বাবা-মায়ের দায়িত্ব নিতে চেয়েছিলেন নয়ন

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম | 2024-03-02 14:37:37

ভোলা সদর উপজেলার উত্তর দিঘলদী ইউনিয়ের চরকুমারিয়া গ্রামের দরিদ্র পরিবারের সন্তান মো. নয়ন। বয়স মাত্র ১৮ বছর। টাকার অভাবে অষ্টম শ্রেণির পরে আর লেখাপড়া করতে পারেননি নয়ন। আগে কখনো ঢাকায়ও আসেননি। ৫ ভাই-বোনের মধ্যে নয়ন ছিল সবার ছোট হলেও বাবা মায়ের দেখাশোনার দায়িত্ব ছিল তার। সে দায়িত্ব মিটিয়ে দিয়েই বেইলি রোডের কাচ্চি ভাইয়ের রেস্তোরাঁর ভয়াল আগুনের শিকার হলেন নয়ন। ঢাকায় আসার মাত্র ৫ দিন পরেই নিভে গেল তাজা প্রাণ।

বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) বেইলি রোডে গ্রীণ কজি কটেজ ভবনে অগ্নিকাণ্ডে যে ৪৬ জন নিহত হয়েছেন, তাদের একজন নয়ন হোসেন। গতকাল ভোররাতেই নয়নের মৃত্যুর খবর পরিবারের কাছে পৌঁছে দেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন।

চেয়ারম্যান বলেন, ‘ঢাকা থেকে ফোন আসার পরে আমি থমকে গেছি। আমার জীবনে এতবড় পরীক্ষায় কখনো পড়তে হয়নি। ছেলের মৃত্যুর খবর ফোন করে বাবাকে জানাতে হয়েছে। শান্ত স্বভাবের নয়ন খুব ভালো ছেলে ছিলেন। এর বেশি বলতে পারছি না। আমিও এখন বলার মতো অবস্থায় নেই।’ 

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, অভাব অনটনের সংসারে নয়নের বড় ভাইয়েরা সবাই আলাদা সংসার পেতেছেন। এতে বিপাকে পড়তে হয় বৃদ্ধ বাবা-মাকে। বড় ছেলেরা ঠিকমতো ভরণপোষণ না দেওয়ায় সংসারের হাল ধরতে কাজের সন্ধানে ২৫শে ফেব্রুয়ারি ঢাকায় আসেন নয়ন। ঢাকায় এসে গ্রীন কেজি কটেজ ভবনে কাচ্চি ভাই বিরানী রেস্তোরাঁয় বয় হিসেবে ১২ হাজার টাকা বেতনে চাকরি নেন নয়ন। তবে ভাগ্য তাকে পরিবারের হাল ধরতে দেয়নি। বাবা-মায়ের দায়িত্ব নেয়ার আগেই ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে মারা যান নয়ন। 

নিহত নয়নের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের অস্থায়ী মর্গে রাখা হয়েছে। তবে শরীরে অগ্নিদগ্ধের তেমন কোনো চিহ্ন নেই। মর্গের ভলান্টিয়ার জানান, অতিরিক্ত ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়েই মারা গেছেন নয়ন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের অস্থায়ী মর্গে মরদেহ নিতে আসেন নিহত নয়নের চাচাতো ভাই হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমার চাচা সিরাজ আলী অসুস্থ। টাকার অভাবে ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে পারেন না। তাই নয়ন সংসারের হাল ধরতে ঢাকায় এসেছিল। ঢাকায় এসে ওর বন্ধুর মাধ্যমে বেইলি রোডের গ্রীন কজি কটেজ ভবনের ৫ তলায় একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে চাকরি নেন। গতকাল সন্ধ্যায়ও ফোনে কথা হয়েছে। আগুন লাগার খবর শুনে রাত ১১টা ২০ মিনিটে নয়নকে ফোন করে ফোন বন্ধ পাই। রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়ে অনেক খোঁজাখুঁজি করি। কিন্তু ওরে আর পাইনি। পরে মেডিকেলে এসেও সন্ধান পাইনি। সকালে ভোলা থেকে পরিবারের লোকজন ফোন করে জানালো নয়ন মারা গেছে। পরে মর্গে এসে লাশ খুঁজে পাইছি।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর