মাথার পেছনে গুরুতর আঘাত পায়।

ওইদিন বিকেলে রওশন আরা বাসায় ফিরে সন্তানকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখতে পান। পরে দ্রুত ইয়ামিনকে সঙ্গে নিয়ে শিশুটিকে প্রথমে মা ও শিশু হাসপাতালে এবং পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। শিশুটির অবস্থার অবনতি হতে থাকলে তার আইসিইউ সাপোর্টের প্রয়োজন হয়। চমেক হাসপাতালে আইসিইউ বেড খালি না থাকায় ওমর ফারুককে বেসরকারি হলি হেলথ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মারা যায় ফারুক।

ওসি বলেন, শনিবার সকালে মৃত ওমর ফারুককে হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ইয়ামিন তার দাফনের ব্যবস্থা করছিলেন। তখন রওশন আরা চিৎকার করে কান্না শুরু করেন এবং ছেলের মৃত্যুর জন্য ইয়ামিনকে দায়ী করতে থাকেন। তখন প্রতিবেশীরা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশকে বিষয়টি জানান। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ইয়ামিনকে আটক করে।

এ ঘটনায় রওশন আরা ইপিজেড থানায় ইয়ামিনকে আসামি করে থানায় মামলা করেছেন। গ্রেফতার মো. ইয়ামিনের বাড়ি গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায়। ইয়ামিন রঙ মিস্ত্রির কাজ করেন।

মৃত্যুর পর ছোট্ট ওমরের কয়েকটা ছবি তুলেছেন স্থানীয়রা। মুখে যেন তখনো লেগে আছে হাসি। নীরব-নিথর শরীরের এখানে ওখানে ছোপ ছোপ কালো দাগ। এই দাগ সিগারেটের ছ্যাঁকের!

এ সম্পর্কিত আরও খবর