ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন কামাররা

, জাতীয়

মোস্তাফিজ মুরাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম,ফেনী | 2024-06-15 13:40:56

একদিন পরেই পবিত্র ঈদুল-আযহা। ঈদকে কেন্দ্র করে কোরবানির পশুর হাটের পাশাপাশি ক্রেতারা ভিড় জমাচ্ছেন ছুরি-বঁটির দোকানে। কেউ শান দেয়াতে ব্যস্ত কেউবা নতুন দা-ছুরি-বঁটি কিনে নিতে দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন। অন্যদিকে সারা বছর তেমন কাজ না থাকলেও কোরবানির মৌসুমে কয়েকগুণ ব্যস্ততা বেড়েছে কামারদের। ঈদকে সামনে রেখে হাতুড়ির টুং-টাং শব্দে ব্যস্ত সময় পার করছেন এই কামারশিল্পীরা।

শনিবার (১৫ জুন) ফেনী শহরের বড় বাজার, রাজাঝীর দিঘীর পাড়, পাঁচগাছিয়া, বিভিন্ন কামারশালসহ রাস্তার পাশে বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ ছুরি-বঁটির দোকানে গিয়ে দেখা যায়, ঈদকে কেন্দ্র করে পশু কোরবানির জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের চাহিদার সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে দাম।

পাশাপাশি জমে উঠেছে গরু, ছাগল, মহিষসহ অন্যান্য কোরবানির পশু কাটাকাটির কাজে ব্যবহার করা দা-বঁটি, ছুরি-চাপাতিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি ও মেরামতের কাজ। কয়লার চুলায় দগদগে আগুনে গরম লোহার পিটাপিটিতে টুং-টাং শব্দে মুখর হয়ে উঠেছে কামারশালাগুলো। ঈদের চাহিদা পূরণ করতে নতুনের পাশাপাশি আবার পুরনো সরঞ্জামের শানের কাজও চলছে। কাকডাকা ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে তাদের এই ব্যস্ত কর্মযজ্ঞ।

বিক্রেতা ও কামাররা জানান, এ বছর ঈদকে ঘিরে পশু কোরবানির ছুরি আকার ও মান ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ১৫০০ টাকায়, যা গত বছর ছিল ৩০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে। পশুর চামড়া ছাড়ানোর কাজে ব্যবহৃত ছুরি একেকটি আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। গত বছর এগুলোর দাম ছিল ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। অন্যদিকে ভালো মানের বঁটি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ১২০০ টাকায়, যেগুলো গত বছর ৫০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া ওজন অনুযায়ী প্রতি পিস চাপাতি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ১৫০০ টাকায়, যা গত বছর ছিল ৭০০ থেকে ১৩০০ টাকা।


এছাড়া কুরবানির পশুর হাড় ও মাংস কাটাকাটি করার জন্য পাটি তথা চাটাই ব্যবহার করে থাকেন অনেকে। এ ধরনের গাছের গুঁড়ি ও পাটির বিক্রিও বেড়েছে অনেক হারে। ছোট আকারের গাছের গুঁড়ি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৪০০ টাকায়। মাঝারি আকারের গুঁড়ি ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা ও বড় আকারের গুঁড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকায়। এ ছাড়া চাটাই আকার ও মানভেদে প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ২০০ টাকায়।

বিক্রেতারা জানান, কোরবানির ঈদ আমাদের জন্য বড় সুযোগ। এ সময়ে বিক্রি ভালো হয়, তাই আমরা বছরের এই সময়টার জন্য প্রস্তুতি নিই। সকল পণ্যের দাম অতিরিক্ত হারে বেড়েছে যার কারণে অতিরিক্ত দামে কিনে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। লোহা, কয়লা দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণেই এসব পণ্যের দাম বেড়েছে। এ নিয়ে সরবরাহকারীরা জানান, চাহিদা বৃদ্ধির কারণে তাদের অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছে এবং শ্রমিক সংকট এবং শ্রমিকের মজুরিও বেড়েছে যার ফলে দামের উপর এই প্রভাব পড়ছে।

আকবর আলী নামে এক বিক্রেতা বলেন, কোরবান ঈদে ছুরি, দা-বঁটিসহ অন্যান্য সরঞ্জামগুলোর চাহিদা অনেক থাকে যার কারণে এ সময়টাতে অন্য সময়ের তুলনায় ভালোই বিক্রি হয়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কারণে এসব সরঞ্জামেরও দাম অনেকাংশেই বেড়েছে। তাও ক্রেতারা তাদের প্রয়োজনে কিনছেন। আমরা কম দামে কিনতে পারলে ক্রেতাদের কাছেও কম দামে বিক্রি করতে পারতাম বলে জানিয়েছেন এই বিক্রেতা।

অনিক দাস নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে বিক্রি ও ব্যস্ততা দুটোই বেড়েছে। ক্রেতারাও খুশিমনে তাদের চাহিদানুযায়ী দা-ছুরিসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি কিনছেন। আগের বছরের তুলনায় প্রত্যেকটা সরঞ্জামের উপর ৩০-৪০ টাকা করে বেড়েছে। কামাররা ঠিকমতো কয়লা পাচ্ছে না যার কারণে কয়লা সংগ্রহ করতে হচ্ছে বাড়তি দামে। লোহার দাম ও শ্রমিকের মজুরিও বাড়াতে বাড়তি দাম গুণতে হচ্ছে।

ক্রেতারা বলছেন, চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বিক্রেতারা দাম বাড়িয়ে দেয়। তারা জানে এখন ক্রেতাদের চাহিদা রয়েছে। দাম বাড়লেও তারা কিনতে বাধ্য। অনেক ক্রেতা বলছেন, সকল পণ্যের দাম ঊর্ধ্বগতি কারণে লোহা, কয়লা ও শ্রমিকের মজুরিও বেড়েছে যার কারনে দাম বাড়তে পারে।

ওসমান গণি নামের এক ক্রেতা বলেন, গত বছর যে চুরি ৩০০ টাকায় কিনেছিলাম, এই বছর তা কিনতে ৪০০ টাকা লাগছে। দাম বাড়লেও প্রয়োজনের কারণেই কিনতে হচ্ছে।

রুবেল নামের আরেক ক্রেতা বলেন, কোরবানির জন্য দা, ছুরি, বঁটি, চাপাতি এসব সরঞ্জামগুলো গুরুত্বপূর্ণ যার কারণে বিক্রেতারা জানে মানুষের চাহিদা রয়েছে দাম বাড়ালেও তারা কিনবে। এদিকে ক্রেতারা বাড়তি দাম কিনে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। মাঝারি সাইজের ৪ টা ছুরি কিনেছি যার দাম পড়েছে ১২০০ টাকা যা ৩০০-৪০০ টাকা বাড়তি দাম দিয়ে কিনতে হয়েছে।

এদিকে একাধিক কামারির সাথে কথা বলে জানা যায়, বছরের অন্য সময়গুলোর তুলনায় কোরবানির ঈদে তাদের ব্যস্ততা অনেকাংশে বাড়ে। বিশেষ করে কোরবানির এক সপ্তাহ আগে এই ব্যস্ততা বাড়ে। তারা জানায়, বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, কয়লার সংকট ও দামবৃদ্ধি, লোহার দামবৃদ্ধি, শ্রমিক সংকট এবং আধুনিকায়নের ফলে বিলুপ্তির পথে যেতে চলেছে এই কামার শিল্প। তাও কোরবানি এই সময়টাতে আয় একটু বাড়ে, যা দিয়ে পুরো বছর কোনোমতে চলে যায়।

কামারি রাহুল দাস জানায়, ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে আমাদের প্রচুর ব্যস্ততা বাড়ে। ক্রেতারা কেউ দা-ছুরি, বঁটি তৈরি করার জন্য অর্ডার দিতে আসে আবার অনেক ক্রেতা আসে পুরাতন দা-চুরিতে শান দিতে। সব মিলিয়ে অন্য সময়ের তুলনায় ঈদের সময়টাতে বেশ ব্যস্ত সময় কাটে আমাদের।

ছুরি ও বঁটিতে শান দিতে আসা রফিকুল ইসলাম বলেন, আগের বছরের কোরবানিতে ব্যবহার করা ছুরি ও বঁটি শান দিতে এসেছি। এ বছর এসব সরঞ্জামের দাম অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে যার কারণে পুরতানগুলো শান দিয়ে ব্যবহার করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

বানাতে দেয়া বঁটি নিতে আসা মরিয়ম আক্তার জানায়, কোরবানি পশুর মাংস টুকরা করার জন্য বঁটির প্রয়োজন হয়। যার কারণে ঈদের এক সপ্তাহ আগে অর্ডার দিয়ে গেছি যা আজকে তৈরি করে দিয়েছে। বঁটি তৈরি করতে ৭০০ টাকার মতো খরচ হয়েছে বলে জানায় তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর