রাজবাড়ীতে বাড়ির আঙিনায় বাঁশের মাচায় ঝুলছে রঙিন আঙুর

, জাতীয়

সোহেল মিয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজবাড়ী | 2024-07-02 16:44:51

বাড়ির আঙিনায় বাঁশের মাচায় থোকায় থোকায় ঝুলছে লাল, সবুজ, হলুদ রঙের রাশিয়ান মিষ্টি জাতের গোল আঙুর। চলতি পথে বাড়ির আঙিনায় রঙিন এসব ফল নজর কাড়ছে পথচারীদের। কৃষি উদ্যোক্তা সরোয়ারের চোখেও দেখা দিয়েছে এক রঙিন স্বপ্ন।

সরোয়ার সদর উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের চর বাগমারা গ্রামের বাসিন্দা। রাজবাড়ী জেলায় পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম বাড়ির আঙিনায় ২ শতাংশ জমির ওপর আঙুর চাষ করে সফল হয়েছেন বলে দাবি করেছেন তিনি।

জানা যায়, জেলার ভৌগোলিক অবস্থান, আবহাওয়া ও মাটির বৈশিষ্ট্য না জেনেই শুধুমাত্র ইউটিউব দেখে শখের বসে আঙুর চাষে আগ্রহী হন সরোয়ার। প্রথমে গাছ সংগ্রহ করে ইউটিউব দেখে নিয়মকানুন জেনে বাড়ির আঙিনায় ২ শতাংশ জমিতে শুরু করেন চাষাবাদ। পরিবার ও আশেপাশের অনেকেই তাকে নিরুৎসাহিত করেছিলেন। তবে তিনি থেমে যাননি। প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলক একটি গাছ থেকেই পেয়েছেন প্রায় দেড় মণ মিষ্টি আঙুর।

কৃষি উদ্যোক্তা সরোয়ার 

এখন উদ্যোক্তা সরোয়ার হোসেন বিশ্বাসের সংগ্রহে রয়েছে ৬টি জাতের পাশাপাশি ভারতের মহারাষ্ট্র থেকে আনা ১২টি জাত । এ সব গাছ সংগ্রহ করে এখন তিনি বাণিজ্যিকভাবে নিজের ৭০ শতাংশ জমি আঙুর চাষের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

সরোয়ার বিশ্বাসের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার বসতবাড়িতে ঢোকার প্রধান ফটকেই আঙুর গাছের বাঁশের মাচা। মাচার দিকে তাকালেই চোখে পড়ে বাহারি রঙের আঙুর ফল থোকায় থোকায় গাছের ডালে ডালে ঝুলছে। সরোয়ার একটি স্টিলের মইয়ে উঠে তার আঙুর গাছের পরিচর্যা করছেন। বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনার্থীরা সরোয়ারের আঙুর গাছ দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, কম পরিশ্রম ও কম খরচে লাভজনক হওয়ায় আঙুর চাষে আগ্রহী হচ্ছেন অনেকে। আঙুর চাষে বাড়তি কোনো খরচ নেই। জৈব সার প্রয়োগের পাশাপাশি সঠিক পরিচর্যায় একটি গাছে ৪০ থেকে ৫০ বছর ফলন পাওয়া সম্ভব। এ ছাড়া বছরে একটি গাছে ৩ বার ফল আসে। প্রতিটি গাছে দেড় থেকে ২ মণ পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।


সরোয়ার বিশ্বাস জানান, তার ছাত্র জীবনে আঙুর ফলের প্রতি একটা লোভ ছিল। ১৯৯৪ সালে রাজবাড়ী বিসিকের একটি নার্সারি থেকে আঙুর ফলের চারা এনে বাড়িতে লাগিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ওই আঙুর ফল ছিল টক। সেই থেকে তার ইচ্ছা জাগে কিভাবে মিষ্টি আঙুর চাষ করা যায়। কিভাবে মিষ্টি আঙুরের চারা পাওয়া যায়। সেটা খুঁজতে থাকেন। গত বছর ইউটিউবে কুড়িগ্রাম জেলার আঙুরের একটি ভিডিও দেখেছিলেন। পরে মোবাইলে যোগাযোগ করে সেখান থেকে একটি চারা নিয়ে এসে বাড়িতে লাগান। চারা লাগানোর ৮ মাস পর তিনি ফলন পান। ওই গাছে প্রায় ৫ কেজি আঙুর ধরেছিল এবং আঙুর ফলটি খুব মিষ্টি ছিল।

এবার তিনি ওই গাছ থেকে প্রায় দেড় মণের মতো আঙুর ফল পেয়েছেন।এ খন তিনি চিন্তা ভাবনা করছেন বাণিজ্যিকভাবে চাষ করার। ইতিমধ্যে তিনি ৭০ শতাংশ জমি প্রস্তুত করেছেন। ভারতের মহারাষ্ট্র থেকে এরই মধ্যে তিনি ১২টা জাতের চারা এনেছেন। বর্তমানে তার ওখানে ৬টি জাতের চারা রয়েছে।

তিনি আরও জানান, পৃথিবীতে মোট ৫২টির ওপরে আঙুরের জাত রয়েছে। এর মধ্যে যেগুলো সর্বসেরা সেগুলো তিনি সংগ্রহ করেছেন। তার সংগ্রহে রয়েছে ইতালির দুইটি জাত, রাশিয়ার ৬টি জাত ও বাকিগুলো ভারতের। তিনি পরীক্ষামূলকভাবে আঙুর চাষ করে সফল হবার পর এখন বাণিজ্যিকে চলে আসবেন। করোনার সময় যখন বেকার হয়ে ঘরে বসে ছিলেন তখন ইউটিউব দেখে মাল্টা ও কমলা চাষ করেও তিনি সফল হয়েছেন। প্রায় ১০ বিঘা জমির ওপর তার মিশ্র ফলের বাগান রয়েছে।


সরোয়ার বিশ্বাসের বড় ভাই আজিজুর রহমান বিশ্বাস বলেন, আমার ছোট ভাই ইউটিউব দেখে মাল্টা ও কমলা চাষে সফল হবার পর এবার আঙুর ফল পরীক্ষামূলক চাষ করে সেখানেও সফল হয়েছে। এখন তিনি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করবেন। তার গাছে ধরা আঙুর বাজারের আঙুরের থেকেও মিষ্টি ও সুস্বাদু। প্রতিটি থোকায় ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম আঙুর ধরেছে। আমার ছোট ভাইয়ের আঙুর ফলের বাগান দেখতে জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে দর্শনার্থীরা এসে ভিড় করছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর