মাটি পরীক্ষা করে সার প্রয়োগ, আলোর মুখ দেখেছেন কৃষকরা

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, টাঙ্গাইল | 2024-05-19 20:44:44

মাটি পরীক্ষা করে সার প্রয়োগ করলে ধানের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয়। কৃষিকাজে নানা প্রতিবন্ধকতা ও সমস্যার সমাধান দেয় সেসব গবেষণায় উপকৃত হন কৃষকরা। তেমনি গবেষণা প্রকল্পের অর্থায়নে মাটি পরীক্ষা করে ধানের আবাদ করে লাভবান হয়েছেন টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার মহিষমাড়া ইউনিয়নের জয়নাতলী গ্রামের কৃষক মো. সাইফুল ইসলাম।

সুষম মাত্রায় সারের প্রায়োগিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ধানের আবাদে তাঁর ফলন বেড়েছে ২৫ ভাগ। তাঁকে দেখে অন্য কৃষকেরাও মাটি পরীক্ষা করে সার প্রয়োগ করার প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন। এতে যেমন সারের অপচয় রোধ হবে, বাড়বে ফলনও।

জানা যায়, মৃত্তিকা গবেষণা ও গবেষণা সুবিধা জোরদারকরণ প্রকল্পের অর্থায়নে মধুপুর উপজেলার মহিষমাড়া জয়নাতলী গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলামের ৩০ শতাংশ জমিতে ব্রি ধান-৮৯ জাতের ধান আবাদ করা হয়। সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ করা সেই জমির ধান কর্তন এবং মাড়াই শেষে পরিমাপ করে দেখা যায়, ফলন বেশি হয়েছে অন্তত ২৫ ভাগ। দেখা যাচ্ছে, যাঁরা নিজেদের মতো করে জমিতে সার দিয়েছেন, তাঁদের জমিতে ফলন হয়েছে অনেক কম। এ ছাড়া হেক্টরপ্রতি ফলন বাড়ে অন্তত এক মেট্রিক টন।

কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি ৩০ শতাংশ জমিতে মাটি পরীক্ষা করে আবাদ করেছি। জমিতে আগের তুলনায় এবছর সারে খরচ কম হয়েছে। ফলনও বৃদ্ধি পেয়েছে। জমিতে বিষের পরিমাণও কম পড়েছে। জমিতে ২০ থেকে ২৫ ভাগ ফলন বেশি হয়েছে।

কৃষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা কৃষক, আমরা ফসল উৎপাদন করি। আমরা মাটির গুনাগুন না জেনে ফসল উৎপাদন করি। এখন আমাদের কৃষি কর্মকর্তারা এসে মাটির গুনাগুণ পরীক্ষা করে দেখছে, মাটির পরীক্ষার পরে জমিতে আবাদ করে দেখছি আমাদের খরচ কম হয়েছে। আর মাটি পরীক্ষা ছাড়া আমাদের খরচ বেশি হয়েছে। মাটি পরীক্ষা করে আবাদ করলে ফলন বৃদ্ধি পাই। আমরা যারা কৃষক আছি মাটি পরীক্ষা করে আবাদ করা ভালো। মাটির পরীক্ষা না করলে জমিতে সারের প্রয়োগটা বেশি হয়ে যায়। পোকার আক্রমণ বেশি করে। আর মাটি পরীক্ষা করে আবাদ করে ২৫ থেকে ৩০ ভাগ ফলন বেশি পেয়েছি।

টাঙ্গাইল মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. উৎপল কুমার বলেন, মধুপুর উপজেলার মহিষমাড়া জয়নাতলী গ্রামে একজন কৃষকের ৩০ শতাংশ জমিতে মাটি পরীক্ষা করে সার সুপারিশ করেছি। পাশাপাশি আরেকটি জমিতে কৃষক তার নিজস্ব জায়গায় আবাদ করেছে। আমরা যেটা দেখছি মাটি পরীক্ষা করে যে আবাদ করেছি এখানে প্রায় ১৫ থেকে ২৫ ভাগ সার কম লেগেছে। সারের অপচয় কম হয়েছে। অন্যদিকে ফলন প্রায় ২০ থেকে ৩০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই জমিতে ব্রি ধান-৮৯ আবাদ করা হয়েছিল। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান হয়েছে। পাশাপাশি আমার যে প্রেসক্রিপশন সিস্টেমে যাই, এটা আমরা স্মার্ট প্রেসক্রিপশন বলছি যেখানে আমরা মাটি পরীক্ষা করে সার দিচ্ছি। অন্যদিকে আমরা রোগ পোকামাকড়ের জন্য যে প্রেসক্রিপশন দরকার সেটা তাদের করে দিচ্ছি। এর ফলে হচ্ছে কি ১৫ থেকে ২০ ভাগ সারের অপচয় কম হচ্ছে। অন্যদিকে বালাইনাশক অর্ধেকে নেমে এসেছে। যদি সারা বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে বছরে প্রায় সার ও কীটনাশক বাবদ ২০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করতে পারবো। এখন যে খাদ্যশস্য উৎপাদন হয় তার চেয়ে প্রায় ১ কোটি মেট্রিক টন বেশি খাদ্যশস্য সারা বাংলাদেশে বেশি উৎপাদন হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর