আচমকা রোগীর চাপে অসুস্থ হাসপাতাল

খুলনা, জাতীয়

মানজারুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, খুলনা, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 05:54:38

আচমকা রোগীর চাপে অসুস্থ হয়ে পড়েছে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (খুমেক)। ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি রোগী ভর্তি হওয়ায় পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। রেকর্ড সংখ্যক রোগী ভর্তি হওয়ায় সেবা নিশ্চিতে হিমশিম খাচ্ছে খুমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

বৃহস্পতিবার (২৪ জানুয়ারি) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভর্তি হওয়া অসুস্থ রোগীরা চিকিৎসা প্রাপ্তির জন্য বেড বা ওয়ার্ডে জায়গা না পেয়ে বারান্দা, চলাচলের রাস্তা, দায়িত্বরত ডাক্তারদের চেম্বারের সামনে, লিফটের সামনে, বাথরুমের সামনে এমনকি সিঁড়ি ঘরেও আশ্রয় নিয়েছেন। হাসপাতালের ৩য় তলার সার্জারি বিভাগের ৯-১০-১১-১২ ওয়ার্ডে সব মিলিয়ে বেডের সংখ্যা মাত্র ৯১টি। ফাইল দেখে জানা গেলো এ বিভাগের ভর্তি হওয়া রোগী সংখ্যা তিন শতাধিক।

এছাড়া মেডিসিন বিভাগের ৫-৬-৭-৮ ওয়ার্ডে সব মিলিয়ে বেডের সংখ্যা মাত্র ৯০ টি। এ বিভাগের ভর্তি হওয়া রোগী সংখ্যা চার শতাধিক। এছাড়াও মেডিসিনের অন্যান্য বিভাগে রেকর্ড সংখ্যক রোগী ভর্তি হয়েছে।

জানা যায়, ভর্তি হওয়া রোগীরা হাসপাতাল থেকে খাবার পেয়ে থাকে। খুমেক হাসপাতালে গত ৩ দিনে আন্তঃবিভাগে ভর্তি রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৩০০ এর মতো। প্রতিদিনই নতুন ভর্তি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে খুমেকে। আর তাই এ বিপুল সংখ্যক রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও হাসপাতালের জনবল সংকট এখনও নিরসন হয়নি। পাঁচশ শয্যা বিশিষ্ট খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সবমিলিয়ে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন প্রায় ২ সহস্রাধিক রোগী। রেকর্ড সংখ্যক এ রোগীর চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন খোদ চিকিৎসকরা।

পাইকগাছা থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা হামিদ বারী বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'ওয়ার্ডে আর বেডে জায়গা না পাইয়া এহন বারান্দায় পাটি পাতছি। সারাদিন পাশ দিয়া সবাই হাঁটাচলা করে। ধুলায় দম নিতে পারি না। মাঝে মইধ্যে দেহি ৩ তালার উপর কুকুর উইঠা আসে। আর কোনো দরকার হইলেও নার্স বা ডাক্তার পাই না।'

খুমেকের রেজিস্ট্রার ডাঃ শাহীন বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করি, কিন্তু রোগীদেও এমন চাপ আগে কখনো দেখিনি। প্রতিদিন নতুন নতুন রোগী চিকিৎসা নিতে ভর্তি হচ্ছে। গত ৩ দিনের হিসেবে বোঝা যায় রোগীর চাপ আরও বাড়তে পারে।'

হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকের মেডিকেল অফিসার ডাঃ এস এম তুষার আলম বলেন, 'ছাত্র অবস্থায় এ কলেজেরই ছাত্র ছিলাম। এ হাসপাতালের সাথে ১৬-১৭ বছরের সম্পর্ক আমার, কিন্তু একসাথে এত রোগী কখনো দেখিনি। আমার ব্লাড ব্যাংকের বারান্দায়ও রোগী চলে এসেছে। রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসকরা।'

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ এটিএম মোর্শেদ বলেন, 'হঠাৎ করেই রোগীদের চাপ বেড়েছে। হাসপাতালে ৫শ’ বেডের জনবল না থাকলেও ৫শ’টি বেড রয়েছে। আর ৫শ’ বেডের বিপরীতে ভর্তি হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। ভর্তি হওয়া সকল রোগীই খাবার পাচ্ছে। প্রতিদিনই আগের তুলনায় রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এমন চাপে হাসপাতালের স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখা কষ্টসাধ্য। তবুও আমরা সবার চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি।'

এ সম্পর্কিত আরও খবর