নড়াইলে সিভিল সার্জন অফিসের নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নড়াইল | 2024-04-21 06:47:40

নড়াইল সিভিল সার্জন অফিসের নিয়োগ পরীক্ষার ফল প্রকাশের ১৩ ঘণ্টা পর ফের সংশোধিত প্রকাশ করা হয়েছে। এ সময় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের রোল একাধিকবার আসাসহ বিভিন্নভাবে ফলাফল কারচুপির অভিযোগ উঠেছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

শনিবার (২০ এপ্রিল) সকালে নড়াইল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সরকারি ওয়েবসাইটে জেলা সিভিল সার্জন ও নিয়োগ পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য সচিব ডা. সাজেদা বেগম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ ফল প্রকাশ করা হয়। এ সময়ে চারটি পদে ৬৮টি শূন্যপদের বিপরীতে লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। ফল প্রকাশের পর বিভ্রান্তির সৃষ্টি হলে ১৩ ঘণ্টা পর আবার তা সংশোধন করে মধ্য রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে পুনরায় ফল প্রকাশ করা হয়।

এদিকে সংশোধিত নতুন চিঠিতে বলা হয়েছে, রোববার (২১ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮টা থেকে লিখিত পরীক্ষায় নির্বাচিতদের মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সকাল ১০টা থেকে দেড় ঘণ্টাব্যাপী চারটি পদের বিপরীতে চাকরি প্রত্যাশীরা লিখিত পরীক্ষা দেন। ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই এ ফল প্রকাশ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ফলাফল নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়।

লিখিত পরীক্ষার প্রকাশিত প্রথম ফলাফলে দেখা যায়, স্বাস্থ্য সহকারী পদে ১৪৯ জন পরীক্ষার্থী মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য কৃতকার্য হয়েছেন। ফলাফলে ২৪২২১৪০০৭০২, ২৪২২১৪০৩৩১২ এবং ২৪২২১৪০৩৫০৫ রোল নাম্বার দুই বার করে কৃতকার্যের তালিকায় প্রকাশ করা হয়েছে। এসময়ে ফেসবুকে ফলাফল প্রকাশের পর, নেতিবাচক মন্তব্যে ঠাসা পড়ে সিভিল সার্জন অফিস, নড়াইল নামক ফেসবুক পেজ।

পল্লব রায় নামে একজন তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, এটা কেমনে কী? পরীক্ষার ২৪ ঘণ্টা পার হতে না হতেই রেজাল্ট প্রকাশ, নাকি আগে থেকেই রেজাল্ট শিট তৈরি করে নিয়ে, পরীক্ষার আয়োজন করা হয়েছিল? সাধারণ প্রার্থীদের এভাবে হয়রানি কেন? কারও কারও তো ডাবল রেজাল্টও দেখা যাচ্ছে, এমন কেন ডাই? মাশরাফির নড়াইলে এ কেমন দুর্নীতি এ কেমন প্রহসন? এমন চলতে থাকলে সাধারণ মানুষ দাঁড়াবে কোথায়, ভরসা করবে কাকে? আমার তো মনে হয় নিয়োগকর্তাদের ঘাড়ে জিন পরীর আছর আছে।

রোহানুল আলম নামের একজন লেখেন, 'চরম দুর্নীতিগ্রস্ত একটা রেজাল্টশিট, কারণ আমার পরিচিত জন ৭০+ কনফার্ম পাবে, তাও টিকলো না, তাছাড়া পরীক্ষায় উত্তরপত্রের সিকিউরিটি ছিলো না, খাতা পরিবর্তন করার সুযোগ রয়েছে, এটা অসম্ভব যে ৭০০০+ পরীক্ষার্থীর খাতা মাত্র ১২ ঘণ্টার মধ্যে মূল্যায়ন শেষ করা হয়েছে। এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না, আবার কেউ কেউ ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিয়ে যোগাযোগ করছেন।

লিখিত পরীক্ষার প্রকাশিত প্রথম ফলাফল নিয়ে ওঠে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথার বাড়। ক্লাস আলী নামক আইডি থেকে লেখা হয়, ২৪ ঘণ্টা পার হতে না হতেই, এতগুলো প্রার্থীর একটা লিখিত পরীক্ষার ফলাফল; মূল্যায়ন কেমনে সম্ভব? এ যেন ওএমআর থেকেও ফাস্ট। নাকি সর্ষের ভেতর ভূত?

জেলা সিভিল সার্জন অফিস জানিয়েছে, চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৫ ও ১৬তম গ্রেড বেতন স্কেলে চারটি পদের বিপরীতে ৬৮টি শূন্য পদে জনবল নিয়োগে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। স্বাস্থ্য সহকারী শূন্য পদে ৬২ জন, স্টোর কিপার পদে ০৩ জন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে ০২ জন। আবার কোল্ড চেইন টেকনিশিয়ান পদে একজনের বিপরীতে আবেদন করেন ৫ হাজার ৪২৮ জন চাকরি প্রত্যাশী। প্রতি পরীক্ষার্থীকে ফি বাবদ গুনতে হয়েছে ২২৩ টাকা।

আরও জানা যায়, লিখিত পরীক্ষায় স্বাস্থ্য সহকারী পদে ৩ হাজার ৩৫৪ জনের বিপরীতে ১৪৬ জন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে ১৪৮ জনের বিপরীতে ১৫ জন, স্টোর কিপার পদে ৪০৫ জনের বিপরীতে ১৬ জন, কোল্ড চেইন টেকটিনিসিয়ান ৪ জনের বিপরীতে ১ জন পরীক্ষার্থী মৌখিক পরীক্ষার জন্য উত্তীর্ণ হয়েছেন। চারটি পদের বিপরীতে লিখিত পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেছেন ৩৯১১ জন এবং তাদের লিখিত পরীক্ষায় বাংলা, অংক, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন উত্তরে খাতা মূল্যায়ন করেছেন স্কুল-কলেজের ৪০জন শিক্ষক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চাকরি প্রত্যাশীরা বলেন, ভালো পরীক্ষা দেওয়া সত্ত্বেও আমাদের নাম আসেনি। গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে অনেকেই নাকি টাকা পয়সা দিয়ে লবিং করে যাচ্ছে চাকরির জন্য।

এ বিষয়ে এ জেলা সিভিল সার্জন ও নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সচিব ডা. সাজেদা বেগম মুঠোফোনে জানান, ফলাফল প্রকাশে টাইপিং মিসটেকের কারণে লিখিত পরীক্ষায় স্বাস্থ্য সহকারী পদে ৩টি রোল নাম্বার রিপিট হয়েছে। তবে আমরা ১৪৯ জনকে নয় ১৪৬ জনকে ওই পদে রেখেছি। সংশোধিত ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যে কোনো ধরনের চাপ এড়াইতেই শতভাগ স্বচ্ছতার সাথেই লিখিত পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করে ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর