শত বছরের পুরনো ঐতিহ্য নওগাঁর প্যারা সন্দেশ

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ | 2024-03-04 18:24:09

বিচিত্র খাবারের মধ্যে নওগাঁর প্যারা সন্দেশ বেশ সুপরিচিত। নওগাঁয় গেছেন আর এই সন্দেশের স্বাদ নেননি, এমন মানুষ খুব কম আছে। এই জেলায় যারা বেড়াতে আসেন তারা এই সন্দেশের স্বাদ নিতে ভোলেন না।

পুরোনো ঐতিহ্যেকে ধরে রেখে সামান্য মুনাফায় প্রায় শত বছর ধরে ভোজন প্রেমিদের চাহিদা মেটাচ্ছে নওগাঁর প্যারা সন্দেশ। স্বাদে-মানে অনন্য এই প্যারা সন্দেশের সাথে মিশে আছে শত বছরের পুরনো ইতিহাস। প্রথম দিকে শুধু পূজা মণ্ডপের দেব-দেবীর উপাসনার জন্যই এই সন্দেশ তৈরি করা হতো। পরবর্তীত সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুনের কারণে সন্দেশটি এখন বিখ্যাত মিষ্টান্ন হিসেবে পরিচিত।

বহু বছর আগে নওগাঁ শহরের কালীতলা এলাকায় বুড়াকালীমাতা মন্দিরের পাশে একটি মিষ্টির দোকান ছিল। সেই দোকানে ভোগের মিষ্টি বা দেবতার জন্য উৎসর্গ করা খাবার তৈরি করে বিভিন্ন মন্দিরে বিক্রি করতেন। মিষ্টি তৈরির কারিগর ছিলেন মহেন্দ্রী দাস নামের এক ব্যক্তি। ভারতের বিহার এলাকায় কোনো এক নবাবের মিষ্টি তৈরির কারিগর ছিলেন তিনি। নবাবের মৃত্যুর পর তিনি নওগাঁ শহরের কালীতলা এলাকায় বসবাস শুরু করেন। তিনিই প্রথম প্যারা সন্দেশের প্রচলন করেন।

মহেন্দ্রীর মৃত্যুর পর ছেলে ধীরেন্দ্রনাথ দাস দোকানে দায়িত্বে আসার পর মিষ্টি তৈরির কারিগর বিমল মোহন্তের দক্ষতা ও হাতের স্পর্শে প্যারা সন্দেশের সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। মালিকানা ও কারিগর পরিবর্তন হলেও সন্দেশ তৈরির প্রক্রিয়া ও স্বাদ রয়ে গেছে শত বছর আগের মতই। শুধু জেলায় নয়, জেলার বাইরেও এর সুনাম রয়েছে। দেশের গন্ডি পেরিয়ে ভারত, মালয়েশিয়া, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে এই সন্দেশ।

সন্দেশ তৈরির প্রধান উপকরন হলো দুধ ও চিনি। ছয় কেজি দুধের সঙ্গে এক কেজি চিনি মিশিয়ে তৈরি করা হয় এক কেজি প্যারা সন্দেশ। প্রতি কেজিতে ৬০ থেকে ৬৫ পিস হয়। যা বর্তমানে প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়।

কালিতলা এলাকার বাসিন্দা বিষ্ণু চৌধুরী বলেন, প্যারা সন্দেশ আমার কাছে সব থেকে ভালো মনে হয়েছে। এই সন্দেশের স্বাদও সঙ্গে অন্য কোনো সন্দেশের স্বাদের তুলনা হয় না।

হক মিষ্টান্ন ভান্ডারের ম্যানেজার নূর ইসলাম বলেন, আগে যে কারিগর ছিলেন, তিনি যারা মারা যাবার পর হাত বদল হতে হতে এখন আমরা সেই স্বাদ ধরে রেখে প্রথম স্থানে আছি। শুধু পূজা বা ঈদেই নয়, আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতেও নিয়ে যাওয়া হয় এই সন্দেশ।

নওগাঁ মিষ্টান্ন ভান্ডারের ম্যানেজার রিপন জানান,আমরা ৪২ বছর ধরে ঐতিহ্যবাহী সন্দেশের ব্যবসা করে আসছি। পুরোনো স্বাদ ধরে রাখার জন্য চেষ্টা করি এবং আমাদের যে সকল কারিগর আছে তারা অনেক পুরোনো। তাদের নিরলস কাজের জন্য এই সন্দেশের স্বাদ এত বিখ্যাত। সবাই সন্দেশ তৈরি করতে পারে না।

এ সম্পর্কিত আরও খবর