চার বছরের উন্নয়নের গল্প শোনালেন মেয়র তাপস

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-05-19 14:56:02

দায়িত্বভার গ্রহণের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে বিগত দিনে ১২'শ কোটি টাকার অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।

রোববার (১৯ মে) নগর ভবনে 'উন্নত ঢাকার উন্নয়ন অগ্রযাত্রার ৪ বছর' প্রতিপাদ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিগত ৪ বছরের সামগ্রীক কার্যক্রম নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরেন।

শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, করোনা মহামারী সংকটকালে আমি দায়িত্বভার গ্রহণ করি। সিটি করপোরেশনের উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রায় সকল ক্ষেত্রে আমরা পরিবর্তন আনতে সক্ষম হই। বাসযোগ্য ঢাকা বিনির্মাণে বিগত চার বছরে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন খাতে বিদ্যমান অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করে সুশাসন নিশ্চিত, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন সাধন, আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেলসহ মাণ্ডা, শ্যামপুর, জিরানি ও কালুনগর খাল পুনরুদ্ধার ও নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টিতে উদ্যোগ গ্রহণ, বছরব্যাপী সমন্বিত মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন, ঢাকার সচলতা আনয়নে বহুমাত্রিক উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, দশকের পর দশক ধরে চলা দখল সাম্রাজ্যের অবসান ঘটানো, প্রতিটি ওয়ার্ডে খেলার মাঠ-উদ্যান-কাঁচাবাজার, গণশৌচাগার প্রতিষ্ঠা, জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর ও বাস্তবভিত্তিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং সর্বোপরি ঢাকার ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে ঢাকাকে বিশ্বের বুকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে নানাবিধ কর্মকাণ্ড পরিচালন ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে এবং তা অব্যাহতভাবে চলমান রয়েছে।

সিটি করপোরেশনের আয় বৃদ্ধিসহ নিজস্ব অর্থায়নে অবকাঠামো নির্মাণ:

বিগত ৪ বছরে কোনো খাতে কোনো ধরনের কর বৃদ্ধি করা হয়নি জানিয়ে মেয়র বলেন, নির্বাচনের পর আমি ঢাকাবাসীর ওপর কোনো রকমের করের বোঝা না চাপিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেছিলাম। সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিগত ৪ বছরে আমরা কোনো খাতে কর বৃদ্ধি করিনি। বরং এ সময়ে ২৫টি নতুন খাত সৃষ্টি করা হয়েছে এবং ১৪টি নতুন খাত হতে আমরা রাজস্ব আদায় শুরু করেছি। ফলে করোনা মহামারীর মতো বৈশ্বিক সংকটের মাঝেও রাজস্ব আদায়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ইতিহাস সৃষ্টি করে চলেছে, যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

তিনি বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে করপোরেশনের রাজস্ব আদায় ছিল মাত্র ৫১৩ দশমিক ৯৬ কোটি টাকা, যা ২০২০-২১, ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে বেড়ে যথাক্রমে ৭০৩ দশমিক ৩১ কোটি, ৮৭৯ দশমিক ৬৫ কোটি ও ১০৩১ দশমিক ৯৭ কোটি টাকা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত যে রাজস্ব আদায় হয়েছে তা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৫৪ কোটি টাকা বেশি।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সফলতা:

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সফলতা তুলে ধরে মেয়র তাপস বলেন, এক সময় ঢাকা শহরের অলিগলি হতে শুরু করে মূল সড়ক পর্যন্ত সর্বত্রই যত্রতত্র উপছে পড়া বর্জ্যে সয়লাব ছিল। কিন্তু বিগত ৪ বছরে আমরা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে আমূল পরিবর্তন সাধন করেছি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম আধুনিকায়নে অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র অন্যতম একটি অনুষঙ্গ। কিন্তু বিগত ৫০ বছরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় মাত্র ২৪টি অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু আমি দায়িত্ব নেবার পর বিগত ৪ বছরে নতুন ৪১টি অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র নির্মাণ করেছি। বাকী ওয়ার্ডগুলোতেও অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কন্দ্রে নির্মাণে আমাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে আধুনিকায়ন নিশ্চিত করা হয়েছে জানিয়ে মেয়র তাপস বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম আধুনিকায়নে বিগত ৪ বছরে নতুন ২৫টি ডাম্প ট্রাক ক্রয়, প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রাথমিক বর্জ্য সংগ্রহকারী নিবন্ধন (PCSP), পুরাতন ৫টি অঞ্চলে চিকিৎসা-বর্জ্য সংগ্রহকারী নিবন্ধন করেছি। নতুন ৫টি অঞ্চলে চিকিৎসা বর্জ্য সংগ্রহকারী নিবন্ধন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সর্বোপরি সূচি অনুযায়ী নিয়মিতভাবে বিভিন্ন সড়ক, অলিগলি ঝাড় দেওয়া ও রাতের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র হতে মাতুয়াইল কেন্দ্রীয় ভাগাড়ে বর্জ্য স্থানান্তর নিশ্চিত করা হয়েছে। পাশাপাশি নতুন ১৫টি ডাম্প ট্রাক ও ১০টি পে- লোডার ক্রয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে, সামষ্টিকভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে আধুনিকায়ন নিশ্চিত হয়েছে। এতে করে শহরের সৌন্দর্য যেমন বেড়েছে তেমনি নগরবাসীকে এখন আর যত্রতত্র উপচে পড়া বর্জ্যের উৎকট গন্ধ পথ চলতে হয় না।

