বর্ষায় হাঁটু সমান কাদা, খরায় উড়ছে ধুলো

, জাতীয়

মাসুম বিল্লাহ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, গাইবান্ধা | 2024-05-24 18:56:40

গাইবান্ধায় স্থানীয় সরকার বিভাগের (এলজিইডি) আওতায় অতি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলো আজও কাঁচা রয়ে গেছে। বর্ষায় এসব রাস্তায় হাঁটু পরিমাণ কাদার সৃষ্টি হয়। আর এখন খরায় রাস্তাগুলোতে উড়ছে ধুলো। ফলে এ সব রাস্তা দিয়ে দুই মৌসুমেই হেঁটে চলাও দায় হয়ে পড়ে। দুর্ভোগ কমাতে প্রতিবছরই চাঁদা তুলে এসব রাস্তা মেরামত করে চলাচল করেন স্থানীয়রা।

গাইবান্ধা স্থানীয় সরকার বিভাগের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় এবং সদর উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারের কার্যালয় সূত্র জানায়, গেল অর্থ বছরের জুন পর্যন্ত জেলায় এ দফতরের আওতায় ৪ হাজার ৪৯৬ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে কাঁচা রাস্তার পরিমাণ ২ হাজার ৬৩৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে সদরের কাঁচা রাস্তার পরিমাণ ১৬৬ কি. মি.।

সূত্র জানায়, একই বছরের জুলাইয়ে জেলার ১ হাজার ৬৬৪ কি.মি. সড়কের ১ হাজার ১৫৭টি রাস্তা নতুন আইডি অন্তর্ভুক্তিকরণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। যার মধ্যে সদর উপজেলার অতি গুরুত্বপূর্ণ (এ ক্যাটাগরি) ৪২টি, তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ (বি ক্যাটাগরি) ২৬৪টি এবং অন্যান্য ৬৪টিসহ ৩৭৬ কিলোমিটারের ৩০৬টি রাস্তা রয়েছে কাঁচা।

সদর উপজেলার পাকা না হওয়া রাস্তাগুলোর মধ্যে একটি বোয়ালী ইউনিয়নের এসকেএসইন (এসকেএস মোড়) হতে রাধাকৃষ্ণপুর কমিউনিটি ক্লিনিক পর্যন্ত দুই কিলোমিটার রাস্তা। এছাড়া ওই রাস্তাটির পশ্চিম রাধাকৃষ্ণপুর জামে মসজিদ থেকে পশ্চিম-দক্ষিণের অপর প্রান্তে রয়েছে হরিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

সম্প্রতি সরেজমিনে এই রাস্তাটিতে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তাটির বেহাল দশা। এসকেএসইনের (এসকেএস মোড়) আজিম উদ্দিনের বাড়ির সামনে থেকে সাইদুরের দোকান পর্যন্ত কোয়াটার কিলোমিটার অংশে রাস্তাটিতে অন্তত ছয় ইঞ্চি পরিমাণ ধুলো পড়েছে। ধুলোর উপর দিয়ে রিকশা, ভ্যান, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের মতো বিভিন্ন যানবাহন চলাচলে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। পরনের পোশাক নষ্ট হলেও যানবাহন পার হলে পথচারীদের চোখে-মুখ কাপড়ে ঢেকে ধুলো থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করতে দেখা গেছে।

এছাড়া এলাকাবাসীর উদ্যোগে রাস্তা মেরামতে ব্যবহার করা ভাঙা ইটগুলো বৃষ্টির কারণে মাটি ধুয়ে গিয়ে উঁচু-নিচু অবস্থায় রয়েছে। যা পথচারীদের জন্য বিশেষ করে হেঁটে চলা পথচারীদের জন্য দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। আবার রাস্তার উপরের একপাশের মাটি কেটে দেওয়া হয়েছে অন্য পাশে। রাস্তা সংলগ্ন পুকুরে রাস্তার অর্ধেক অংশ ভেঙে গেছে, বিশেষ করে অন্তত ২০০ মিটার জুড়ে অর্ধেক রাস্তা সরদারের পুকুরের ভেতরে ভেঙে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া আব্দুল কাফী শেখের বাড়ির সামনের অংশে প্যারাসাইডিং থাকা সত্ত্বেও সেখানে অর্ধেক রাস্তা ভেঙে গেছে পুকুরে। দীর্ঘদিন শূন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছে প্যারাসাইডিং। গত অর্থ বছরে পিআইও অফিসের এমপির বিশেষ প্রকল্পে রাস্তায় মাটির কাজ করা হলেও মাটি দেওয়া হয়নি ওই প্যারাসাইডিংয়ে। একই অবস্থা জেলার অন্যান্য কাঁচা রাস্তাগুলোরও।

স্থানীয়রা জানান, এই রাস্তাটি শহরের সাথে সহজে যোগাযোগের একমাত্র রাস্তা হওয়ায় দুটি ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন চলাচল করেন। কেননা, এই এলাকা হতে জেলা শহর মাত্র ৩ কি.মি.। আর ১কি.মি. পরেই পৌরসভা। প্রতি বছর বর্ষা এলেই এসব রাস্তায় হাঁটু পরিমাণ কাদার সৃষ্টি হয়। তা স্থায়ী হয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন ওই পথ দিয়ে চলা শিক্ষার্থী, বৃদ্ধ-নারী, কৃষক-শ্রমজীবীসহ সব বয়সের হাজার হাজার মানুষ। কাদায় পিছলে পড়ে কাপড় নষ্ট হয় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। জুতা হাতে নিয়ে চলতে হয় পথচারীদের। আর এসব খানাখন্দের উপর দিয়ে চলাচলকারী ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, অটোরিকশা, বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেলসহ সকল যানবাহন চলাচলকারীরা পড়েন চরম বিপাকে। অনেক সময় দুর্ঘটনার শিকারও হতে হয় তাদের। আর খরায় ধুলো-বালিতে চলাচলের অনুপযোগী হয় রাস্তাগুলো।


তাদের অভিযোগ, দুর্ভোগ কমাতে প্রত্যেক বছরে তারা চাঁদা তুলে ভাঙা ইট, বালি, সুরকি, খোয়া ও রাবিশ ফেলে মেরামতের চেষ্টা করে থাকেন। এসব রাস্তা পাকাকরণের জন্য দফায় দফায় ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, স্থানীয় এমপি এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিকবার অনুরোধ জানালেও কোনও সুফল মেলেনি। দেশ স্বাধীনের পর দফায় দফায় ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে। কিন্তু ভাগ্যের উন্নয়ন হয়নি এই এলাকার মানুষের।

ওই এলাকার প্রবীণ হোমিও চিকিৎসক আব্দুর রউফ আক্ষেপ করে বলেন, আমরা শহরতলীর মানুষ, ১ কি.মি. পরেই পৌরসভা, আর ৩ কি.মি. পরেই জেলা শহর। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পার হচ্ছে অথচ তারও আগের এই রাস্তাটির আজও পাকা হলো না। এই রাস্তাটি দুটি ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষের সহজে যোগাযোগের একমাত্র রাস্তা। তিনি বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তাটির জন্য কয়েক দফায় সাবেক এমপি হুইপ মাহাবুব আরা বেগম গিনি ও তার প্রতিনিধিদের সাথে সাক্ষাৎ করা হয়েছে, তারা আশ্বস্ত করলেও শেষ পর্যন্ত কথা রাখেননি।

কলেজ শিক্ষক কামাল হোসেন বলেন, আমাদের এলাকার কোনো মানুষকে অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে নেওয়া জরুরি হলেও ভাঙা, মাটির রাস্তার কারণে কোনো যানবাহন পাওয়া যায় না। বিশেষ করে কোনো প্রসূতিকে হাসপাতালে নেওয়া জরুরি হলে চরম বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। শুধু মাটির রাস্তার কারণে এই এলাকায় কোনো যানবাহন আসতে চায় না।

পথচারী ও হরিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুন নাহার বলেন, এই রাস্তায় চলাচলে বর্ষায় তো কোনো যানবাহনই পাওয়া যায় না। খরার সময়েও রাস্তায় খানাখন্দের কারণে চালক যেতে চায় না। যদি কেউ যায়, তবে গুনতে হয় দ্বিগুণ ভাড়া। বাধ্য হয়ে হেঁটে চলতে গিয়ে বর্ষা-শুকনায় দুটোতেই ভোগান্তিতে পড়তে হয় আমাদের, রাস্তাটি পাকাকরণ অত্যন্ত জরুরি।

পশ্চিম রাধাকৃষ্ণপুর এলাকার কলেজপড়ুয়া জিতু বলেন, আমাদের কলেজে যাওয়ার একমাত্র রাস্তা এটি। নতুন মাটি ফেলায় এখন রাস্তায় প্রচণ্ড ধুলা পড়েছে। হেঁটে যাওয়ার সময় আমাদের জুতা, প্যান্ট একেবারেই মেখে যাচ্ছে। আর বর্ষায় সময় তো জুতা হাতে করে নিতে হয়। অনেকেই কাদায় পড়ে গিয়ে সেদিন আর স্কুল কিংবা কলেজে যেতে পারে না।

৮ নং বোয়ালী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম সাবু বার্তা২৪.কমকে বলেন, রাস্তাটি বোয়ালী ইউনিয়নের অতি পুরাতন এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি রাস্তা। রাস্তাটি পাকাকরণ অতি জরুরি। এসময় রাস্তা পাকাকরণে স্থানীয় সাংসদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

গাইবান্ধার স্থানীয় সরকার বিভাগের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী ছাবিউল ইসলাম মুঠোফোনে বার্তা২৪.কমকে বলেন, এরআগে আইডি অন্তর্ভুক্ত না থাকার কারণে ওই রাস্তাটির কাজ করা সম্ভব হয়নি। চলতি বছরেও জেলার এক হাজার ৬৬৪ কি.মি. সড়কের ১১'শ ৫৭টি রাস্তা নতুন আইডি অন্তর্ভুক্তিকরণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে বেশ কিছু রাস্তার আইডির অন্তর্ভুক্তও হয়েছে। রাস্তাগুলোতে কাজের চূড়ান্ত অনুমোদন হলে পাকাকরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর