প্রকাশ্যে চাঁদা দাবি, রাঙামাটিতে ১০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ বন্ধ

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, রাঙামাটি | 2024-05-25 14:14:25

পাহাড়ে আঞ্চলিক দলীয় সন্ত্রাসীদের বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম।

শুক্রবার বিকেলে খোদ রাঙামাটি পৌর শহরের আসামবস্তি এলাকায় সড়কের চলমান উন্নয়ন কাজে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে তারা।

এসময় কাজে নিযুক্ত থাকা শ্রমিকদের মারধর করে তাদের কাছে থাকা অন্তত ৬টি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে গেছে বলে শ্রমিকেরা অভিযোগ করেছেন।

ঘটনার সময় উন্নয়ন কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা এলজিইডি’র কার্য সহকারী রেজাউল করিম এ প্রতিবেদকের কাছে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করলেও কে বা কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছেন, সেটি নিয়ে বিস্তারিত জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

মাত্র কিছুদিন আগেও এই একই আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়কে জেএসএস-এর নামধারী অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে নির্মাণ-শ্রমিকদের কাছ থেকে নয়টি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে গেছে বলে নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্র নিশ্চিত করেছে। এই ঘটনার পর আসামবস্তি ব্রিজ সংস্কারের কাজ বন্ধ রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ।

রাঙামাটির সঙ্গে কাপ্তাইয়ের সংযোগ সড়ক যোগাযোগে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়কটি তৈরি করে এবং পর্যায়ক্রমে এই সড়কটিকে নানামুখী উন্নয়নের মাধ্যমে নয়নাভিরাম করে গড়ে তোলে।

ইতোমধ্যে এই সড়কটি অন্যতম প্রধান পর্যটন এলাকায় পরিণত হয়েছে। সড়কের উভয় পাশেই গড়ে উঠেছে বিভিন্ন পর্যটন স্পট।

প্রকাশ্যে চাঁদাবাজির কারণে রাঙামাটিতে উন্নয়ন কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে, ছবি- বার্তা২৪.কম

সম্প্রতি, এই সড়কে চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নে বাধা দিয়ে ঠিকাদারদের কাছে শতকোটি টাকা চাঁদা দাবি করেছে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা। চাঁদার দাবিতে গত দুই বছরে একাধিকবার গাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ চালকদের মারধর ও ঠিকাদারের লোকজনসহ বনবিভাগের লোকজনকেও আটকে রেখেছিল জেএসএস নামধারী অস্ত্রধারীরা।

সর্বশেষ, শুক্রবার বিকেলে আসামবস্তি ব্রিজের আধা কিলোমিটার পরেই কাপ্তাইমুখী সড়কের কাজ চলাকালীন অস্ত্রধারী পাঁচ যুবক অতর্কিতে হামলা চালিয়ে শ্রমিকদের এলোপাতাড়ি মারধর করে।

শ্রমিক মো. আকতার হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, আমরা প্রতিদিনের মতো সবাই মিলে কাজ করছিলাম। শুক্রবার বিকেল ৪টার সময় আকস্মিকভাবে ৫/৬ জন চাকমা যুবক দুটি রিভলবার হাতে নিয়ে এসে আমাদের এলোপাতাড়ি মারধর করতে থাকে। এসময় আমাকে, আমার সহকর্মী রুবেল, শামীম, আকাশ, রিপনসহ মিস্ত্রির আরো দুই সহযোগীর কাছ থেকে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে গেছে।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলে রাঙামাটির এলজিইডি’র দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কেউই সামনাসামনি কথা বলতে চাননি। তবে তারা নিরাপত্তার অভাববোধ করছেন জানিয়ে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বার্তা২৪.কমকে বলেন, আসামবস্তি সড়কে বর্তমানে ১০ কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন বন্ধ করে দিয়েছে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলজিইডি’র ওই কর্মকর্তা বলেন, এতদিন দুর্গম এলাকাগুলোতে ব্যাপক চাঁদাবাজি করলেও সম্প্রতি একেবারে রাঙামাটি শহরেই প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি শুরু করেছে।

এদিকে, সংশ্লিষ্ট কাজের ঠিকাদারেরা জানিয়েছেন, কাজ শুরুর আগেই উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের ৪টি গ্রুপকে ৫ পার্সেন্ট হারে চাঁদা দিয়েছেন। এরই মধ্যে একাধিকবার হামলা চালিয়ে চাঁদা নিয়েছে। বর্তমানে জেএসএস নামে একটি সংগঠন থেকে ১০ পার্সেন্ট করে চাঁদা দাবি করা হচ্ছে।

তিনি জানান, বিগত কয়েক বছর আগের সিডিউল রেটে কাজ নিয়ে ৪টি পাহাড়ি সংগঠনকে চাঁদা, অফিস খরচের পর আবার বর্তমান রেটে সরঞ্জাম কিনে কাজ বাস্তবায়ন করাটা চরম কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।

এমতাবস্থায় কাজ বন্ধ রাখার কোনো বিকল্প নেই বলেও জানান তারা।

অপরদিকে, সন্ত্রাসী হামলার ব্যাপারে কেউ কোনো ধরনের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেননি বলে জানিয়েছেন, রাঙামাটি কোতোয়ালি থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আলী।

তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছি আমি। কেউ যদি লিখিত অভিযোগ দেয়, তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর