ছাত্রকে গুলি করা সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি | 2024-03-05 12:28:46

আরাফাত আমিন তমাল নামে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে গুলি করার ঘটনায় শিক্ষক ডা. রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলা হয়েছে।

তার কাছ থেকে জব্দ করা পিস্তলটি অবৈধ বলেও জানিয়েছে পুলিশ।

সোমবার (৪ মার্চ) রাত ১১টার দিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা মো. আব্দুল্লাহ আল আমিন বাদী হয়ে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় এ মামলা দায়ের করেন।

মঙ্গলবার (৫ মার্চ) সকালে সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সিরাজুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

অবৈধভাবে অস্ত্র রাখায় শিক্ষক ডা. রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে আরো একটি মামলা হবে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় অভিযুক্ত শিক্ষক ডা. রায়হান শরীফকে আটক করে মেডিকেল কলেজ থেকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, আমার ছেলে আরাফাত আমিন তমাল (২২), সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়ে বর্তমানে ৩য় বর্ষে অধ্যয়নরত।

ঘটনার সময় শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের একাডেমি ভবনের ৪র্থ তলায় ডা. সামাউন নূরের কক্ষে ৩য় বর্ষের আইটেম পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছিল।

ঘটনার পর আমার ছেলের বন্ধু আক্তারুজ্জামান সোমবার বিকেল ৪টার দিকে ফোন করে বলে, আপনি দ্রুত সিরাজগঞ্জ চলে আসেন। আপনার ছেলে আরাফাত আমিন তমাল হাসপাতালে ভর্তি আছে। আমি তাৎক্ষণিক বগুড়া থেকে রওয়ানা হয়ে সিরাজগঞ্জ এসে আমার ছেলেকে সিরাজগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে সংকটাপন্ন অবস্থায় দেখি।

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে আমার ছেলে আরাফাত আমিন তমালের ক্লাসমেটসহ তার অনেক সহপাঠী জানায়, আসামি কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের লেকচারার। তিনি সবসময় শিক্ষকদের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করেন। সবসময় তিনি ব্যাগে অস্ত্র ও ছোরা নিয়ে ক্লাসে এসে অস্ত্র টেবিলের ওপর রেখে ক্লাসে লেকচার দিতেন। আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ক্লাসে না আসতে অনুরোধ করা হলে তিনি ছাত্রছাত্রীদের ভয়ভীতি ও গুলি করে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন।

সোমবার পরীক্ষা চলাকালে বিকেল ৩টার দিকে আসামি হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে ছাত্রছাত্রীদের অহেতুক বকাবকি করেন। বকাবকির একপর্যায়ে তার ব্যাগ থেকে একটি পিস্তল বের করে আমার ছেলেকে হত্যার করার উদ্দেশ্যে গুলি করলে গুলিটি আমার ছেলের ডান পায়ের উরুর ওপরের অংশে লেগে গুরুতর জখম করে।

তিনি মামলায় আরো উল্লেখ করেন, সহপাঠীরা আমার ছেলেকে চিকিৎসার জন্য জরুরি বিভাগে নিয়ে যেতে চাইলে আসামি অস্ত্র উঁচু করে সবাইকে ভয় দেখিয়ে বলে, ‘তোরা যদি ওকে চিকিৎসার জন্য জরুরি বিভাগে নিয়ে যাস, তাহলে তোদের সবাইকে গুলি করে মেরে ফেলবো’।

মামলার এজাহারে তিনি আরো বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে পরীক্ষা চলাকালেই আমার ছেলের বন্ধুরা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল করলে সিরাজগঞ্জ থানা পুলিশ, ডিবি ঘটনাস্থলে গিয়ে আসামিকে অস্ত্রশস্ত্রসহ থানায় নিয়ে যায়।

সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা বাদী হয়ে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। আসামিকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হবে।

ওসি বলেন, শিক্ষক ডা. রায়হান শরীফের কাছ থেকে জব্দ করা আগ্নেয়াস্ত্রটি অবৈধ। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে আরেকটি মামলা দায়ের হবে।

উল্লেখ্য, সোমবার (৪ মার্চ) বিকেলে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালকে গুলি করেন কলেজের শিক্ষক ডা. রায়হান শরীফ।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার চেয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর সন্ধ্যায় তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এসময় তার কাছ থেকে একটি পিস্তল জব্দ করা হয়। অভিযুক্ত ডা. রায়হান শরীফ কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক।

এ ঘটনায় ইতোমধ্যে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কমিটিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর