ফেনীর হাসানপুর বাঁকে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে মৃত্যু

, জাতীয়

মোস্তাফিজ মুরাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফেনী | 2024-06-27 12:41:36

ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়কে ২৬ কিলোমিটার ছোট-বড় ২০টি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে। এরমধ্যে ফুলগাজীর আনন্দপুরের হাসানপুর এলাকায় ইংরেজি ‘এস’ আকৃতির বাঁকটি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ও দুর্ঘটনাপ্রবণ।

এ স্থানে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটায় গত বছর সড়কটি প্রশস্ত করে ফেনী সড়ক বিভাগ। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়ক প্রশস্ত করা হলেও অদক্ষ ও অপ্রাপ্তবয়স্ক সিএনজি অটোরিকশা চালকের বেপরোয়া গতির কারণে এ স্থানে দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে।

মঙ্গলবার (২৫ জুন) রাতে ফুলগাজী থেকে ফেনীমুখী একটি যাত্রীবাহী সিএনজি অটোরিকশার সঙ্গে একটি স্ক্যাভেটর বহনকারী লরির মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। এতে সিএনজির যাত্রী এক সবজি ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, নিহত ওই ব্যবসায়ী ফেনী শহরতলীর লালপোল সিলোনীয়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি দাউদপুর সবজি আড়তে ব্যবসা করতেন। বকেয়া টাকা আদায় করে ফেনী ফেরার পথে হাসানপুর মোড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি।

শুধু ওই ব্যবসায়ী নন। এ স্থানটিতে সড়ক দুর্ঘটনায় আরও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন চালক কিংবা যাত্রীরা।

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুয়ায়ী, এ বাঁকে ২০১৮ সালের ২ সেপ্টেম্বর ছাগলনাইয়া উপজেলায় কর্মরত খাদ্য কর্মকর্তা মুন্সীরহাটের বাসিন্দা মো. রাসেল চৌধুরী ফেনী যাওয়ার পথে ওই মোড়ে দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হন। কয়েকদিন রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর মারা যান সরকারি ওই কর্মকর্তা।

একই স্থানে স্থানটিতে ২০১৯ সালের ২৮ এপ্রিল সকালে ঢাকা যাওয়ার পথে দক্ষিণ আনন্দপুরের বাসিন্দা খোরশেদ আলম (৪৫) সিএনজি দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলে নিহত হন। একই সময়ে পরশুরামের বাউরপাথর এলাকার বাসিন্দা হতদরিদ্র সিএনজি চালক ছালেহ আহমদ (৩১) দুর্ঘটনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রামে মারা যান।

এছাড়াও বুধবার (২৬ জুন) দুপুরে ফেনী অভিমুখী একটি যাত্রীবাহী সিএনজি আনন্দপুর বাজারের দক্ষিণে স'মিলের কাছাকাছি পৌছঁলে সড়কের পাশে একটি গাছ সিএনজির ওপরে ভেঙে পড়ে। এসময় সিএনজির ভেতরে থাকা দুই নারী গুরুতর আহত হলে স্থানীয়রা উদ্ধার করে ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।

এ ব্যাপারে কয়েকজন অভিজ্ঞ সিএনজি অটোচালকের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, অপ্রাপ্তবয়স্ক ও অদক্ষ চালকের বেপরোয়া গতির কারণে এসব দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। এতে চালকরাও যেমন প্রাণ হারাচ্ছে, পঙ্গু হচ্ছে তেমনি যাত্রীরা মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছে।

স্থানীয়রা বলছেন, বন্দুয়া দৌলতপুরের উত্তরে ইটভাটা সংলগ্ন ব্রিজ থেকে সড়কটিকে সোজা করা হলে দুর্ঘটনার শঙ্কা থাকতো না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি তারা দুর্ঘটনা কমাতে সড়কটি সোজা করার দাবি জানান।

মোর্শেদ নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, প্রতিনিয়ত এখানে দুর্ঘটনার সংবাদ শুনতে পাই। পরশুরাম, ফুলগাজীর মানুষ জেলা শহরে প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে আসা যাওয়া করে। আঞ্চলিক সড়ক হলেও এ সড়কটি দুর্ঘটনা প্রবণ। চালকদের বেপরোয়া গতি রোধের পাশাপাশি দক্ষ চালক নিশ্চিত করতে পারলে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমে আসবে।

নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতকরণে চালকদের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন ফেনী সড়ক ও জনপদ (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী বিনয় কুমার পাল।

সম্প্রতি ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়কের আনন্দপুর এলাকায় সিএনজি পরিবহনে দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সচেতনতার অভাবে প্রতিনিয়ত সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে। আর এতে অকালে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ।

নির্বাহী প্রকৌশলী নিজেও সিএনজি অটোর যাত্রী উল্লেখ করে বলেন, এসব দুর্ঘটনা পেছনে যেমন চালকরা দায়ী, একইভাবে পথচারীরাও দায়ী। তাই সড়ক দুর্ঘটনা রোধে চালক এবং পথচারী উভয়কে আরও সচেতন হতে হবে। এ সড়কটিকে প্রশস্তকরণের জন্য একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ে সড়কটি প্রশস্তকরণের কাজ শুরু করা হবে বলে জানান নির্বাহী প্রকৌশলী।

স্থানীয়রা বলছেন, সড়ক পথচারীবান্ধব করা, যত্রতত্র যানবাহন পার্কিং না করা, অসচেতনভাবে রাস্তা পারাপার না হওয়া, রাস্তা পারাপার অবস্থায় মোবাইল ফোন ব্যবহার না করা, ট্রাফিক নির্দেশনা মেনে চললে দুর্ঘটনার শঙ্কা কমবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর