পর পর স্পিডবোটে মিয়ানমারের গুলিবর্ষণ, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সেন্টমার্টিন

, জাতীয়

আবদু রশিদ মানিক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কক্সবাজার | 2024-06-11 16:40:11

দিন যতই গড়াচ্ছে ততই আতঙ্ক বাড়ছে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের মানুষের। আজ টেকনাফ থেকে জরুরি ভিত্তিতে সেন্টমার্টিন যাওয়ার পথে একটি রোগী বহনকারী স্পিড বোটকে লক্ষ্য করে মিয়ানমারের গুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে কোনো হতাহত হয়নি।

মঙ্গলবার (১১ জুন) সকাল ১০টার দিকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ থেকে সেন্টমার্টিন যাত্রাকালে নাফ নদীর মোহনায় নাইক্ষ্যংদিয়া পৌঁছলে এ ঘটনাটি ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে বোট মালিক সমিতির সেক্রেটারি ছৈয়দ আলম জানান, টেকনাফ থেকে চিকিৎসা শেষে সেন্টমার্টিন ফেরার পথে একটি স্পিডবোট লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। এর আগে মিয়ানমারের অভ্যন্তর থেকে গুলি ছুড়লেও আজ ছোট ডিঙি নৌকায় করে নদীতে নেমে গুলিবর্ষণ করে, এসময় স্পিড বোটে থাকা যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। পরে তারা সেন্টমার্টিনে নিরাপদে পৌঁছে। এরপর থেকে ভয়ে বোট চলাচল বন্ধ রেখেছে চালকরা।

এর আগে গত ৫ জুন সেন্টমার্টিন দ্বীপের স্থগিত নির্বাচন সম্পন্ন করে ফেরার পথে নাফনদীর মোহনায় নির্বাচনীয় কর্মকর্তাদের ট্রলার লক্ষ্য করে মিয়ানমার থেকে গুলি ছুঁড়ে। এসময় একটানা ২৫ থেকে ৩০ রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে। প্রাণে রক্ষা পান নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

পর পর দুইদিন আবারও একই ধরনের ঘটনা ঘটে। একের পর এক ট্রলার লক্ষ্য করে মিয়ানমার থেকে গুলি ছোঁড়া হচ্ছে। এরফলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে ট্রলার মালিক ও এই রুটের যাত্রী। যার কারণে গত ৭ জুন থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় ট্রলার ও স্পিডবোট চলাচল।

কোস্টগার্ড সূত্র জানায় "এরকম কয়েকটা গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে, তবে সেন্টমার্টিন রুটে ভাটার সময় ডুবো চর ভেসে ওঠায় ট্রলার এবং নৌকা মিয়ানমার সীমান্ত ঘেঁসে চলাচল করায় মিয়ানমার এর দিক থেকে গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে সেই গুলি আরাকান আর্মি নাকি মিয়ানমারের বিজিপি ছুড়েছে সে বিষয়ে নিশ্চিত নয় তারা।"

যোগাযোগ বন্ধ থাকায় খাদ্য সংকটে পড়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা। যেহেতু সাগরই একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম, তাই এখন সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে সেন্টমার্টিন দ্বীপের সাথে।

কারণ হিসেবে তারা বলছেন, সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফ যাতায়াতের জন্য তাদের একমাত্র মাধ্যম ট্রলার ও স্পিডবোট। কিন্তু গত ৪ দিন ধরে সব ধরনের সার্ভিস বন্ধ রয়েছে। এর ফলে দ্বীপের সাথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে টেকনাফের। শুধু মানুষ যাতায়াত নয়, যেতে পারছে না কোনো খাদ্যও। ঈদুল আজহা ঘনিয়ে আসায় উদ্বেগ আরো বাড়ছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে শীঘ্রই খাদ্য সংকটে পড়বে দ্বীপের মানুষ। সংকট মোকাবেলায় নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সহযোগিতা চান তারা।

এই দ্বীপে ১০ হাজার মানুষের বসবাস। খাদ্য গুদাম না থাকায় টেকনাফ থেকেই প্রতিনিয়ত সব ধরনের জিনিসপত্র নিয়ে যেতে হয়। তাই খাদ্য সংকটের আশঙ্কার বিষয়টি মাথায় রেখেই বিকল্প পথ খুঁজছে জেলা প্রশাসন। তবে এখনো কোন সমাধান বের হয়নি বলে জানান কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা মেজিস্ট্রেট ইয়ামিন হোসেন।

দীর্ঘসময় ধরে মিয়ানমারে দেশটির সরকারি বাহিনীর সাথে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সংঘাত চলছে। গত কিছুদিন ধরে টেকনাফ কক্সবাজার সীমান্ত এলাকাগুলো নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর। নাফনদীর সেন্টমার্টিন রুটে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মিই গুলি ছুঁড়ছে বলে দাবি বাংলাদেশ সীমান্তের স্থানীয়দের।

এ সম্পর্কিত আরও খবর