বগুড়া ডিসি অফিসে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের অনশন

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বগুড়া | 2024-03-25 20:06:39

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার না পেয়ে আমরণ অনশন শুরু করেছেন শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফাহিমা আকতার। তিনি শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক।

সোমবার (২৫ মার্চ) দুপুর থেকে বগুড়া জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয় চত্বরে তিনি অনশন শুরু করেন।

ফাহিমা আকতার অভিযোগ করেন পুলিশ দিয়ে তাকে সেখান থেকে তুলে দিতে ব্যর্থ হয়ে তার হ্যান্ড মাইক কেড়ে নিয়েছেন একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

তিনি বলেন, ২০১৯ সালের ১৮ মার্চ শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এর ছয় মাস পর থেকে তার সাথে বৈরী আচরণ শুরু করেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ রিজু। পরিষদের কোন কাজ তাকে দেওয়া হয় না, নিজেদের ইচ্ছে মত উপজেলা চেয়ারম্যান সকল উন্নয়ন কাজ বন্টন এবং তদারকি করেন। নারী উন্নয়ন ফোরামের এক কোটি টাকা চেয়ারম্যান আটকে রেখেছেন। ফলে উপজেলার নারীরা বঞ্চিত হচ্ছেন।

এছাড়াও ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে তার দায়িত্ব কর্তব্যে বাঁধা দিয়ে থাকেন উপজেলা চেয়ারম্যান। উপজেলা চেয়ারম্যানের বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে বিভিন্ন সময় লিখিত অভিযোগ করায় গত ডিসেম্বর মাসে উপজেলা চেয়ারম্যান তার লোকজন দিয়ে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে একমাস তালা দিয়ে রেখেছিলেন।

ফাহিমা আকতার বলেন, জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত দিয়ে এবং একাধিকবার সাক্ষাত করেও কোন সুরাহা না হওয়ায় সোমবার দুপুরে আমি আমার শতাধিক কর্মী সমর্থক নিয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে সর্বশেষ সাক্ষাত করতে আসি। আমাকে অফিসে ঢুকতে না দেওয়ায় অফিস চত্বরে আমি আমরণ অনশন শুরু করেছি। বেলা তিনটার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মাসুম আলী বেগ একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশসহ এসে আমাকে জোরপূর্বক পুলিশ দিয়ে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু আমি অনড় থাকায় পুলিশ আমার মাইক কেড়ে নিয়ে চলে যায়।

সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ১৫ থেকে ২০ জন নারীকে সাথে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসে আছেন ফাহিমা আকতার। তিনি বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এখান থেকে উঠবো না। তার সাথে বসে থাকা তারাবানু, মাজেদা খাতুন, রশিদা, আঙ্গুরা, ফাতেমা,হালিমা বলেন, রোজা থাকলেও ইফতারের সময় পানিও পান করেননি ফাহিমা। তিনি তার অবস্থানে অনড়। আমরা তার সাথে আছি। দাবি আদায় না হলে মঙ্গলবার শিবগঞ্জ থেকে কয়েক শ' নারী মিছিল নিয়ে এখানে আসবেন।

শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ রিজুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছি যে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফাহিমা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে গিয়ে অবস্থান করছেন। তিনি তার কোন দাবি-দাওয়া নিয়ে আমার সাথে কথা বলেননি। তবে যতটুকু শুনেছি তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে একটি আবেদন করেছেন। সেখানে নারী উন্নয়ন ফোরামের ৬০ লাখ টাকা তার ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দেওয়ার দাবি করেছেন। ইউএনও তাকে বিধি মোতাবেক প্রাপ্যতা দেওয়ার কথা বলায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়েছেন।

যোগাযোগ করা হলে বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মাসুম আলী বলেন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান উপজেলা পরিষদে তেমন গুরুত্ব পাচ্ছেন না, তাকে কোন স্বাক্ষর ক্ষমতা (সাইনিং অথরিটি) দেওয়া হয়নি, এছাড়া নারী উন্নয়ন ফোরামের টাকা তার কাছে দেওয়া হচ্ছে না এমন সব দাবি করছেন। তাকে বিভিন্নভাবে বুঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে যে আইনের বাইরে তাকে কোন সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার বিধান নেই। তিনি তারপরও সে সব না মেনে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে মাইকে উচ্চ শব্দে বক্তব্য দিতে থাকেন। তখন তার মাইকটি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাকে বারবার বুঝানোর পরও তিনি ডিসি অফিস ত্যাগ করতে সম্মত হননি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর