চুয়াডাঙ্গায় হিট স্ট্রোকে দুজনের মৃত্যুর খবরটি সঠিক নয়

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চুয়াডাঙ্গা | 2024-04-21 07:16:30

চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। শনিবার (২০ এপ্রিল) এ জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ তাপপ্রবাহে হিট স্ট্রোকে চুয়াডাঙ্গায় নারীসহ দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। তবে তাদের মৃত্যু হিট স্ট্রোকে হয়নি বলে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় চিকিৎসা কর্মকর্তা।

মৃত ব্যক্তিরা হলেন- চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কুড়ুলগাছি ইউনিয়নের ঠাকুরপুর গ্রামের পশ্চিমপাড়ার আমির হোসেনের ছেলে জাকির হোসেন (৪৪)। তিনি ঠাকুরপুর পীরপুরকুল্লা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি ছিলেন। আর মর্জিনা খাতুন (৫৫) দামুড়হুদা উপজেলা শহরের আজিম উদ্দিনের স্ত্রী। শনিবার (২০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে জাকির হোসেন ও বেলা ৩টার দিকে মর্জিনা খাতুনের মৃত্যু হয়।

জাকির হোসেনের পিতা আমির হোসেন জানান, ‘দীর্ঘ ৫-৬ বছর যাবত উচ্চ রক্তচাপে ভুগছিল আমার ছেলে। গত শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) রাতেও তার প্রেশার বেড়ে যায়। ওই সময় মাথায় পানি ঢেলে ও ওষুধ খেয়ে সুস্থ হয়। ভোরবেলা জাকির তার ছেলেকে সাথে নিয়ে পাশের জমিতে পাটের বীজ বুনছিল। এর কিছুক্ষণ পরই জাকির হোসেন মাটিতে পড়ে যায়। আমার নাতি আমাদের জানালে ছেলেকে উদ্ধার করে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এতো সকালে হিট স্ট্রোক হওয়ার কথা না। আমার ছেলে মালয়েশিয়া থেকে পাঁচ বছর আগে দেশে আসে। সেখান থেকে আসার পর উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছিল সে।’

এ বিষয়ে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মো. মহিবুল্লাহ বলেন, ‘বিভিন্ন গণমাধ্যমে দুজনের হিট স্ট্রোকে মৃত্যুর খবর দেখার পর আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। ওই দুজনের কেউই হিট স্ট্রোকের কারণে মারা যাননি।’

তিনি বলেন, শনিবার সকাল সাতটার পরে পরিবারের সদস্যরা মৃত অবস্থায় জাকির হোসেনকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তিনি উচ্চ রক্তচাপে ভুগছিলেন। হার্ট বা ব্রেন স্ট্রোক করে মারা যেতে পারেন। তাপমাত্রা ৪০ কিংবা তার অধিক হলে সেই সময় রোদে কাজ করার সময় হিট স্ট্রোক হতে পারে। সকালে হিট স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

ডা. মহিবুল্লাহ আরও বলেন, শনিবার বিকেল চারটার দিকে মর্জিনা খাতুন নামের এক নারীকে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন পরিবারের সদস্যরা। আমরা তাকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। পরিবারের দাবি, সকাল ১০টার দিকে বুকে ব্যথা অনুভব করেন মর্জিনা খাতুন। ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিয়ে তাকে খাওয়ানো হয়েছিল। দুপুরের দিকে অতিরিক্ত অসুস্থ অনুভব করলে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তিনি মারা যান। তিনি হিট স্ট্রোকে নয়, হার্ট অ্যাটাকে মারা যেতে পারেন।

দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হেলেনা আক্তার নিপা বলেন, এতো সকালে যদি মৃত্যু হয়, তাহলে হিট স্ট্রোকে মৃত্যু হয়েছে, এটা বলা ঠিক হবে না। কারণ সেই সময় হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি খুবই কম। হতে পারে তার প্রেশার কিংবা ডায়াবেটিস ছিল। সেই কারণে তিনি স্ট্রোক করে মারা গেছেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি মার্টিন হীরক চৌধুরী বলেন, ‘সকালে তাপমাত্রা কম থাকে। এসময় হিট স্ট্রোকের কোনো ঝুঁকি নেই। ওনি উচ্চ রক্তচাপে ভুগছিলেন। শুক্রবার রাতেও অসুস্থ বোধ করেছিলেন বলে জেনেছি। ধারণা করা হচ্ছে, হার্ট অ্যাটাক কিংবা ব্রেন স্ট্রোক করে মৃত্যু হতে পারে তার। ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার অধিক তাপমাত্রায় রোদের মধ্যে কায়িক পরিশ্রম করলে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে। আসলে যে কোনো স্ট্রোক হলে হিট স্ট্রোক বলে চালিয়ে দেওয়া মেডিকেল সায়েন্স সমর্থন করে না। তিনি আরও বলেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, মানুষকে সতর্ক করতে হবে। এমন কোনো সংবাদ পরিবেশন করা যাবে না, যাতে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর