নতুন সরকারের জনপ্রশাসনমন্ত্রী কে হবেন?

ঢাকা, জাতীয়

রেজা-উদ্-দৌলাহ প্রধান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 10:16:29

ট্রয় সিনেমার পরাক্রমশালী যোদ্ধা ছিলেন হেক্টর। ছোট ভাই প্যারিস ও রাজ্যকে রক্ষায় শত্রুর বিপক্ষে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে যুদ্ধ করে গেছেন শত্রুর বিরুদ্ধে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে নিরাপদ রাখা ও জাতির ক্রান্তিকালে ত্রাণকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম প্রমাণ করেছেন বাংলাদেশের এ যুগের হেক্টর তিনি। জীবনের শেষ পর্যন্ত তিনি শেখ হাসিনা ও দেশের প্রশ্নে ছিলেন আপোষহীন।

বোন শেখ হাসিনার প্রশ্নে আশরাফ যেমন ছিলেন অবিচল তেমনি ভাই আশরাফকেই সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করেন বোন শেখ হাসিনা। তার সেরা প্রমাণটা পাওয়া যায় ২০১৫ সালে। সৈয়দ আশরাফ তখন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী। সে বছর ৯ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে ওই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রিত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে দফতরহীন মন্ত্রী করেন।

চারদিকে তখন বিস্ময়। ‘সৈয়দ আশরাফকে শেখ হাসিনা সরিয়ে দিলেন, আশরাফ মোহ কি কেটে গেল শেখ হাসিনার!’। কত কথা গুজবের মত বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছিল। কিন্তু তখনো অনেকে জানত না সামনে কি চমক অপেক্ষা করছে। এক সপ্তাহ না যেতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই ১৬ জুলাই নিজের অধীনে রাখা ‘স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ’ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন সৈয়দ আশরাফকে। এতে করে অনেক নিন্দুকের মুখ ভোতা হয়ে যায়।

জানা গেছে, জনপ্রশাসনের মত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় সবসময় যে কোন সরকারের প্রধানমন্ত্রীর হাতেই ছিল। এমনকি বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রিসভাতেও জনপ্রশাসনের দায়িত্ব নেওয়ার মত বিশ্বস্ত কাউকে পাওয়া যায় নি। কিন্তু দেশ স্বাধীনের চার দশক পর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা জনপ্রশাসনের দায়িত্ব নির্ভারভাবে তুলে দিতে খুঁজে পেয়েছিলেন সৈয়দ আশরাফকে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেই ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আশরাফ। শেখ হাসিনার বিশ্বস্ততার প্রমাণ দিয়ে গেছেন শেষ দিন পর্যন্ত।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েই সৈয়দ আশরাফ মনোযোগ দেন মন্ত্রণালয়ে ডিসিপ্লিন ফিরিয়ে আনতে। ‘মেরিটের ভিত্তিতে’ জনপ্রশাসনে নিয়োগ ও পদোন্নতি হবে এটা ছিল তাঁর স্পষ্ট নির্দেশনা। বদলি, প্রমোশন, প্রেষণ সবকিছুই স্বচ্ছতার ভিত্তিতে করার নির্দেশ দেন। যদিও সৈয়দ আশরাফ নিয়মিত দফতরে যেতেন না। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কোন ফাইল তাঁর স্বাক্ষরের জন্যও কখনো আটকে থাকত না।

জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বার্তা২৪-কে বলেন, ‘সৈয়দ আশরাফ যেভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন তার সুফল এখন ব্যুরোক্রেসিতে দেখা যাচ্ছে। নিয়োগ, পদোন্নতি নিয়ে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ নেই বললেই চলে। একটা প্রফেশনাল ব্যুরোক্রেসি, সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন গঠনে তাঁর গৃহীত পদক্ষেপ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’

তিনি আরও বলেন, 'সরকারি চাকরিতে প্রবেশের জন্য তরুণদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পরীক্ষা ‘বিসিএস’ এখন নিয়মিত। এই পরীক্ষা নিয়ে কোনধরনের দুর্নীতির কালিমা কেউ দিতে পারে না। মেধার ভিত্তিতে দ্রুততম সময়ে নিয়োগ সম্পন্ন হচ্ছে। এর সবই সম্ভব হয়েছে বর্তমান সরকারের কার্যকর নেতৃত্বের জন্য।'

এদিকে একাদশ সংসদ নির্বাচনের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে আবারো সরকার গঠন করছে আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে মন্ত্রীরা শপথও নিয়েছেন। আগামী সোমবার (৭ জানুয়ারি) নতুন মন্ত্রিসভা শপথ গ্রহণ করবে। তার আগেই হুট করে না ফেরার দেশ চলে গেছে শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত কর্মী সৈয়দ আশরাফ।

এদিকে নতুন মন্ত্রিসভা কেমন হবে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যেমন বড় জয় পেয়েছে, তেমনি নতুন মন্ত্রীসভাতেও কিছু চমক থাকতে পারে। নবীন-প্রবীণ মিলিয়েই এবার মন্ত্রিসভা হবে।’

নতুন মন্ত্রিসভায় নতুন কেউ জনপ্রশাসনের দায়িত্বে আসবেন নাকি প্রধানমন্ত্রী আবারো নিজের অধীনে রেখে দেবেন সেটি জানতে হলে আমাদের তাই অপেক্ষাই করতে হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর