ডিজিটাল সিটির পরিচ্ছন্নতাকর্মীরাই স্বাস্থ্যঝুঁকিতে

, জাতীয়

মশাহিদ আলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট | 2024-03-04 20:48:15

সিলেট সিটি করপোরেশনকে (সিসিক) বলা হয় দেশের প্রথম ডিজিটাল সিটি। কিন্তু সনাতন পদ্ধতি অবলম্বনের কারণে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে এই সিটির ৬০০ পরিচ্ছন্নতা কর্মী। অভাব অনটনের সংসার চালাতে জীবনের ঝুঁকি জেনেও বেছে নিয়েছেন এ কাজকে তারা।

সিলেট সিটি করপোরেশন ৪২টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। প্রতিদিন ৪২টি ওয়ার্ড থেকে তিন থেকে পাঁচ হাজার টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এই বর্জ্য অপসারণে কাজ করেন ৬শ জন কর্মী। তন্মধ্যে স্থানীয় কাউন্সিলরের অধীনে ১০ জন করে প্রতিটি ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্নতাকর্মী কাজ করছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিচ্ছন্নতার কাজ করতে গিয়ে গ্যাস্ট্রিক, চর্মরোগ, শ্বাস-প্রশ্বাসের রোগসহ বিভিন্নস্থানে ছত্রাকের আক্রমণ হতে পারে। এছাড়াও হাত-পা কেটে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে প্রায়ই।

সিসিকের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শোনালেন, আশার বাণী। তারা বলছেন, নতুন মেয়র দায়িত্ব নেওয়ার পর তার নির্দেশনায় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। শিগগিরই সনাতন পদ্ধতি থেকে বের হয়ে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী দেওয়া হবে।

জানা যায়, সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্জ্য অপসারণে পরিচ্ছন্নকর্মীদের মধ্যে নেই মাস্ক, হ্যান্ডগ্লোভস, গামবুট, পিপি, হেলমেট। তারা ড্রেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে কোনো ধরনের স্বাস্থ্যসুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার না করেই হাত দিয়ে কাজ করেন। হাত দিয়েই তারা তুলছেন ময়লা-আবর্জনা। পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের বেশিরভাগই সিটি করপোরেশনের নিয়োগপ্রাপ্ত পরিচ্ছন্নতাকর্মী নন, দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে এ কাজ করেন। তাদের অধিকাংশই জানেন না স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কিছু।

সম্প্রতি, সরেজমিন সিলেট সিটি করপোরেশনের ১১, ১৩ ও ১৪ নং ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, ড্রেন পরিষ্কারে বেশ কয়েকজন কাজ করছেন। কেউ ড্রেনের স্ল্যাব সরাচ্ছেন আর কেউবা ময়লা সংগ্রহ করছেন। তারা সবাই নিজেদের কোনো রকম স্বাস্থ্য সুরক্ষা বা নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নিয়ে ঝুঁকিতে কাজ করছেন। স্বাস্থ্য সুরক্ষার মাস্ক, গ্লোভস ও গামবুট, পিপি ছাড়াই ময়লা সংগ্রহ ও পরিষ্কার করতে দেখা যায় পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের। পাশাপাশি তাদের জন্য নেই পর্যাপ্ত সরঞ্জামও।

পরিচ্ছন্নতাকর্মীরাই স্বাস্থ্যঝুঁকিতে

দৈনিক মজুরিভিত্তিতে কাজ করা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী বলেন, আমাদের আর স্বাস্থ্য সুরক্ষা! কাজ না করলে পেটে ভাত পড়বে না! ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করতে গিয়ে প্রায়ই হাত-পা কেটে যায়। কাজ করতে গিয়ে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। আবার কারো কারো হাতে ঘা হয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ড্রেন পরিষ্কার করতে গিয়ে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। বিশেষ করে ড্রেনের দুর্গন্ধ, প্লাস্টিকের বোতল ও কাচের আয়নাসহ বিভিন্ন ধরনের অপচনশীল জিনিসপত্র পাওয়া যায়। সেগুলো তুলতে গিয়ে হাত-পা কেটে যায়। আবার ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহের জন্য সরঞ্জাম পর্যাপ্ত নেই।

এ বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ একলিম আবদীন বার্তা২৪.কমকে বলেন, নতুন মেয়র দায়িত্ব গ্রহণের পর তার নির্দেশনায় বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু গামবুট এসেছে। আরও কিছু গামবুট ও পিপি নিয়ে আনা হচ্ছে। সেগুলো পরে কাজ করলে পা ভিজবে না।

তিনি বলেন, কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় অনেকেই হাত কেটে ফেলেন, এটা সত্য। আমাদের চাহিদা অনুযায়ী সরঞ্জাম পাচ্ছি না। আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, সিসিকের নতুন ওয়ার্ডগুলো। এসব ওয়ার্ড অনেক বড় হওয়াতে পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আনতে পারিনি। তবে আশা করি, আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হবে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট সিটি করপোরেশেনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, স্বাভাবিকভাবে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের স্বাস্থ্যসুরক্ষা সামগ্রী না থাকলে চর্ম, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।

তিনি বলেন, যারাই এসব কাজ করেন, তাদের প্রত্যেকের উচিত স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী পরে কাজ করা। কারণ, তারা সুরক্ষিত না থাকলে তাদের মাধ্যমে পরিবারের লোকজন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।

এক প্রশ্নের জবাবে ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য সিসিকের পক্ষে স্বাস্থ্য সচেতনতাবিষয়ক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে।বিগত দিনে এমন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আগামীতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করলে আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর