রমজানে বেড়েছে মৌসুমী ভিক্ষুক, দৈনিক গড় আয় ২ হাজার টাকা!

, জাতীয়

মোস্তাফিজ মুরাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম,ফেনী | 2024-04-03 19:57:57

আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে ফেনীতে ব্যাপক হারে বেড়েছে ভিক্ষুকদের দৌরাত্ম্য। বছরের অন্য সময়ের তুলনায় রমজানে শহরের প্রধান সড়কসহ অলিগলিতে এবং মার্কেট মসজিদের সামনে বেড়েছে তাদের আনাগোনা। শহরের বাসিন্দারা বলছেন, যে হারে ভিক্ষুক বেড়েছে তাতে স্বাচ্ছ্যেন্দ চলাফেরা করা দায় হয়ে পড়েছে।

জানা যায়, মৌসুমী এই ভিক্ষুকরা কুমিল্লা, লাকসাম, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, নোয়াখালী, লক্ষীপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ভিক্ষা বৃত্তি করতে আসে। প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার টাকার বেশি আয় হয় বলে জানিয়েছেন ভিক্ষুকরা।

জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যনুযায়ী, ফেনীতে স্থানীয় ও মৌসুমী ভিক্ষুকের সংখ্যা ২৭৪ জন। যার মধ্যে গত দুই অর্থবছরে ৫৩ জন ভিক্ষুককে পুনর্বাসন করা হয়েছে। কিন্তু ঈদকে সামনে রেখে স্থানীয় ভিক্ষুককের পাশাপাশি মৌসুমী ভিক্ষুক বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।

বুধবার (৩ এপ্রিল) শহরের শহীদ হোসেন উদ্দিন বিপনী বিতান, গ্যান্ড হক টাওয়ার, ফেনী গার্ডেন সিটিসহ বিভিন্ন শপিংমল ঘুরে দেখা গেছে, কেনাকাটা করতে এসে অতিরিক্ত ভিক্ষুকের জন্য নানাভাবে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ক্রেতাসহ সাধারণ মানুষদের। শপিংমল ছাড়াও বিভিন্ন মসজিদে নামাজ শেষ হওয়ার পরপর দল বেঁধে মুসল্লীদের ধরে ভিক্ষা আদায় করে নিচ্ছে এই মৌসুমি ভিক্ষুকরা। ট্রাংক রোড, বড় বাজার, মহিপালসহ শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ভিক্ষা বৃত্তি করে বেড়াচ্ছে তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, শপিংমলগুলোর সামনে ভিক্ষা করার জন্য কেউ জায়গা দখল করে বসে আছে, কেউ ঘুরে ঘুরে লোকজনের পথরোধ করে দাঁড়াচ্ছে। কেউ কাউকে সাহায্য করতে দেখলেই ওই দাতাকে ঝেঁকে ধরছেন বাকিরা। ভিক্ষা চাইতে গিয়ে অনেকেই পিছু ছাড়তে নারাজ।

বয়স্কদের পাশাপাশি ভিক্ষা বৃত্তিতে নেমেছে নানা বয়সী শিশুরাও। কেনাকাটা করে ব্যাগ হাতে বের হলে সেই ব্যাগ ধরেই চলতে থাকে টানাটানি। ভিক্ষা না দেওয়া পর্যন্ত ওই শিশুরা মানুষের ব্যাগ ও কাপড় ধরে টানাটানি করতে থাকে। এছাড়াও যারা কম টাকা ভিক্ষা দিচ্ছেন তাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতেও দেখা গেছে। এ নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে।

শপিং করতে আসা ওমর ফারুক বলেন, যারাই মার্কেটে ঢুকছেন বা বের হচ্ছেন তাদের দিকে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন ভিক্ষুকরা। যতোটা সম্ভব সাহায্য করছি। তবে অনেকেই একেবারে গায়ের ওপর হামলে পড়ছেন, এটা খুবই অস্বস্তিকর।

অনিক সরকার নামে আরেক ক্রেতা বলেন, মার্কেটে ঢুকার সাথে সাথে ছোট ছোট বাচ্চারা জড়িয়ে ধরে ভিক্ষা চায়, যা আমাদের খুবই বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতে ফেলছে। আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করি দেওয়ার কিন্তু এত ভিক্ষুক শহরে কয়জনকে দেবো।

ফারজানা আহমেদ নামের আরেক ক্রেতা বলেন, ভিক্ষুকদের এখন ভাংতি ২ বা ৫ টাকা দিলে নিতে চায় না, উল্টো সে টাকা দেয়ার পর তারা গালিগালাজ করে। আবার ভিক্ষা না দিলেও তারা পেছনে গালিগালাজ করে। এছাড়াও অনেক ভিক্ষুককে দেখে মনে হয় কাজ করে খেতে পারবে কিন্তু স্বভাবের কারণে তারা এই পেশায় নেমে পড়েছে বলে আমার মনে হয়।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফেনীতে ভিক্ষাবৃত্তি করতে আসা প্রায়ই ফেনীর বাইরে বিভিন্ন জেলা থেকে আসে। কুমিল্লার লাঙ্গলকোর্ট, লাকসাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, হবিগঞ্জ, চটগ্রামসহ বিভিন্ন জেলা থেকে এসে ভিক্ষা বৃত্তি দেদারসে চালিয়ে যাচ্ছে শহরে।

ভিক্ষুকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা কেউ ফেনীর স্থানীয় নয়, বিভিন্ন জেলা থেকে ফেনীতে ভিক্ষা বৃত্তি করতে এসেছে। এ প্রসঙ্গে তারা বলেন, ফেনীতে ভিক্ষাবৃত্তি করলে টাকা বেশি পাওয়া যায়। ঈদের সময় মানুষজন বেশি ভিক্ষা দেয় বিধায় বিভিন্ন জেলা থেকে ভিক্ষা বৃত্তি করার জন্য ফেনীতে এসেছে। এছাড়াও অধিকাংশ ভিক্ষুক জানায়, নিজ এলাকায় ভিক্ষা করতে লজ্জাবোধ হয় তাই তারা ফেনীতে এসেছে।

কুমিল্লা লাঙ্গলকোট থেকে ভিক্ষাবৃত্তি করতে আসা পঙ্গু সফি জানান, তার দৈনিক আয় ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা। তবে রমজান মাসে ফেনীতে আসার পর দৈনিক গড়ে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয়। সব ভিক্ষুকেরই এমন আয় হচ্ছে বলে জানান তিনি। রমজানে ভিক্ষায় বেশি মানুষ কেন আসে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফিতরাসহ যাকাতের টাকা-পয়সা, শাড়ি কাপড় থাকে বেশি। এ সময় পরিবারের সবার জামা-কাপড়ও পাওয়া যায়।

নোয়াখালী মাইজদী থেকে ভিক্ষা করতে আসা রমজান মিয়া বলেন, ফেনীতে ভিক্ষা করে প্রতিদিন ২ হাজার থেকে ২৫শ টাকা আয় হয়। শহরের শপিংমল গুলোতে ক্রেতাদের আনাগোনা বেশি হলে আয় আরও বেশি হতে পারে বলে জানায় রমজান মিয়া।

অন্যদিকে মোসুমী ভিক্ষুকদের জন্য জেলার স্থানীয় ভিক্ষুকদের আয় কমেছে বলে জানান তারা।

আব্দুল লতিফ নামে স্থানীয় এক ভিক্ষুক বলেন, ফেনীতে ভিক্ষাবৃত্তি করে পেট চালাচ্ছে দীর্ঘ ১৫ বছর। প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১৫শ টাকা আয় হলেও মৌসুমী ভিক্ষুকদের কারণে তার আয় কমেছে।

জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ইসলামে ভিক্ষাবৃত্তি নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে ভিক্ষাবৃত্তি নিরসন করা এবং সরকার সে লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। জনগণকে ভিক্ষা বৃত্তি নিরুৎসাহিত করার জন্য সচেতন হতে হবে। ভিক্ষুককে ৫ টাকা ১০ টাকা না ভিক্ষা দিয়ে বরং সবাই মিলে সাহায্যে করে একজন ভিক্ষুুককে পুনর্বাসন করা সম্ভব।

এ সম্পর্কিত আরও খবর