অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (এডিশনাল আইজিপি) ড. শামসুদ্দোহা খন্দকার ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের অভিযোগ, এ দম্পতি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত বিপুল সম্পদের মালিক।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করা হয়।
শামসুদ্দোহা দম্পতির বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক।
দুদক বলছে, শামসুদ্দোহা দম্পতি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত বিপুল সম্পদের মালিক। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ১ হাজার ২৭ শতক জমি আছে তাদের নামে। দলিলে এসব জমির দাম ৭০ কোটি টাকা দেখানো হলেও আদতে বাজারদর প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। গত ১৮ মার্চ আদালত তার এসব সম্পত্তি জব্দ করার আদেশ দেন। পরদিন তিনি উচ্চ আদালতে আপিল করলে ওই আদেশ স্থগিত হয়ে যায়।
জাতীয় একটি দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়, শামসুদ্দোহা খন্দকার শুধু গাছেরটা খান না, তলারটাও কুড়ান। চাকরিজীবনে শুধু সম্পদের শিখরে উঠে দমে যাননি; রাজধানীর বনেদি এলাকা গুলশানে অন্তত ২০০ কোটি টাকা দামের সরকারি জমি ও বাড়ি নিজের করে নিতে রকমারি কূটকৌশল চালাচ্ছেন। তার প্রতাপের কাছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কিংবা আবাসন পরিদপ্তরও যেন ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’।
শামসুদ্দোহা ২০১১ সালে প্রেষণে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান পদে বসে সীমাছাড়া দুর্নীতিতে জড়ান। এ পটভূমিতে ২০১৯ সালে তার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা ঠুকে দেয় দুদক। ওই মামলায় স্ত্রী ফেরদৌসী সুলতানাও আসামি। মামলাটি এখনও চলমান। এ ছাড়া তার রয়েছে হরেক রকমের ব্যবসা-বাণিজ্য। তিনি ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির মালিকদের অন্যতম একজন। ২০২১-২২ সালের পরিষদে শামসুদ্দোহা ছিলেন ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান।
২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত শীর্ষ ১১ কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এর মধ্যে শামসুদ্দোহা খন্দকারও ছিলেন।
এ ব্যাপারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, রাষ্ট্রীয় ও সরকারিভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকা ব্যক্তির বিরুদ্ধে একের পর এক সীমাহীন বিত্তবৈভবের মালিক হওয়ার অভিযোগ আসছে। এ ধরনের অভিযুক্তের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিলে অন্যদের কাছে শক্ত বার্তা যাবে। দৃষ্টান্ত স্থাপন করলে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকা দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তির কাছে অন্তত এ বার্তা পৌঁছাবে– এসব অপরাধ করে পার যাওয়া যায় না। বিচার একদিন হবেই। এ বার্তাটা আমাদের সমাজে নেই বললেই চলে।