ফেনীতে দ্রব্যমূল্যর অস্বাভাবাবিক উর্ধ্বগতিতে বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ

, জাতীয়

মোস্তাফিজ মুরাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা-২৪.কম, ফেনী | 2024-03-17 18:05:05

চলছে সিয়াম সাধনার পবিত্র মাহে রমজান মাস। এ মাসেও দ্রব্যমূল্যর অস্বাভাবিক উর্ধ্বগতি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজারে গিয়ে নাভিশ্বাস ফেলছেন মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। বাজারে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের একাধিক দপ্তর কাজ করলেও কিছুতেই থামানো যাচ্ছেনা দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিক উর্ধ্বগতি। সাধারণ মানুষ বলছেন নিয়ন্ত্রণহীন এ বাজারের লাগাম টানতে না পারায় বিপাকে পড়েছে সাধারণ নিম্ন আয়ের মানুষ।

সাধারণ মানুষ বলছে, দেশের মানুষ ব্যবসায়ীদের কাছে এমন জিম্মি হতে পারে তা অতীতে কখনোই দেখেননি তারা। একদিনের ব্যবধানেই দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ বাড়িয়ে বিক্রি হচ্ছে জিনিসপত্র। এসব সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের লাগাম টেনে না ধরতে পারাকে সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন সাধারণ মানুষ।

সরেজমিনে গিয়ে ফেনীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, একে একে বেড়েছে সব ধরণের পণ্যের দাম। ফুটপাত থেকে শুরু করে মুদি দোকান, ফলের দোকান, সবজি দোকান গিয়ে দেখা যায়, দাম জিজ্ঞেস করে না কিনেই চলে যাচ্ছেন অধিকাংশ ক্রেতা।


বাজারে খুচরা পর্যায়ে দেশি শসা ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে, গোল বেগুন ৫০-৬০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০ টাকা, টমেটো ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

অথচ দুই দিন আগেও একই বাজারে দেশি শসার কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, গোল বেগুন ৩০-৪০ টাকা, টমেটো ৪০-৫০ টাকা বিক্রি হয়েছিল।

অন্যদিকে বড় আকারের লেবু প্রতি হালি ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।যা রোজার আগেও হালি প্রতি ৬০ টাকা বিক্রি হয়েছিল। কাঁচামরিচের কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে রোজার আগেও ৬০ টাকা বিক্রি হয়েছিল কাঁচা মরিচ।

সবজি বিক্রেতা সুজন বলেন, আড়ৎ থেকে বাড়তি দাম দিয়ে আনতে হচ্ছে। সব সবজির দাম কেজি প্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। আমাদের সকল খরচ বাদ দিয়ে স্বল্প দামে বিক্রি করছি। সকাল নাগাদ বেচাবিক্রি কম হলেও বিকালে বেচাবিক্রি বাড়ে বলে জানান তিনি।

বাজার করতে আসা রেদওয়ান সবুজ নামে এক ক্রেতা বলেন, রোজা ঘিরে কয়েকদিন আগে থেকেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। এখন সেটা অসহনীয় পর্যায়ে আছে। বাজার সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। যে যার খুশিমতো দাম বাড়াচ্ছে। আমরা সাধারণ মানুষ তাদের কাছে বড্ড অসহায়।

বাজার করতে আসা এক নারী বলেন, বাজারে যাই ধরি, সেটার দাম বেশি। সবকিছুর দাম বেশি। দুই দিন আগেও এক আঁটি ধনিয়া পাতা কিনেছি ১০ টাকায়। এখন সেটা ২০ টাকা দিয়ে কিনলাম।

অন্যদিকে ফলের মধ্যে ছোট সাইজের কোন তরমুজ ৩০০ টাকার নিচে নেই। বরই ১০০-১২০ টাকা ও আপেল বরই ১২০-১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও আপেল ৩২০ টাকা, মালটা এক দোকানে ৩৫০ টাকা অন্য দোকানে ৩৮০ টাকা, কমলাও ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা দাম হাকাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। জোড়া প্রতি আনারস ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি করছেন ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা।

ফেনীর ট্রাংক রোডের এক ফল ব্যবসায়ী জানান, কমলা ডজন প্রতি ১০০ টাকা বেড়েছে। আড়ৎ থেকে যে ফল ৪ হাজার দিয়ে কিনতাম এখন সেটি ৬ হাজার টাকা। রোজার পূর্ব মূহুর্তে হুট করে দাম বেড়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন বেড়েছে দুই একদিনের মধ্যে হয়ত কমে যাবে।


অন্যদিকে খুচরা পর্যায়ে কলা বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ১৫০ টাকায়, বাংলা কলা ৯০ থেকে ১০০ টাকায় ও সাগর কলা ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়।

বিক্রেতারা জানান, দুই দিন আগেও কলার ডজন ছিল ১০০-১২০ টাকা, বাংলা কলা ছিল ৭০ টাকা, সাগর কলা ছিল ১১০ টাকা।

ফুটপাতে কলা বিক্রেতা রহিম উল্ল্যাহ জানান, পাইকারি বাজার থেকে আমরা যখন কিনি তখন সেখান থেকেই খুচরা পর্যায়ের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। আমরাও সেই দামেই বিক্রি করি।

ক্রেতারা বলছেন,রোজার মাসে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে নিত্যপণ্যের দাম কমে। অথচ বাংলাদেশে এর বিপরীত চিত্র দেখা যায়। রোজা এলেই দেশে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে শুরু করে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ে ভোক্তারা।

ট্রাংক রোডে কথা হয় রিকশা চালক আতু মিয়ার সাথে। তিনি জানান, অনেক বড় লোকরাও খেতে পারছেনা এ দামে আমাদের খাওয়ার কথা তো বিলাসিতা। আমি রাস্তায় রিকশায় চালাই, পথে কোথাও ইফতার করে নিই। পরিবারের জন্য বাড়িতে কিছু টাকা দিয়েছি। নিজে কোন রকমে খেয়ে রোজা পার করছি। যে দাম বাজারে আমাদের জন্য কেনা কষ্টসাধ্য।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক জানান, আমরা আছি বেশি বিপদে। গরীবদের ইফতার সামগ্রী কেউ উপহার দিচ্ছে, বড় লোকদের টাকা আছে। আমরা স্বল্প আয়ে যা নিজে কিনতে পারি তা দিয়ে চলি৷ বাজারে যে অসহনীয় দাম আমাদের জন্য আসলেই কষ্টসাধ্য। যে পণ্য কিনতে যাই সবকিছুর দাম বাড়তি।।আমরা যাব কোথায়, খাব কোথায়। এভাবেই নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যবসায়ীদের নীতি নৈতিকতার অবক্ষয় ঘটেছে বলে মন্তব্য করেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ফেনীর সহকারী পরিচালক (অতি:দায়িত্ব) মো: কাউসার মিয়া। বাজারে অতিরিক্ত দাম, এমন নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থার উত্তর নেই তার কাছেও।

তিনি বলেন, যে যার মতো করে দাম বাড়াচ্ছে। এটি নৈতিক অবক্ষয় ছাড়া আর কিছুই না। ফেনীতে আমি একজন মাত্র কর্মকর্তা। তাও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছি। একার পক্ষে পুরো বাজার মনিটরিং করা সম্ভব হয় না। পাশাপাশি বড় কোন জরিমানা করতে গেলে সমালোচনাও করা হয়। জেলাপ্রশাসন, ভোক্তা অধিকার ছাড়াও বাজারে আইনপ্রয়োগকারী ১৫ টি সংস্থা রয়েছে। সবাইকে যৌথভাবে বাজার তদারকি করতে হবে। তবেই এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে। পাশাপাশি তথ্যদিয়ে সহযোগিতা করার জন্য সাধারণ মানুষের প্রতি আহবান জানান তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর