নরসিংদীর এক সংগ্রামী নারী আনোয়ারা খানম ডলি

, জাতীয়

শরীফ ইকবাল রাসেল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম,নরসিংদী: | 2024-03-08 01:56:35

আজ জাতীয় নারী দিবস। এদেশে অনেক নারী রয়েছেন যারা স্ব-মহিমায় আত্মকর্মী হয়ে বীরত্বের পরিচয় দিয়ে সমাজের চোখে হয়েছেন সংগ্রামী নারী। তাদের খবর আমরা কজনইবা রাখি। তারা পায়না কোনো রাষ্ট্রীয় সম্মাননা, আর না পেলেও হাল ছাড়েন না তারা। এরকমই একজন সংগ্রামী নারী নরসিংদীর পলাশ উপজেলার আনোয়ারা খানম ডলি। যিনি এক জোড়া কোয়েল পাখি দিয়ে আজ লাখো পাখির মালিক।

পলাশ উপজেলার পলাশের চর গ্রামে তার বসবাস। স্বামী দিদার আলম ছিলেন একজন পল্লী চিকিৎসক। তিনিও আজ প্রায় ৬ বছর হয় দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন।

ভোরে ঘুম থেকে উঠেই খামারের দেখাশোনা, পাখির খাবার, পানি, ঔষধ, রোগ নির্ণয়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের খামারিদের সাথে মোবাইলে সমস্যার সমাধান, পাখি, ডিম ও বাচ্চার অর্ডার নেওয়া। প্রতিদিন এসকলই করতে হয় আনোয়ারা খানম ডলিকে। তবে কারখানা থেকে খাবার আনা ও পাখি সরবরাহসহ কিছু কিছু কাজে সহায়তা করে থাকেন তার ছেলে ও কয়েকজন কর্মী।

২০০২ সালে ছেলের জন্য কৌতুহলবশত বাবার বাড়ি থেকে একজোড়া কোয়েল পাখি সংগ্রহ করেন আনোয়ারা খানম ডলি। পাখি দুটির লালন পালনের মাধ্যমে ডিম পাওয়ার আনন্দ থেকেই শুরু হয় তার কোয়েল পাখির খামার করা। শুরু হয় জীবন সংগ্রাম। বাড়ির একটি পরিত্যক্ত ঘরেই শুরু হয় খামারটি। এভাবে কোয়েল পাখি পালন নিয়ে শুরু হয় ডলি খানমের সংগ্রাম। কোয়েল পাখির বাচ্চা সারা দেশে সরবরাহ করছেন তিনি। শুধু তাই নয়, এর আয়ের অংশ দিয়ে এক ছেলেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার পড়িয়েছেন স্বামীহারা এই নারী। আরেক ছেলেকে পড়াচ্ছেন। কয়েক কোটি টাকা ব্যয় করে তৈরি করেছেন দুটি বহুতল বাড়ি। কিনেছেন ডজন খানেক বাচ্চা তৈরির মেশিন, জেনারেটর ও বেশ কিছু জায়গা জমি।

হৃদয় কোয়েল হ্যাচারির মালিক আনোয়ারা থানম ডলি জানান, বিয়ের পর থেকেই তিনি তার জীবনকে সংগ্রামের পথে পরিচালিত করা শুরু করেন। তার দাবি সরকারের পক্ষ থেকে সম্মননা দিলে কাজের উৎসাহ-প্রেরণা বাড়বে আর না দিলেও কোন আপত্তি নেই।

আনোয়ারা থানম ডলির ছেলে মেহেদী হাসান হৃদয় জানান, ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছেন পাখিদের পিছনে তার মা খুবই পরিশ্রম করে আসছে। সন্তানের মতো লালন-পালন করে বড় করে তুলছে পাখিদের। পাখি বিক্রির আয় দিয়ে তাদের দুই ভাইয়ের লেখাপড়ার খরচ যোগাতেন মা। গত ছয় বছর আগে বাবা মারা গেলে পুরো খামারটি পরিচালনায় মাকে সাহায্য করে আসছেন তিনি।

নাসিব নারী উদ্যোক্তা কাউন্সিলের নরসিংদী জেলা শাখার সাবেক সভানেত্রী কামরুন নেছা বলেন, তৃণমূল থেকে সংগ্রামী নারীদের উঠিয়ে এনে যদি সম্মাননা দেওয়া হয় তবে নতুনরা উৎসাহী হওয়ার পাশাপাশি দেশ সমৃদ্ধি হবে।

মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের নরসিংদীর উপপরিচালক সেলিনা আক্তার জানান, মহিলা বিষয়ক অধিদফতর মূলত মহিলাদের নিয়েই কাজ করে থাকে। তাই এই নারীকেও আগামী দিনে সম্মাননা দেওয়া যায় কিনা বিষয়টি দেখা হবে। সম্মাননা দিলে নারীরা কাজে উৎসাহ পায় বলেও জানান তিনি।

নারীদের শুধুমাত্র নারী দিবসে স্মরণ নয়। প্রত্যন্ত অঞ্চলের সংগ্রামী নারীদের খোঁজে বের করে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়ার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে তাদের অংশগ্রহণ আশা করেন সচেতন মহল।

এ সম্পর্কিত আরও খবর