রাজশাহীতে পদ্মার পানিতে তলিয়ে গেছে শত শত বিঘা জমির ফসল



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী
পদ্মার পানিতে তলিয়ে গেছে বাদাম

পদ্মার পানিতে তলিয়ে গেছে বাদাম

  • Font increase
  • Font Decrease

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মা নদীর চকরাজাপুর ইউনিয়নের ১৫টি চরে বসবাসকারী প্রায় ৩ হাজার পরিবার এখন পানিবন্দি। শত শত বিঘা জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।

মঙ্গলবার (২ জুলাই) মানিকের চরে বাদাম রক্ষার চেষ্টা করছেন বাবুল শেখসহ অন্যান্য চাষিরা।

এই চরে শতাধিক পরিবার বাস করে, যারা এখনও পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এই পরিস্থিতি আরও ১৪টি চরের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এদের প্রধান জীবিকা কৃষি কাজ, কিন্তু চারদিকে এখন শুধুই পানি। জমির ফসল সব পানির নিচে। এরই মধ্যে বাবুল শেখ তার পানিতে তলিয়ে যাওয়া বাদাম রক্ষার জন্য চেষ্টা করছেন।

পদ্মার ১৫টি চরে প্রায় ২০ হাজার মানুষ বাস করে। চরের অধিকাংশ পরিবারই অন্যের জমি বার্ষিক ভাড়া নিয়ে বসবাস করে।

স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা পরিস্থিতি মনিটর করছে এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে, বন্যার পানির কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, যা সাহায্য কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করছে। ত্রাণ কার্যক্রম চালানোর জন্য তারা আরও নৌকার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছে।

এদিকে, বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চরের মানুষদের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। অনেক পরিবার তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। শিশু এবং বৃদ্ধদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে গেছে। তাদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য এবং বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে।

চরের মানুষরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে তাদের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে যাবে। সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত সহায়তা চান তারা। এখন তাদের জীবনের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো খাদ্য এবং নিরাপদ পানির যোগান নিশ্চিত করা। স্থানীয় প্রশাসন এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা একসাথে কাজ করে তাদের সাহায্য করার চেষ্টা করছে। পদ্মার চরের মানুষের অবস্থা খুবই নাজুক। তাদের জীবনযাত্রা পুনরুদ্ধার করতে সরকার এবং বিভিন্ন সংগঠনের আরও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।

বাদাম চাষিরা বলছেন, ‘এই বন্যার কারণে তাদের সমস্ত ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। মূলত তারা কৃষির ওপর নির্ভরশীল, এবং এটি তাদের প্রধান আয়ের উৎস। এখন সমস্ত জমির ফসল বিনষ্ট হয়ে গেছে। তাদের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে। তারা খুবই দুর্বিষহ পরিস্থিতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। এই অবস্থায় আমাদের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বন্যার কারণে তাদের পরিবার চরম কষ্টের মধ্যে রয়েছে। বন্যার পানি দ্রুত হ্রাস না হলে অবস্থা আরও খারাপ হবে।

বাদাম চাষি বাবুল শেখ বলেন, মানিকের চরে ৬ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছিলাম। এরমধ্যে তিন বিঘার বাদাম উঠাতে পারলেও আরো তিন বিঘার বাদাম উঠানোর আগে পদ্মায় পানি চলে এসেছে। এগুলো উঠানোর চেষ্টা করছি। এর আগে শ্রমিকের খুব সংকটে রয়েছি। পানির কারণে আমাদের ফসল সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমাদের আয়ের প্রধান উৎস হলো কৃষি, কিন্তু এখন সবকিছু পানির নিচে। আমরা খুব কষ্টে আছি। এদিকে রাসেল ভাইপারের ভয়ে শ্রমিকরা কাজ করতে চায়নি। ফলে বেকায়দায় পড়তে হয়েছে। তবে তিন বিঘা জমির বাদাম এখনও পানির নিচে তলিয়ে আছে।

এই চরের আজগর আলী বলেন, আমি, আমার স্ত্রী এবং দুই ছেলে মিলে অন্যের কাছ থেকে জমি ভাড়া নিয়ে দুটি ঘর তৈরি করে বসবাস করছি। তবে পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে আমরা চরম বিপদে আছি। আমাদের ছাগল ও গরুর জন্য কোন জায়গা নেই। বর্তমানে কৃষি কাজও বন্ধ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের জীবিকা নির্বাহ করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। আমি মাঝে মাঝে জাল দিয়ে মাছ ধরার চেষ্টা করি এবং তা বিক্রি করে কিছু টাকা উপার্জন করি। কিন্তু এই সামান্য আয় দিয়ে আমাদের সংসার চালানো খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। আমাদের জীবনযাত্রা এখন চরম বিপর্যস্ত। আমরা জানি না কিভাবে এই পরিস্থিতি সামাল দেব। আমাদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে সরকারের সহায়তা এবং সাহায্য।

চকরাজাপুর ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর জালাল উদ্দিন বলেন, পদ্মার চরের মধ্যে মানিকেরচর দিয়ারকাদিরপুর, টিকটিকিপাড়াচরসহ চকরাজাপুর ও কালিদাসখালির কিছু অংশ নিয়ে চকরাজাপুর ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ড গঠিত। এই ওয়ার্ডে পরিবার রয়েছে তিন শতাধিক। ভোটার রয়েছে এক হাজার ৩৫ জন। চরের অধিকাংশ জমি নিচু ও ফসলি। জমিতে রোপন করা বাদাম ও পাটের ব্যাপক ক্ষতি হবে। অধিকাংশ জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।

চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আজিযুল আযম বলেন, পদ্মার চরে প্রায় ৩ হাজার পরিবার রয়েছে। তারা এখন পানিন্দি রয়েছে। চরের অধিকাংশ বাড়ির পাশে পানি এসেছে। ৪৭৩ হেক্টর জমির মধ্যে অর্ধেক বাদাম উঠাতে পারেনি চাষিরা। সেই বাদাম পানিতে তলিয়ে গেছে। এরমধ্যে অনেকেই পানির নিচে ডুব দিয়ে বাদাম উঠাচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, "কিছু বাদাম চাষিরা জমি থেকে উঠাতে পারেনি কারণ তাদের জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে কিছু পাটের আবাদ বেঁচে রয়েছে। বাদামের চাষ হয়েছে ৪৭৩ হেক্টর এবং পাটের আবাদ হয়েছে ৪,৭৮০ হেক্টর। এই অবস্থার পরিস্থিতিতে বাদাম চাষিরা অত্যন্ত দুর্বল অবস্থায় রয়েছেন এবং তাদের জীবিকা প্রভাবিত হয়েছে।

নওগাঁয় বসতবাড়িতে আগুন, ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
ফায়ার সার্ভিসের টিম আগুণ নিভানোর চেষ্টা চালাচ্ছে/ছবি: বার্তা২৪.কম

ফায়ার সার্ভিসের টিম আগুণ নিভানোর চেষ্টা চালাচ্ছে/ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নওগাঁর সদর উপজেলার আরজি নওগাঁ চক দৌলত চুনাতা পাড়ায় একটি বসতবাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটের দিকে এ ঘটনা ঘটে। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে এ আগুনের সূত্রপাত হয় বলে জানা গেছে।

এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আনুমানিক কয়েক লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে ২০০ মণ ধান, ৩০ মণ গম, ১ টি ছাগল, স্বর্ণসহ নগদ টাকা পুঁড়ে ছাই হয়েছে।

নওগাঁ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের টিম লিডার কাশেম বার্তা২৪.কম-ক বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আমাদের টিম এসেছে এবং আগুন নিয়ন্ত্রনে এনেছে। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে এ আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে।

;

চট্টগ্রামে অনিয়মের অভিযোগে আবারও বন্ধ সেন্ট্রাল সিটি হাসপাতাল



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশে প্রবর্তক মো‌ড় এলাকায় অব‌স্থিত সেন্ট্রাল সিটি হাসপাতাল আগামী ৮ জুলাই থেকে বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

নানা অনিয়মের অভিযোগে বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াছ চৌধুরী স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এর আগে বুধবার (৩ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান সিভিল সার্জন বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে হাসপাতালটি সাময়িক বন্ধের নির্দেশনা দেন।

সি‌ভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ই‌লিয়াছ চৌধুরী বলেন, এর আগেও হাসপাতালটির নানা অনিয়ম পাওয়া যায়। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিঠির প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আগামী ৮ জুলাই থেকে প্রতিষ্ঠানটি সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে। পাশাপাশি এ হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের অন্য হাসপাতালে রেফারের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

এর আগে, চলতি বছরের ৪ মার্চ এ হাসপাতালে সি‌ভিল সার্জন মোহাম্মদ ই‌লিয়াছ চৌধুরীর নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে একই অভিযোগে এটির কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।

সেসময় সি‌ভিল সার্জন মোহাম্মদ ই‌লিয়াছ চৌধুরী জানিয়েছিলেন, নিয়ম অনুযায়ী যে প‌রিমাণ ডাক্তার থাকার কথা সে প‌রিমাণ ডাক্তারের উপ‌স্থি‌তি আমরা দেখতে পাই‌নি। তাদের ল্যাবেও অযোগ্য লোক কাজ করছে। পর্যাপ্ত প‌রিমাণ নার্স নেই। এসব অ‌ভিযোগে সেন্ট্রাল সি‌টি হাসপাতাল নামে এক হাসপাতাল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আমাদের অ‌ভিযান অব্যাহত থাকবে।

;

বসন্তপুর নদীবন্দর দ্রুত চালুর আশ্বাস নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীর



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
বসন্তপুর নদীবন্দর দ্রুত চালুর আশ্বাস নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীর

বসন্তপুর নদীবন্দর দ্রুত চালুর আশ্বাস নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীর

  • Font increase
  • Font Decrease

সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের বসন্তপুর নদীবন্দর দ্রুত চালুর আশ্বাস দিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

বৃহস্পতিবার (০৪ জুলাই) বিকালে বসন্তপুর নদীবন্দর পরিদর্শন শেষে সন্ধ্যায় এক সুধি সমাবেশে অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এই আশ্বাস দেন।

বসন্তপুর রিভার ড্রাইভ ইকো পার্কে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা কথা দিলে কথা রাখেন। তিনি যেহেতু বসন্তপুর নদীবন্দর উদ্বোধন করেছেন, তার মানে এটা হয়ে গেছে। এজন্য ভারতের সাথে কথা ও কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন এবং অচিরেই বসন্তপুর নদীবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প শুরু হবে। এই জনপদের বেড়িবাঁধ সংস্কার, সুপেয় পানিসহ জনকল্যাণমুখী কাজ এগিয়ে যাবে দুর্বার গতিতে।

প্রধানমন্ত্রী দেশের কল্যাণে দুই দুইবার ভারত সফর করেছেন উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরে ট্রেন, বিমান ও নৌ চলাচলের নানা বিষয়ে কথা হয়েছে, পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

ভারত যুদ্ধকালীন সময়ে আমাদের সহযোগিতা করেছিলে, একারণেই আমাদের বন্ধুত্ব অটুট রাখতে চাই উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাই বলে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিলিয়ে দিয়ে নয়। বরং জামায়াত-বিএনপিই দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে খেলা করে। তাদেরকে প্রতিহত করতে হবে। শেখ হাসিনা যখন আছেন, বাংলাদেশের মাটি মানুষের উন্নয়ন ও উৎপাদন চলমান থাকবে।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংসদ সদস্য এসএম আতাউল হক দোলন।

অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, সাতক্ষীরা-৩ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. আফম রুহুল হক, সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য ফিরোজ আহমেদ স্বপন, সংসদ সদস্য আশরাফুজ্জামান আশু, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য সেজুতি পারভীন লায়লা, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য একেএম ফজলুল হক, সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, কালিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ মেহেদী হাসান সুমন, জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের বসন্তপুর নদীবন্দর বিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক এজাজ আহমেদ স্বপন, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শেখ ইকবাল আলম বাবলু, ইউনিয়ন আ. লীগের সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফুল হোসেন খোকন প্রমুখ।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কালিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হোসেন ছোট।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির, পুলিশ সুপার মতিউর রহমান সিদ্দিকী প্রমুখ।

;

ফুলে-ফেঁপে উঠেছে তিস্তা, রংপুরে ৫ হাজার পরিবার পানি বন্দি



আমিনুল ইসলাম জুয়েল,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম, রংপুর
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও ভারি বর্ষণে তিস্তায় পানি বৃদ্ধিতে কয়েক দিনের ব্যবধানে ফের বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে রংপুরের ৩টি উপজেলায় প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। অনেক বাড়ি ঘর ছেড়ে গবাদি পশুসহ উঁচু স্থানে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে। বর্তমানে পরিবারগুলোর মাঝে খাদ্যসহ বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। সেই সাথে দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙন।

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) উপজেলার মর্ণেয়া ইউনিয়নের তালপট্টি, আলফাজ টারী, নরশিং, হরিণ চরা কোলকোন্দ ইউনিয়নের চর মটুকপুর, চর ছিলাখাল, মধ্য চিলাখাল, লক্ষ্মিটারী ইউনিয়নের চর ইচলি, পশ্চিম ইচলি, চল্লিশসাল ও নোহালী ইউনিয়নের বাগডহরা, মিনার বাজার এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বানভাসি ও বন্যায় ঘর-বাড়ি ভেঙে যাওয়া পরিবারগুলোর দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। গবাদিপশু-পাখি সঙ্গে নিয়ে ঠাঁই নিয়েছেন রাস্তার ধারে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ ও বিভিন্ন খোলা স্থানে। ভাঙন হুমকিতে থাকায় আগে-ভাগেই অনেক পরিবার তাদের বাড়ি-ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে টিউবওয়েল, রান্নার চুলা, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট। পানিবন্দি পরিবারগুলো দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। এ ছাড়া পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়েছে বাদাম খেত ও আমন ধানের বীজতলাসহ বিভিন্ন শাকসবজির খেত।

চরাঞ্চলগুলো প্লাবিত হওয়ায় তলিয়ে গেছে গ্রামীণ রাস্তাঘাট। মর্ণেয়া ইউনিয়নের আলফাছটারী এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদী ভাঙনে গত চারদিনে ওই এলাকায় অন্তত অর্ধশত পরিবারের ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে। চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে পানিবন্দি পরিবারগুলোর। ভাঙন আতঙ্কে অনেকে বাড়িঘর-আসবাবপত্র সরিয়ে নিচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, এবার গঙ্গাচড়ায় তিস্তায় বিলীন হয়েছে শতাধিক পরিবারের ঘর-বাড়ি। কয়েকদিনের ভারি বৃষ্টি আর ভারতের সিকিম থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফুলে-ফেঁপে উঠেছে তিস্তা নদী। এতে রংপুরের গঙ্গাচড়ার চারটি ইউনিয়নের প্রায় ১০০টি পরিবারের ঘর-বাড়ি তিস্তায় বিলীন হয়েছে। ২৫০ টিরও বেশি পরিবার ভাঙন আতঙ্কে তাদের ঘর-বাড়ি সরিয়ে নিয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে গঙ্গাচড়া উপজেলার প্রায় ৫ হাজার পরিবার।

মর্ণেয়া ইউনিয়নের বানভাসী আফসার আলী (৪৮) বলেন, ১০ দিন থাকি পানিবন্দি হয়্যা (হয়ে) আছি। হামার চেয়ারম্যান, মেম্বার, সরকারি লোক কায়ো (কেউ) একনা (একবার) দেখপার আইসে নাই (দেখতে আসেনি)।

কোলকোন্দ ইউনিয়নের খালেদা বেগম জানান, নদী থেকে প্রায় ২০০ মিটার দূরে হামার বাড়িটি আছিলো। বুধবার রাতে রান্নাঘরসহ তিনটি ঘর নিমেষেই তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

এদিকে মর্ণেয়া ইউপি চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান জানান, গত কয়েকদিনে তার ইউনিয়নে অর্ধশত পরিবারের বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এক হাজারের বেশি পরিবার।

গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ তামান্না বলেন, ‘আমাদের কাছে তিস্তার ভাঙনে বিলীন হয়ে যাওয়া মর্ণেয়া ইউনিয়নের এখন পর্যন্ত ২০টি পরিবারের তালিকা আছে। আমরা আরও খোঁজখবর নিয়ে তালিকা করছি। তবে ভাঙন হুমকিতে থাকায় কোলকোন্দ, নোহালী, মর্ণেয়া, লক্ষ্মিটারী ইউনিয়নের প্রায় দুইশ ৫০টির মতো পরিবার তাদের বাড়ি-ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে।

তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানি বলেন, অসময়ের বন্যা ও ভাঙনে প্রতি বছর এক লাখ কোটি টাকার সম্পদ তিস্তার গর্ভে চলে যায়। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য নদীখনন, সংরক্ষণ ও তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন করা ছাড়া বিকল্প নেই।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, দেশের উত্তরাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন উজানে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এসময় তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানি সমতল সময় বিশেষে বৃদ্ধি পেয়ে কতিপয় পয়েন্টে স্বল্পমেয়াদে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মাহবুব রহমান বলেন, প্রবল বর্ষণ আর উজানের ঢলে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তিস্তায় পানি বাড়া-কমায় গঙ্গাচড়ায় কিছু স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। দ্রুত ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

;