সালিশের নামে উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতার অর্থ আত্মসাৎ

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া | 2024-05-23 20:36:12

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে নৌ বন্দরের অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা ভূমি ও অবকাঠামোর জন্য পাওয়া ৬ কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকদের না দিয়ে শালিসের বাহানায় আশুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান হানিফ মুন্সি ও উপজেলা বিএনপি নেতা মো. জাকির হোসেনের কাছে রেখে দেয়ার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভূক্তভোগী পরিবারের লোকজন।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) দুপুরে আশুগঞ্জ প্রেস ক্লাবের নাছির আহমেদ সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। এসময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপজেলার চর চারতলা গ্রামের হাবিব মিয়ার মেয়ে হাসি আক্তার জুঁই।

লিখিত বক্তব্যে জুঁই বলেন, জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার চর চারতলা মৌজার ৪৪০/৩৩১৮ দাগের এক একর ভূমি নৌ বন্দরের অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করে সরকার। অবকাঠামো বিলসহ অধিগ্রহণ মূল্য নির্ধারণ করা হয় ২৬ কোটি ৮৪ লাখ, ৪১ হাজার ৯৫৩ টাকা। আমরা উক্ত ভূমির বৈধ মালিক হলেও উপজেলার মৈশাইর গ্রামের শাহজাহান মিয়াসহ আরো কয়েকজন জাল দলিল ও ভুল বিএস খতিয়ানের মাধ্যমে অধিগ্রহণকৃত ভূমি তাদের নামে খারিজ করে নেয়। নামজারি করতে গিয়ে ২০.১২.১৯৫২ সালে সম্পাদিত ৪৩৬৪ নং একটি দলিলের জাল অনুলিপি প্রদর্শন করা হয়। অথচ রেকর্ড রুমে তল্লাসী দিয়ে পাওয়া যায় ৪৩৬৪ দলিলাদি সরাইল উপজেলার বেহাইর মৌজার যা ০৪.১২.১৯৫২ সালে সম্পাদিত হয়েছে। অথচ আমরা উক্ত ভূমির প্রকৃত ওয়ারিশের কাছ থেকে ক্রয়সূত্রে বৈধ মালিক হওয়ায় আদালতে মামলা দায়ের করি। ফলে অধিগ্রহণের টাকা আটকে যায়। যা কোন পক্ষের মাধ্যমেই তা উত্তোলন করা যাচ্ছিল না।

এমতাবস্থায় আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হানিফ মুন্সি ও উপজেলা বিএনপি নেতা জাকির হোসেন ২৮.১১.২০২১ তারিখে আমাদের ডেকে নিয়ে উভয় পক্ষকে সমঝোতার মাধ্যমে অধিগ্রহণের টাকা উত্তোলন করে সমবন্টনের প্রস্তাব দেয়। আমরাও সরল বিশ্বাসে মীমাংসার স্বার্থে তাদের কথা বিশ্বাস করে আমাদের দায়ের করা মামলা ৪১০/২০১৯ তুলে নেই। একই তারিখে হানিফ মুন্সি ও জাকির হোসেন আমাদের ৪ জনের কাছ থেকে নন জুডিশিয়াল খালি স্ট্যাম্পে এবং স্ব স্ব একাউন্টের ব্যাংক চেকে টাকার অংক না বসিয়ে স্বাক্ষর নেয়। পরে মিমাংসার স্বার্থে আমাদের আপত্তি না থাকায় শাহজাহান মিয়ার মাধ্যমে অধিগ্রহণের টাকা উঠানো হয়। উঠানো টাকার মধ্যে ৬ কোটি টাকা হানিফ মুন্সির কাছে জমা রাখে। যা পরবর্তীতে সমঝোতার ভিত্তিতে বণ্টন করে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু হানিফ মুন্সি এই টাকা আমাদের না দিয়ে ৩ বছর যাবত তার কাছে আটকে রেখেছে। যা এলাকার সকলেই জানেন। আমরা এই বিষয়ে তার কাছে বার বার গেলেও সে আমাদের টাকা না দিয়ে ঘুরাচ্ছেন। অথচ আমরা মামলা মোকাদ্দমা করে টাকা পয়সা খরচ করে অতিকষ্টে আমরা দিনে পার করছি। এই টাকার শোকে আলম খা স্টোক করে মৃত্যুবরণ করেন। তার ছেলেও অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে। এসব ঘটনা সুরাহা না হওয়ায় আমরা আবারো আদালতে পি২৮৮/২০২৪ একটি মামলা দায়ের করেছে।

এসব বিষয়ে মৃত আলম খার ছেলে জামাল খা বলেন, ৬ কোটি টাকা আমরা পাওয়ার কথা থাকলেও শালিসের নাম করে উপজেলা চেয়ারম্যান মো. হানিফ মুন্সি ও উপজেলা বিএনপি নেতা জাকির হোসেন তা নিজেদের কাছে আটকে রাখছে। আমরা গরিব মানুষ একদিকে জমি ও বাবাকে হারিয়েছি, অন্যদিকে টাকা। আমরা এখন সব হারিয়ে নিঃস্ব। আমরা আমাদের প্রাপ্য টাকা চাই।

ভুক্তভোগীদের ওয়ারিশ মো. কুদ্দুস মিয়া বলেন, আমরা এই টাকার জন্য বার বার হানিফ মুন্সিও জাকির হোসেনের কাছে গেলেও তারা আমাদের পাত্তাই দিচ্ছে না। এনিয়ে উপহজলায় বেশ কয়েকবার চেয়ারম্যান হানিফ মুন্সি আমাদের সাথে খারাপ আচরণ করেছেন। আমরা আমাদের অধিকারের টাকা চাই।

এসব বিষয়ে আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো.হানিফ মুন্সি বলেন, যারা সংবাদ সম্মেলন করেছেন তাদের মধ্যে কেউ এই টাকা পাওনা না। তারা উদ্যেশ্যমূলকভাবে ও আমাকে হয়রানি করার জন্য এই সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সবকিছু মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমরা কারো প্রাপ্য টাকা আমাদের কাছে রাখিনি। যারা অভিযোগ করেছে তাদের মামলা আদালতে খারিজ করে দিয়েছে। তাই কোন ভাবেই তারা টাকা পাওনা না। একটি মহল আমাকে নির্বাচনে ঘায়েল করার জন্য এই নাটক সাজিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, আলম খার ছেলে জামাল খা, রাজন খা, ওমর খার স্ত্রী খালেদা বেগম, কুদ্দুস মিয়ার স্ত্রী ফরিদা বেগম, কুদ্দুস মিয়া প্রমূখ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর