২৫ বছর ধরে স্টেশনে শাক বিক্রি করে চলে আব্দুল করিমের সংসার

, জাতীয়

শহিদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ | 2024-07-01 18:35:26

ছোট্ট উপজেলা রানীনগর সদর, সেই সদরেই ছোট্ট রেল স্টেশন রানীনগর। মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে,মনে হচ্ছে যেন প্লাটফর্মের টিনের শেড ফেটে গায়ে এসে বৃষ্টি পড়বে। তখন সবে দুপুর গড়িয়েছে, প্লাটফর্মে বসে মলীন বসনে শাকের আটি বাঁধছেন এক বৃদ্ধ আব্দুল করিম। মলীন পোশাকে আপন মনে শাকের আটি বাঁধার ভঙ্গিই বলে দিচ্ছে এটাই তার কর্ম।

কথা বলে জানা গেল আব্দুল করিমের বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলার চক-বিলাতী গ্রামে। প্রায় ২৫ বছর ধরে শাক বিক্রি করে চলছে তার সংসার। হাতে যেগুলো শাক বিক্রির জন্য প্রস্তুত করছিলেন সেগুলোকে স্থানীয় ভাষায় সেটিকে ❝চাম ঘাস শাক❞ বলে।

শাক বিক্রেতা আব্দুল করিম বলেন, যখন ছোট ছিলাম তখন মানুষের বাড়িতে বছরচুক্তি কাজ করতাম আর কাজ করার সময় গরু নিয়ে বিভিন্ন মাঠে-ঘাটে যাওয়ার ফলে পায়ে কখনো কাঁটা, কখনো আঘাত পেয়ে চিকিৎসার অভাবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে পায়ের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। আমার পায়ের গোড়ালিতে সৃষ্টি হয়েছে ক্ষত। মানুষের বাড়িতে কাজ ছেড়ে দিয়েছি অনেক বছর আগেই কিন্তু পায়ের ব্যথা ও ক্ষত আর ভালো হয়নি। তাই ভালোভাবে হাটতেও পারি না। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম বিভিন্ন স্থান থেকে শাক তুলে স্টেশন, বাজারে,পথে-ঘাটে বিক্রি করবো। তখন থেকে নিজের সেই সিদ্ধান্তকেই মেনে নিয়ে কাজ শুরু করে দেয়া।

তিনি বলেন, শাক বিক্রির টাকা দিয়ে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি পাশের থানা রানীনগরে আবার ছোট মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি নিজ গ্রামে।

তিনি আরো বলেন, জীবনের কঠিন সময় গুলোতে আমার স্ত্রী আমার পাশে থেকে আমাকে সাহায্য করেছে। মাঝে মধ্যে কাজ না থাকলে অসহায় হয়ে পড়ি। বর্ষার দিনে শাক পাওয়া গেলেও আমি পায়ের জন্য বের হতে পারি না কাদার মধ্যে, তখন বোতল কুড়িয়ে বিক্রি করে সংসার চালাই।

আব্দুল করিম বলেন, বাড়িতে আমি আর আমার স্ত্রী থাকি, সারাদিন শাক বিক্রির টাকায় বাজার করে নিয়ে গিয়ে দুজনে রান্না করে খেয়ে জীবন চলছে। বিভিন্ন স্টেশনে, গ্রামে গিয়ে গিয়ে শাক বিক্রি করি আমি। শাক গুলো অনেক কষ্ট করে সংগ্রহ করি, কারণ আমার পায়ে যে ক্ষত গুলো আছে সেগুলোর ব্যাথায় নড়াচড়া করা বেশ কঠিন আমার জন্য। জীবনটা যতদিন আছে এভাবেই চলতে হবে আমাদের।

এ সম্পর্কিত আরও খবর