টেকসই বাঁধ চান ফুলগাজী-পরশুরামবাসী, বন্যার ভোগান্তিতে ১০ গ্রামের মানুষ

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফেনী | 2024-07-02 20:48:34

ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজানের পানিতে ফেনীর মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের চারটি স্থান ভেঙে জেলার ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রামের সাধারণ মানুষ।

বন্যার পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় মানুষের আসবাবপত্র, ধান-চালসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। ঘরে পানি উঠে রান্না করার চুলা ভিজে যাওয়ায় না খেয়ে ছিল অধিকাংশ মানুষ। এমন অবস্থায় টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন ফুলগাজী পরশুরামের মানুষ।

সোমবার (১ জুলাই) রাত থেকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে।

জানা গেছে, সোমবার রাতে ফুলগাজী উপজেলার দৌলতপুর এলাকায় মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৩টি অংশে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এতে উত্তর দৌলতপুর, দক্ষিণ দৌলতপুর, বিজয়পুরসহ পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।


এছাড়া পরশুরাম উপজেলার দক্ষিণ শালধর এলাকার জহির চেয়ারম্যানের বাড়ি সংলগ্ন বাঁধের একটি অংশে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এতে দক্ষিণ শালধর, মালিপাথর, নিলক্ষ্মী, ঘোষাইপুর এবং পাগলিরকুল এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিজপুর গ্রামের মন্তু মিয়ার বাড়ি, পাটনী ভুঞা বাড়িসহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি বাড়িতে পানিবন্দি হয়ে আছে সাধারণ মানুষ। অনেকের ঘরের পেছনের অংশ ভেঙে গেছে, কারও গুদাম ঘরে ফাটল ধরেছে। চুলা পানির নিচে থাকায় রান্না করতে পারেনি অধিকাংশ পরিবার।

পাটনী বাড়ির সুদীর চন্দ্র দাস বলেন, ঘরের মধ্যে, উঠানে পানি উঠে রাত থেকে ঘরের বাইরে। বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে কৃষকদের বীজতলা নষ্ট হয়েছে। ঘরের গুদাম, ধান চাল নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের গুদাম ঘর সে ঘরে ফাটল ধরে গেছে। অচিরেই ভেঙে পড়বে। এর আগেও তুফানে গাছ পড়ে ঘরের ক্ষতি হয়েছে। সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা করে আমরা খেয়ে বেঁচে থাকতে পারব। পাশাপাশি বাধ নির্মাণে স্থায়ী ব্যবস্থা নিলেই এ দুঃখ দুর্দশা থেকে মুক্তি পাব।

সখিনা বেগম নামে আরেকজন বলেন, রাত ৩ টার দিকে পানি উঠে চুলা ভিজে গেছে। ঘরের যাবতীয় আসবাবপত্র সব নষ্ট হয়ে গেছে। কেউ আমাদের দেখতে আসেনা। চেয়ারম্যান, মেম্বাররা আমাদের দেখতেও আসেনি। নিজে কষ্ট করে বাপের বাড়ি থেকে চলতেছি। এখন সব শেষ হয়ে গেছে, সরকারের কাছে সহযোগিতা প্রার্থনা করেন তিনি।

মন্তু মিয়ার বাড়ির মোঃ বেলাল বলেন, কোমর পর্যন্ত পানি উঠেছে রাতে। জিনিসপত্র সব নষ্ট হয়ে গেছে। ঘরের পাশ দিয়ে ভেঙে সব নদীর সাথে মিশে গেছে। রান্না বান্না করার মত অবস্থা নেই। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠা সম্ভব নয়। এখন ক্ষতি হয়েছে, আগামীতে যাতে না হয় সে ব্যবস্থা করতে হবে। নয়ত আমাদের এ দুর্দশা আজীবন থেকে যাবে।


ফুলগাজী বাজারের ব্যবসায়ী আলী আহম্মদ বলেন, বিগত বছরগুলোতে বন্যা হলেও বাজারে এতো পানি কখনও হয়নি। সোমবার রাতে বাঁধের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে প্রায় তিন ফুটের বেশি পানিতে বাজার প্লাবিত হয়েছে। রাতে স্বাভাবিকভাবে দোকান বন্ধ করে বাড়ি গেলেও সকালে এসে অনেক সামগ্রী পানির নিচে পেয়েছি।

স্বপ্না আক্তার নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মাত্র একবছর আগে টেইলার্স দোকান দিয়েছিলাম। আজকে বন্যার পানি প্রবেশ করে দোকানে প্রায় দেড় লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। প্রতিবছরই এমন বন্যায় আমাদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। এবার আর কোনও ত্রাণ নয়, একটি স্থায়ী বাঁধ চাই আমরা।

পরশুরামের চিথলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন বলেন, রাতে দক্ষিণ শালধর জহির চেয়ারম্যানের বাড়ি সংলগ্ন মুহুরী নদীর বাঁধে ভাঙনের শুরু হয়। লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। গতবছরও এ ভাঙন স্থানের পাশে বাঁধের আরেকটি অংশে ভাঙনের দেখা দিয়েছিল। টেকসই বাঁধ নির্মাণ ছাড়া এ দুর্ভোগ কমানো সম্ভব নয়।

এদিকে বন্যা পরিস্থিতির কারণে জেলার ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।

জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে বোর্ডের সাথে আলোচনা করে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এবার ফুলগাজীতে ৪টি ও পরশুরামে ২টি কেন্দ্রে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদ শাহরিয়ার বলেন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৪টি স্থানে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছিল। নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভাঙন স্থান দিয়ে লোকালয়ে পানির ডুকছে। নদীর পানি কমলে ভাঙন এলাকা মেরামত করা হবে।

এ ব্যাপারে ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানিয়া ভূঁইয়া বলেন, সোমবার রাতে ফুলগাজী উপজেলার দৌলতপুর এলাকায় মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৩টি অংশে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় শুকনো খাবারসহ অন্যান্য সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানান তিনি।

ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন মজুমদার বলেন, বন্যাদুর্গতদের মাঝে ৩০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্তদের সাময়িক সহযোগিতা করা হয়েছে। আগামীতে তাদের বিষয়ে খোজখবর নিয়ে সহযোগিতা করা হবে বলে জানান তিনি।

ফেনীর ফুলগাজীর ভাঙন এলাকা পরিদর্শন পরিদর্শন করেছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, স্থানীয় সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমসহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা, জনপ্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক নেতারা।

এসময় প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, মুহুরী-কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বাঁধ নিয়ে একটি সমীক্ষা করা হয়েছে। দুই মাসের মধ্যে এই প্রকল্প একনেকে উপস্থাপনের চেষ্টা করব। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই এখানে কাজ শুরু করতে পারব বলে আশাবাদী।

এ সম্পর্কিত আরও খবর