নগর বাসীর জন্য বিগত ৪ বছরে ১০্টি উন্মুক্ত উদ্যান ও ১১টি খেলার মাঠা সংষ্কারের করা হয়েছে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, খেলাধুলার জন্য পর্যাপ্ত মাঠ ও গণপরিসর সৃষ্টির লক্ষ্যে আমরা প্রতিটি ওয়ার্ডে ১টি করে খেলার মাঠ বা উদ্যান প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছিলাম। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বিগত ৪ বছরে ১১টি খেলার মাঠ সংস্কার ও প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ৫টি ওয়ার্ডে নতুন খেলার মাঠ প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পাশাপাশি বিগত ৪ বছরে ১০টি উদ্যান প্রতিষ্ঠা করে তা জনগণের জন্য অবমুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এবং ৪টি মুক্তাঙ্গন উদ্যান প্রতিষ্ঠার কাজ চলমান রয়েছে। 

ওয়ার্ডভিত্তিক উন্নয়ন কার্যক্রম:

প্রতিটি ওয়ার্ডে সামাজিক অনুষ্ঠান কেন্দ্র, গণশৌচাগার ও কাঁচাবাজার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে জানিয়ে মেয়র বলেন, বিগত ৪ বছরে ৩টি সামাজিক অনুষ্ঠান কেন্দ্রের সংস্কার সম্পন্ন হয়েছে ও ৬টি সামাজিক অনুষ্ঠান কেন্দ্র সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ১৫টি ওয়ার্ডে নতুন সামাজিক অনুষ্ঠান কেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে এবং ৩৩টি ওয়ার্ডে নতুন সামাজিক অনুষ্ঠান কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মজীবী মানুষ বিশেষ করে নারীদের সুবিধার্থে প্রতিটি ওয়ার্ডে ন্যূনতম একটি করে গণশৌচাগার নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। তারই ধারাবাহিকতায় বিগত ৪ বছরে ৩৬টি গণশৌচাগার নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়েছে।

মেয়র বলেন, বর্তমানে ৫টি নতুন কাঁচাবাজার নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে এবং ৪টি ওয়ার্ডে নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ২টি কাঁচাবাজারের উর্ধ্বমূখী সম্প্রসারণ ও সংস্কার কাজ সমাপ্ত হয়েছে এবং ২টি কাঁচাবাজারের উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ ও সংস্কার কাজের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

মশা নিয়ন্ত্রণে যা করেছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন :

সারা বছর মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় জানিয়ে মেয়র বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ঢেলে সাজাতে আমরা সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দেই। সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে ২০২০ সালের ৬ জুন আমরা বছরব্যাপী সমন্বিত মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম শুরু করি। বর্তমানে সূচি অনুযায়ী সারাবছরই আমরা এই কার্যক্রম পরিচালনা করে চলেছি।

মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বেগবান করতে আমরা নতুন মশককর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে জানিয়ে মেয়র বলেন, পূর্বে ৪২৪ জন মশককর্মী এই কার্যক্রম পরিচালনা করতো। বর্তমানে ১ হাজার ৫০ জন মশককর্মী ও মশক সুপারভাইজার নিয়মিতভাবে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। একইসাথে আমরা প্রয়োজনীয় যান-যন্ত্রপাতিও বৃদ্ধি করেছি।

তিনি বলেন, আমার দায়িত্বভার গ্রহণের পূর্বে ৫৫১টি ফগার মেশিন, ৪৩১টি হস্তচালিত মেশিন ও ১৭টি হুইলব্যারো মেশিন দিয়ে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো। বিগত ৪ বছরে আমরা নতুন আরো ৫৩৫টি ফগার মেশিন, ৬০০টি হস্তচালিত মেশিন ও ২৯টি হুইলব্যারো মেশিন ক্রয় করেছি।

তিনি বলেন, পাশাপাশি কোন ওয়ার্ডে সপ্তাহে ১০ জনের বেশি ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত হলে সে ওয়ার্ডকে লাল চিহ্নিত এলাকা (রেড জোন) ঘোষণা করে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। করপোরেশনের ১০টি অঞ্চলেই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে।

মেয়র বলেন, গত বছরের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত আমরা ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৯ হাজার ৭৬৪ জন ডেঙ্গু রোগী পেয়েছি। তখন সারাদেশে রোগী ছিল ২ লাখ ৭১ হাজার ১৭৫ জন। যা সারাদেশের মোট রোগীর মাত্র ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। ফলে সফলতার সাথে আমরা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছি।

মেয়র আরও বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে যে কর্মপরিকল্পনা রয়েছে সেটি ২০০০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত কেউই এরকম পরিকল্পনার উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। কিন্তু আমরা সেটি করেছি। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের কর্মপরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করার জন্য এক হাজারেরও অধিক জনবল থাকা প্রয়োজন সেটি আমার রয়েছে। এই কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে প্রতিটি ওয়ার্ডে সকালে সাতজন এবং বিকেলে ছয়জন মশক-কর্মী গিয়ে যেখানে মশা বেশি থাকতো সেখানে ওষুধ ছিটাতো। প্রত্যেকটা ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর বাসায় আমার মশক-কর্মীরা গিয়েছে।

আগে কীটনাশকের মান নিয়ে কথা আসলেও এখন কিন্তু কীটনাশক নিয়ে আর কোনো কথা শোনা যায় না। আমরা কীটনাশকের মান ধরে রেখেছি। আমাদের সুশাসন নিশ্চিত হয়েছে বলেও জানান ডিএসসিসি মেয়র।

এ সম্পর্কিত আরও খবর