২০ শিল্প প্রতিষ্ঠান পেল ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার-২০২১’ 

, জাতীয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2024-05-23 16:02:15

শিল্প মন্ত্রণালয় কর্তৃক ৬ ক্যাটাগরির ২০টি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার-২০২১’ প্রদান করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের মালিক/প্রতিনিধিদের হাতে পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট ও সম্মাননা সনদ প্রদান করেন।

জাতীয় অর্থনীতিতে শিল্পখাতে অবদানের স্বীকৃতি প্রদান, প্রণোদনা সৃষ্টি, সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করা এবং বেসরকারি খাতে শিল্প স্থাপন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য এ পুরস্কার প্রদান করা হয়।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানার সভাপতিত্বে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ ও এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের যুগোপযোগী পরিকল্পনা ও নীতি এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে শিল্পখাতে উল্লেখযোগ্য ও দৃশ্যমান উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি দিয়ে তাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। এ ধরনের সৃজনশীল উদ্যোগের অংশ হিসেবে শিল্প মন্ত্রণালয় নিয়মিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প পুরস্কার’, ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার’, ‘সিআইপি (শিল্প) কার্ড’, ‘প্রোডাক্টিভিটি অ্যান্ড কোয়ালিটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’ প্রভৃতি পুরস্কার প্রদান করে আসছে।

তিনি বলেন, এ ধরনের স্বীকৃতি শিল্প উদ্যোক্তাদের নিজ নিজ কারখানায় উৎপাদিত পণ্যের উৎকর্ষ সাধনে অনুপ্রাণিত করবে। এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে নবীন শিল্প উদ্যোক্তারাও নিজেদের পণ্যের গুণগত মানোন্নয়ন এবং বিশ্বমানের শিল্প স্থাপনে উজ্জীবিত হবেন। ফলে দেশে গুণগত মানসম্পন্ন শিল্পায়নের ধারা বেগবান হবে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম শর্ত। বিগত ১৫ বছরে এটি বহাল ছিল বলে শিল্পায়ন বেগবানসহ অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ নিজেই একটি বড় বাজার। অভ্যন্তরীণ বাজারসহ বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধিতে আমাদের গুণগতমানের পণ্য উৎপাদনের দিকে নজর দিতে হবে।

মন্ত্রী এ সময় বিশ্বমানের গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদনে আমাদের শিল্পোদ্যোক্তাদের সততা ও আন্তরিকতার সহিত কাজ করার আহ্বান জানান।

নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় টাঙ্গাইল শাড়িসহ ইতোমধ্যে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ৩১টি পণ্যকে জিআই সনদ প্রদান করা হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে দশ বছর মেয়াদি ‘ন্যাশনাল প্রোডাক্টিভিটি মাস্টার প্ল্যান’ প্রণয়ন করা হয়েছে। আধুনিক ও যুগোপযোগী শিল্প কারখানা স্থাপনসহ শিল্পায়নের ধারাকে বেগবান করতে ‘জাতীয় শিল্পনীতি-২০২২’ ও ‘এসএমই নীতিমালা-২০১৯’ প্রণয়ন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় শ্রমঘন শিল্পায়নে মনোনিবেশসহ শিল্পখাতে গতিশীলতা অব্যাহত রাখতে শিল্প মন্ত্রণালয় নতুন শিল্প কারখানা স্থাপন, পুরাতন কারখানার আধুনিকায়ন এবং যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপনের কাজ করছে। শিল্পখাতে উন্নয়নের চলমান অভিযাত্রা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ নির্ধারিত সময়ের আগেই শিল্প সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ বলেন, কৃষি উৎপাদনে ঈর্ষণীয় সাফল্য থাকা সত্ত্বেও আমরা কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ও রফতানিতে অনেকটা পিছিয়ে আছি। প্রক্রিয়াজাতকরণের কম সুযোগ ও সংরক্ষণাগারের অভাবে আমাদের উৎপাদিত শাকসবজি ও ফলমূলের প্রায় ২০-৩০% পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যায়। ফলে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ভোক্তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি এ সময় দেশের কৃষিখাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান।

শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী ০৬(ছয়) ক্যাটাগরির মোট ২০টি শিল্প প্রতিষ্ঠান/উদ্যোক্তাকে এই পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে- বৃহৎ শিল্প ক্যাটাগরিতে ০৬টি, মাঝারি শিল্প ক্যাটাগরিতে ০৩টি, ক্ষুদ্র শিল্প ক্যাটাগরিতে ০৪টি, মাইক্রো শিল্প ক্যাটাগরিতে ০৩টি, কুটির শিল্প ক্যাটাগরিতে ০৩টি এবং হাইটেক শিল্প ক্যাটাগরিতে ০১টি।

বৃহৎ শিল্প ক্যাটাগরিতে যৌথভাবে ১ম হয়েছে ইকোটেক্স লি., প্রাণ ডেইরী লি. ও মীর আক্তার হোসেন লি., ২য় হয়েছে স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লি., যৌথভাবে ৩য় হয়েছে স্নোটেক্স আউটারওয়্যার লি. ও স্কয়ার টয়লেট্রিজ লি.। মাঝারি শিল্প ক্যাটাগরিতে ১ম হয়েছে বেঙ্গল পলি এন্ড পেপার স্যাক লি., ২য় হয়েছে বসুমতী ডিস্ট্রিবিউশন লি. এবং ৩য় হয়েছে এপিএস এ্যাপারেলস লি.।

ক্ষুদ্র শিল্প ক্যাটাগরিতে যৌথভাবে ১ম হয়েছে দ্য রিলায়েবল বিল্ডার্স ও কনকর্ড এন্টারটেইনমেন্ট কোম্পানি লি., ২য় হয়েছে রংপুর ফাউন্ড্রি লি. এবং ৩য় হয়েছে গুনজে ইউনাইটেড লি.। মাইক্রো শিল্প ক্যাটাগরিতে ১ম হয়েছে ফারিহা গ্রিন মুড লেদারস্ লি., ২য় হয়েছে এ.বি.এম ওয়াটার কোম্পানি এবং ৩য় হয়েছে ডীপলেড ল্যাবরেটরিজ লি.। কুটির শিল্প ক্যাটাগরিতে ১ম হয়েছে ব্লু-স্টার অ্যাগ্রো প্রোডাক্ট এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, ২য় হয়েছে প্রীতি বিউটি পার্লার এবং ৩য় হয়েছে লেহাজ সালমা যুব মহিলা কল্যাণ সংস্থা। হাইটেক শিল্প ক্যাটাগরিতে শুধমাত্র ১টি প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হয়েছে বিজ সলুশনস লি.।

উল্লেখ্য, শিল্প মন্ত্রণালয় কর্তৃক ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার প্রদান সংক্রান্ত নির্দেশনাবলি ২০১৩’ অনুযায়ী ২০১৪ সালে ১ম বারের মত ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার’ প্রদান শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এই বছর ৭ম বারের মত ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার ২০২১’ প্রদান করা হচ্ছে।

‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার প্রদান নীতিমালা ২০২০’-এ রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার প্রদানের উদ্দেশ্য, ক্ষেত্র নির্ধারণ, পুরস্কার প্রাপকের সংখ্যা নির্ধারণ ও বিবেচনা সূত্র, মনোনয়ন যোগ্যতা, প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুতকরণ কমিটি, আবেদনপত্র মূল্যায়ন কমিটি এবং মনোনয়ন চূড়ান্তকরণ কমিটি গঠন ও কার্যপরিধি ইত্যাদি বর্ণিত আছে। রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান/ব্যবস্থাপনা পরিচালক (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) পুরস্কার প্রাপ্তির পরবর্তী এক বছর বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে এবং সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায় আমন্ত্রণ পাবেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর