চট্টগ্রামে নিরাপদ ও দখলমুক্ত ফুটপাতের দাবিতে রাস্তায় শিক্ষার্থীরা

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম | 2024-02-29 19:41:37

চট্টগ্রাম নগরীতে নিরাপদ ও দখলমুক্ত ফুটপাতের দাবিতে মানববন্ধন করেছে ১৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শিক্ষার্থী।

বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নগরীর সাতটি পয়েন্টে মানববন্ধনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর দুই শতাধিক শিক্ষকও অংশ নেন। এসময় পথচারীরাও শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে সহমত পোষণ করেন।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, ফুটপাতের মালিক জনগণ। কিন্তু অবৈধভাবে ফুটপাত দখল করে রাখায় শিক্ষার্থীদের বাধ্য হয়ে ফুটপাত ছেড়ে রাস্তায় হাঁটতে হয়। ফলে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত বিভিন্ন সড়ক দুর্ঘটনায় পড়তে হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা নিরাপদে স্কুলে যেতে চায়, নিরাপদে ঘরে ফিরতে চায়। অবৈধ দখলদারদের কারণে কোন মাকে যাতে সন্তানহারা হতে না হয়। কোন শিক্ষার্থীকে যাতে পঙ্গু হতে না হয় সে বিষয় দায়িত্বশীলদের নিশ্চিত করতে হবে।

এদিন নগরীর রাইফেল ক্লাব থেকে জিপিও মোড় পর্যন্ত অপর্ণাচরণ সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কৃষ্ণ কুমারী সিটি সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষাথীরা মানবন্ধন করে।

একই সময়ে ফিরিঙ্গি বাজার মোড় থেকে আলকরণ হয়ে দোস্ত বিল্ডিং পর্যন্ত আলকরণ নুর আহমদ সিটি করপোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়, আলকরণ সুঃ আহমদ সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষাথীরা মানবন্ধনে অংশ নেয়। এছাড়াও পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন থেকে নতুন রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত রেলওয়ে হাসপাতাল কলোনী সিটি করপোরেশন উচ্চ বিদ্যালয় এবং লালদিঘী থেকে কোতওয়ালী পর্যন্ত পাথরঘাটা মেনকা সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, পাথরঘাটা সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করে।

এছাড়া আন্দরকিল্লা থেকে লালদিঘী পর্যন্ত পাথরঘাটা সিটি কর্পোরেশন কলেজ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কায়সার নিলুফার কলেজ এবং আন্দরকিল্লা মোড় থেকে চেরাগী পাহাড় মোড় পর্যন্ত জামালাখান কুসুম কুমারী সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, গুল-এজার বেগম সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং চেরাগী পাহাড় থেকে প্রেসক্লাব পর্যন্ত কদম মোবারক সিটি কর্পোরেশন বালক উচ্চ বিদ্যালয় এবং সরাইপাড়া সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধনে অংশ নেয়।

এ বিষয়ে চসিকের শিক্ষা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি ও কাউন্সিলর নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু বলেন, ‘ফুটপাত দখলমুক্ত করতে আমাদের শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা অনেকদিন ধরেই দাবি করে আসছিল। ফুটপাতগুলোতে হকাররা বসে থাকায় তারা রাস্তায় হাঁটতে বাধ্য হত। এতে অনেকেই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ওড়না বা কাপড় গাড়ির সঙ্গে লেগে ছিঁড়ে গিয়েছে। এরকম অনেক অভিযোগ আছে।’

তিনি আরও বলেন, আমাদের মেয়র তাদের সব অভিযোগ শুনে চট্টগ্রাম নগরীকে হকারমুক্ত করতে রাস্তায় রাস্তায় অভিযান চালাচ্ছে। তবুও কিছু কিছু জায়গায় আবারও হকার বসছে। তাদেরকে স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ করার দাবিতে সিটি করপোরেশনের সব স্কুল আজ মানববন্ধন করবে বলে শুনেছি। তবে সব স্কুল ও কলেজ নেমেছে কিনা সেটা বলতে পারব না।

প্রসঙ্গত, গত ৮ ফেব্রুয়ারি নগরীর নিউমার্কেট মোড় থেকে নতুন রেলস্টেশন, রিয়াজউদ্দিন বাজার, পুরাতন রেলস্টেশন, ফলমণ্ডি, তামাকমুণ্ডি লেইন ও আমতলসহ প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা থেকে হাজারেরও বেশি হকার উচ্ছেদ করে সিটি করপোরেশন। এসব এলাকার ফুটপাত থেকে সড়কের একাংশ দখলে নিয়ে এসব হকার পোশাক, মোবাইল, জুতা, তৈরি খাবারসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে আসছিল। ফুটপাত ও সড়কে বিভিন্ন অস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের কারণে এসব এলাকায় নিয়মিত যানজট লেগে থাকতো।

উচ্ছেদ অভিযানের সময় হকাররা বিক্ষোভ করেছিলেন। পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ নিয়ে হকাররা ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। পর দিন হকারদের কেউ কেউ আবারও বসতে চাইলে সিটি করপোরেশনের কর্মীরা গিয়ে তাদের সরিয়ে দেন। এরপরও হকাররা সড়ক ও ফুটপাতের বিভিন্ন অংশ দখলে নিতে শুরু করলে ১২ ফেব্রুয়ারি ফের অভিযান চালায় সিটি করপোরেশন। এ সময় হকারদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ভাঙচুর করা হয় সিটি করপোরেশনের যানবাহন। পুলিশসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনায় হকারদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের হয়েছে।

এ অবস্থায় উচ্ছেদ হওয়া হকারদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের পুনর্বাসনের দাবি তোলেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। হকাররাও ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর