২৭ মে সারা দেশে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি অটোরিকশাচালকদের

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-05-20 13:39:04

থ্রি-হুইলার ও সমজাতীয় মোটরযান নীতিমালা চূড়ান্ত ও কার্যকর করে ইজিবাইক, অটোরিকশাসহ ব্যাটারিচালিত যানবাহনের দ্রুত নিবন্ধন, লাইসেন্স প্রদান ও রুট পারমিটসহ ৭ দফা দাবি জানিয়েছেন রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদের নেতারা। দাবি আদায় না হলে আগামী ২৭ মে থেকে সারাদেশে লাগাতার কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।

সোমবার (২০ মে) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে এই হুঁশিয়ারি দেন সংগঠনটির নেতারা। এর আগে কয়েকশ অটোরিকশাচালক মিছিল নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হন।

ঢাকা মহানগরে ইজিবাইক, অটোরিকশাসহ ব্যাটারিচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী, বিআরটিএ এবং ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রের ঘোষণার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়ে সংগঠনটির নেতারা বলেন, কেন এই সিদ্ধান্ত? কার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত? ইজিবাইক, রিকশাসহ ব্যাটারিচালিত যানবাহন ঢাকা মহানগরের প্রধান সড়কে চলাচল করে না। এটা মূলত অলি গলিতে চলে।

তারা বলেন, এক জরিপে দেখা গেছে, ঢাকা মহানগরের প্রায় ৬০ ভাগ মানুষ এই ধরনের যানবাহনে চলাচল করে। মাত্র ৬ ভাগ যাত্রী নিয়ে ঢাকা মহানগরের প্রায় ৮০ ভাগ রাস্তা দখল করে যানজট সৃষ্টি করে প্রাইভেট গাড়ি। তারপরেও কেন এই বাহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা। এই বাহনের সাথে চালক, মালিক, মহাজন, গ্যারেজ মালিক, চার্জিং ব্যবসায়ী, শ্রমিক মেস পরিচালনাকারী ও মোটর-রিকশা পার্টস, ব্যাটারিসহ সারাদেশে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ জড়িত। ঢাকা মহানগরে এ সংখ্যা আনুমানিক ৫ লাখের ওপরে। বিকল্প ব্যবস্থা না করে রাস্তা থেকে উচ্ছেদ করে এ গণপরিবহন বন্ধ করা হলে আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহকারী লাখ লাখ মানুষের ও তাদের পরিবারের দায়-দায়িত্ব কে নেবে?

তারা বলেন, ২ টনের একটি এসিতে ৬ ঘণ্টায় ১৬ ইউনিট বিদ্যুৎ লাগে অথচ একটা ব্যাটারিচালিত যানবাহনের ব্যাটারি চার্জে ৩.৫-৪ ইউনিট বিদ্যুৎ লাগে। অর্থাৎ, ২ টনের এসিতে ১-২ জন মানুষের ঠান্ডা হওয়াটা জরুরি না সমপরিমাণ বিদ্যুতে ৪ জন মানুষের আত্মকর্মসংস্থান ও ২০ জন মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষা, কোনটা জরুরি? আর অপচয়ের তো কোন সুযোগই নেই বরং বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর ভাষায়, বিদ্যুৎ ব্যবহারে তাদের রিটার্ন বেশি। কারণ তাদের বিদ্যুৎ বিল আবাসিক বিল থেকে অনেক বেশি। এরা বিদ্যুৎ চুরিও করে না। দেশের প্রায় ৩৭ শতাংশ বিদ্যুৎ এমনিতেই ব্যবহারের অভাবে অলস পড়ে থাকে, যার জন্য সরকারকে ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয়।

মানববন্ধনে নেতৃবৃন্দ সড়ক পরিবহন মন্ত্রী, বিআরটিএ ও ঢাকা মহানগরের দুই মেয়রের ঘোষণার পর মিরপুর, লালবাগ, গেন্ডারিয়া, শ্যামপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় রিকশা আটক, ব্যাটারি খুলে নেওয়া, ডাম্পিং ও চালক-মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের হয়রানির এবং মিরপুর এলাকায় আন্দোলনরত রিকশা শ্রমিকদের ওপর পুলিশি হামলার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

বিকল্প ব্যবস্থা না করে মন্ত্রী, বিআরটিএ ও মেয়রদের এই অযৌক্তিক, গণবিরোধী, ও লাখ লাখ মানুষকে কর্মহীন করে বেকারের মিছিল দীর্ঘ করার অগণতান্ত্রিক ও তুঘলকি সিদ্ধান্ত বাতিলের জোর দাবি জানান। অন্যথায় এই লাখ লাখ কর্মহীন ও বেকার চালকসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে রাজপথে তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে হুঁশিয়ার উচ্চারণ করেন। একইসাথে সংগ্রাম পরিষদ থ্রি-হুইলার ও সমজাতীয় মোটরযান নীতিমালা চূড়ান্ত ও কার্যকর করে ইজিবাইক, রিকশাসহ ব্যাটারিচালিত যানবাহনের দ্রুত নিবন্ধন, লাইসেন্স ও রুট পারমিটসহ সংগ্রাম পরিষদ ঘোষিত ৭ দফা দাবি মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলের সভাপতিত্ব করেন সংগ্রাম পরিষদ ঢাকা মহানগর শাখার সহ-সভাপতি জালাল আহমেদ। সঞ্চালনা করেন অর্থ সম্পাদক রোখসানা আফরোজ আশা। আরও বক্তব্য রাখেন সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ও সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেকুজ্জামান লিপন, অর্থ সম্পাদক জুলফিকার আলী, সংগ্রাম পরিষদ কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদ সদস্য আবু নাঈম খান বিপ্লব, রাহাত আহমেদ, এস এম কাদির, ঢাকা মহানগর এর যুগ্ম সম্পাদক দাউদ আলী মামুন, সদস্য সেকান্দার আলী, আবদুস সালামসহ অনেকে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর