এক চেয়ারের দখল নিয়ে মুখোমুখি দুই বন্ধু

, জাতীয়

মশাহিদ আলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট | 2024-06-28 15:47:25

রফিক মিয়া ও ফজর আলী। দীর্ঘদিন ধরে তারা ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি তাদের বন্ধুত্বের মধ্যে ফাটল দেখা দেয়। ফাটলটা ধরে পৌর মেয়রকে কেন্দ্র করে। এবার সেই ফাটলটি গভীর হচ্ছে। এক চেয়ারে বসা নিয়ে মুখোমুখি দুই হচ্ছেন দুই বন্ধু। এমনই ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে সিলেটের বিশ্বনাথ পৌরসভায়। বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়রের পদ থেকে মুহিবুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্তের পর প্রশাসনিক ও দাপ্তরিক কাজের সুবিধার্থে দায়িত্ব গ্রহণ নিয়ে তাদের মধ্যে চলছে তুমুল লড়াই।

তারা দুজন হলেন-৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রফিক মিয়া ওরফে রফিক হাসান ও ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফজর আলী।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বিশ্বনাথ পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মো.আব্দুর রহমান স্বাক্ষরিত পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপনে মেয়রকে পদ থেকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ জারি করেন। আদেশের একটি কলামে বলা হয় পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ কে প্রশাসনিক ও দাপ্তরিক কাজের সুবিধার্থে পৌরসভার মেয়রের আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ করা হলো।

আর এই আদেশ জারি হতে না হতেই মেয়রের দায়িত্ব পালন করা নিয়ে প্যানেল মেয়র-১ দাবি করে তুমুল লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন কাউন্সিলর রফিক মিয়া ও কাউন্সিলর ফজর আলী। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্যানেল মেয়র-১ হিসেবে মেয়রের দায়িত্ব চালাবেন বলে পৌর শহরে আনন্দ মিছিল করেন রফিক মিয়াসহ ৭ জন কাউন্সিলরদের সমর্থকরা।

আর রাত ৯ টায় প্যানেল মেয়র-১ দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফজর আলী। মূলত তারা ছিলেন একে অপরের ঘনিষ্ট বন্ধু। কিন্তু সম্প্রতি ৬ জন কাউন্সিলরকে সাথে নিয়ে বরখাস্ত হওয়া মেয়রের সাথে কাউন্সিলর রফিক আলীর দূরত্বের সৃষ্টি হলেও ফজর আলী রয়েছেন মুহিবুর রহমানের পক্ষে।

খোঁজ নিয়ে যায়, বিশ্বনাথ পৌরসভা নির্বাচন ২০২২ সালের ২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ওই বছরের ২২ ডিসেম্বর পৌরসভার প্যানেল মেয়র নির্বাচনের লক্ষে এক বিশেষ সাধারণ সভা পৌরসভা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মেয়র মুহিবুর রহমানের সভাপতিত্বে সর্বসস্মতিক্রমে ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রফিক মিয়াকে প্রথম প্যানেল মেয়র হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। তার সাথে পৌরসভার ১নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর সাবিনা ইয়াসমিনকে দ্বিতীয় প্যানেল মেয়র এবং ৩নং সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ সুমনকে তৃতীয় প্যানেল মেয়র নির্বাচিত করা হয়।

তবে সংবাদ সম্মেলনে ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফজর আলী মেয়রকে বরখাস্তের নিন্দা জানিয়ে বলেন, প্রায় ৩ মাস পূর্বে পৌরসভায় একটি মিটিংয়ের মাধ্যমে কাউন্সিলর রফিক আলীকে বাদ দিয়ে আমাকে প্যানেল মেয়র-১ করা হয়েছে। তাই যদি প্রশাসনিক বা আইনের জটিলতা না থাকে তাহলে রোববার থেকে পৌরসভার অফিসে বসে আমি মেয়রের দায়িত্ব পালন করবো। কিন্তু কাউন্সিলর রফিক আলী মামলার আসামি হয়ে মেয়রের দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। রফিক আলী মামলার আসামি হয়ে বিভিন্ন দফতরে অনায়াশে চলাফেরা করলেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে না। আর আমি এবং মেয়র মামলার আসামি হয়ে আইনকে শ্রদ্ধা করে আদালত থেকে জামিনে আছি। তিনি কাউন্সিলর রফিক আলীকে গ্রেফতারের জন্য জোর দাবি করেন।

এব্যাপারে বিশ্বনাথ পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রফিক মিয়া বলেন, নতুন পরিষদ গঠনের পরপর পৌরসভার প্রথম সভায় আমাকে প্যানেল মেয়র নির্বাচিত করা হয়। মেয়র যখন দুই বিদেশ যান তখন আমি ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্বও পালন করেছি। যখন আমরা মেয়রের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব দিয়েছি তখন মেয়রসহ ওই কাউন্সিলর তাদের মতো করে রেজুলেশন করে কাগজ সৃষ্টি করেছে। যেখানে আমাদের স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে।

তিনি বলেন, অনাস্থা প্রস্থাবে মেয়রের বিরুদ্ধে আমাদের উপস্থিত স্বাক্ষর নিয়ে বিভিন্নতা লেখালেখি করেছেন ও রেজুলেশন কপি না দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। যা ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। কোনো কিছু না বুঝে, না জেনে কাউন্সিলর ফজর আলী ফিতনা সৃষ্টি করার জন্য এসব করছেন।

এদিকে, প্যানেল মেয়র-১ দাবিদার হয়ে মেয়রের দায়িত্ব পালন নিয়ে আগামী রোববার উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এব্যাপারে বিশ্বনাথ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) রমা প্রসাদ চক্রবর্তী বলেন, সংঘর্ষের কোনো আশঙ্কা নেই। কেউ যদি কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমান সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার ও প্যানেল মেয়র-১ মেয়রের দায়িত্ব পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনা আক্তার বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে দুটি বিষয়ের দুটি পৃথক প্রজ্ঞাপন পেয়েছি।

উল্লেখ্য, গত ১৬ এপ্রিল বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবরে অনাস্থা প্রস্তাব দাখিল করেন ৭ কাউন্সিলর।

অনাস্থা প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেন পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ রফিক মিয়া, প্যানেল মেয়র-২ সাবিনা বেগম, ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাজুক মিয়া রাজ্জাক, ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহুর আলী, ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শামীম আহমদ, ২নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাসনা বেগম ও ৩নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর লাকী বেগম।

অনাস্থ প্রস্তাব প্রেরণের পরপরই দুইভাগে বিভক্ত হন কাউন্সিলররা।প্যানেল মেয়র রফিক মিয়াসহ ৭ কাউন্সিলর এক পক্ষে ও মেয়র মুহিবের পক্ষ নেন ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফজর আলী, ৬নং ওয়ার্ডের বারাম উদ্দিন, ও ৪নং ওয়ার্ডের মুহিবুর রহমান বাচ্চু।

এ সম্পর্কিত আরও খবর