১৩ বছর পর সেলিনা খান মজলিস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন পিবিআই’র

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2024-07-02 14:02:49

দীর্ঘদিন সম্পর্কের জেরে মাঝে মধ্যেই প্রাক্তন সাংসদ খান মজলিসের বাড়িতে যাতায়াত করতেন আসামি সুবল কুমার রায়। যাতায়াতের এক পর্যায়ে ভিকটিম সেলিনা খান মজলিসের বড় মেয়ে শামীমা খান মজলিসের সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন আসামি সুবল। ঘটনা জানাজানি হলে ওই বাড়িতে আসামি সুবলের যাতায়াত বন্ধ করে দেন ভিকটিম সেলিনা খান মজলিস।

এর পরেও অভ্যন্তরীণভাবে তাদের যোগাযোগ এবং যাতায়াত চলতে থাকলে মা সেলিনা খান মজলিস দেখে ফেলেন এবং এবং চিৎকার চেঁচামেচি করলে মাকে থামাতে ছুরিকাঘাত করেন মেয়ে শামীমা খান মজলিস। এরপর মা জীবিত থাকলে মৃত্যু নিশ্চিত করতে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি সুবলের সহায়তায় মাথায় ইলেকট্রিক শকের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয় মৃত্যু।

১৩ বছর পর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। রহস্য উদঘাটনের এসব তথ্য জানান পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) প্রধান বনজ কুমার মজুমদার।

মঙ্গলবার (২ জুলাই) সকালে রাজধানীর ধানমন্ডি পিবিআই হেডকোয়ার্টার্সে আয়োজিত সাভারের সাবেক এমপির শামছুদ্দোহা খান-এর স্ত্রী হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন, ইলেকট্রিশিয়ান সুবল কুমার রায় (৫০), ভিকটিমের নিজ কন্যা শামীমা খান মজলিস ওরপে পপি (৫৭) এবং গৃহকর্মী আরতি সরকার (৬০)। সাভার থানাধীন ভাগলপুর এবং পাকিজা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

বনজ কুমার মজুমদার বলেন, দীর্ঘদিন হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন না হলে একপর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায় মামলার তদন্ত কাজ। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মামলা পুনরায় পুনর্জীবিত করতে নির্দেশনা আসে। আমরা ঘটনার তদন্ত শুরু করি। তদন্ত শুরু হলে আমরা ভিকটিমের বড় মেয়ে আসামি শামীমা খান মজলিসের পাশাপাশি বাকি দুই মেয়েকেও সন্দেহের তালিকায় রাখি। আমরা খোঁজ নিতে গিয়ে দেখি যে ওই বাসায় কারা কারা আসতেন। জানতে পারি একজন ইলেকট্রিশিয়ান মাঝে মাঝে ওই বাসায় আসতেন। কিন্তু তার বহুদিন ওই বাসায় আসা-যাওয়া নেই। জানতে পারি তিনি বিগত ৩০ বছর ধরে সাভার থানায় ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে কাজ করছেন। সেই সঙ্গে পাশেই তার একটি বড় মুদির দোকানও আছে।

কিন্তু আমরা তদন্তকালে জানতে পারি তার মধ্যে সুইচ বোর্ডটি ভাঙা এবং দুইটা তার বের করে রাখার একটা বিষয় উঠে আসছিল। এরপর আমরা আসামি ইলেকট্রিশিয়ান সুবল কুমার রায় (৫০) কে নিয়ে আসি।

আমাদের প্রাক্তন সাংসদ খান মজলিস তাকে পছন্দ করতেন তাই আসামি সুবল কুমার রায় মাঝেমধ্যে সেখানে যাতায়াত করতেন এবং বাড়ির ইলেকট্রিকের কাজ করে দিতেন। ১৯৯৮ সাল থেকে সুবল কুমার রায় প্রাক্তন সাংসদের বাড়িতে যাতায়াত করতেন।

আসামি সুবল কুমার রায়কে গ্রেফতারের পর আদালতের জবানবন্দমূলক স্বীকারোক্তিতে জানান, ভিকটিম সেলিমা খান মজলিস (৬৩)’র বড় মেয়ে তার স্বামীকে নিয়ে নিচতলায় বসবাস করতেন। সেখানে তিনি নিয়মিত যাতায়াতের এক পর্যায়ে আসামি শামীমা খান মজলিসের স্বামীর সাথে বিভিন্ন ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে ২০০১ সালে আসামি সুবল কুমার রায় এবং শামীমা খান পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। এই বিষয়টি ২০০৫ সালে জানাজানি হলে তাকে মারধর এবং অপমান করা হলে তিনি বাসা থেকে চলে যান। তাকে আর এই বাসায় আসতে নিষেধ করা হয়। ২০০৮ সালে সুবল কুমার রায় বিয়ে করেন। ২০১১ সাল থেকে তিনি আবার সেই বাসায় যাতায়াত শুরু করেন।

যেদিন হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছে সেদিন ভোরবেলা ফজরের নামাজের সময় ভিকটিম সেলিমা খান মজলিস ছাদে উঠেছিলেন এবং সেখান থেকে দেখতে পান সুবল চুপিচুপি তার বাড়ির দিকে আসছেন। এরপর তিনি এটা দেখে চিৎকার করতে করতে নিচে নামছিলেন। তখন আসামি সুবল এবং শামীমা খান মজলিস মায়ের চিৎকার থামাতে ওপরে যান। মাকে থামানোর জন্য মেয়ে শামীমা খান মজলিস তাকে জাপটে ধরেন এবং পাশে থাকা একটি ফল কাটার চাকু দিয়ে গলার দুই পাশে তিনটি পোচ দেন। এরপর যখন তারা দেখেন তার মা মারা যায়নি জীবিত আছে তখন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি আসামি সুবল ইলেকট্রিক বোর্ড ভেঙে সেখান থেকে দুইটি তার বের করে ভিকটিমের মাথায় ইলেকট্রিক শক দেয় এবং মৃত্যু নিশ্চিত করেন। ঘটনাটি ঘটে রান্না করে। কিন্তু আমরা ভিকটিমকে পেয়েছি বেডরুমে।

তিনি বলেন, জবানবন্দি থেকে জানা যায় যে, বিগত ২০০১ সালের ১৪ জুন তারিখ সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৭ টার মধ্যে যেকোন সময় ভিকটিমের বড় মেয়ে শামীমা খান মজলিসের সহায়তায় ভিকটিমের বাসার ডাইনিং রুমে ভিকটিমের গলার দুই পার্শ্বে ফল কাটার ছুরি দিয়ে কেটে মেরে রক্তাক্ত অবস্থায় প্রতিবন্ধী ছেলে সেতুর কক্ষে খাটের চাদরের ওপরে একটি পুরাতন পত্রিকা বিছিয়ে ভিকটিমের মাথার কাছে দুইটি বালিশ দিয়ে চাপা দিয়ে এবং ঘাড়ের নিচে তোষক দিয়ে শুয়াইয়ে রেখে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর