বিপৎসীমার ওপর কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র, পানিবন্দি হাজারও মানুষ

, জাতীয়

কল্লোল রায়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুড়িগ্রাম | 2024-07-03 13:52:34

ভারী বর্ষণ আর উজানের ঢলে কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। বুধবার (৩ জুলাই) সকাল ৯টায় চিলমারী ও নুনখাওয়া পয়েন্টে এই নদের পানি বিপৎসীমার যথাক্রমে ৯ সেন্টিমিটার ও ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে এর অববাহিকার নিম্নাঞ্চলে প্লাবিত হয়ে কয়েকটি উপজেলার হাজারও মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বাড়ছে ধরলা ও দুধকুমার নদের পানি। এ অবস্থায় জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

মঙ্গলবার ( ২ জুলাই) দুপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, দেশের উত্তরাঞ্চল ও এর উজানে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারী ধেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে এই সময়ে উত্তরাঞ্চলের দুধকুমার, ধরলা ও তিস্তা নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি পেয়ে কয়েকটি পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

পূর্বাভাস কেন্দ্রের বার্তায় ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতির পূর্বাভাস দেওয়া না হলেও এই নদের পানি বিপৎসীমার অতিক্রম করে জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। দুর্ভোগে পড়েছে শত শত পরিবার। বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত জেলার সবকটি নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

পাউবো, কুড়িগ্রামের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, মঙ্গলবার (২ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ১৫ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৩৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করে। এসময় ওই পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। একই সময়ে এই নদের পানি নাগেশ্বরীর নুনখাওয়া পয়েন্টে ৪৫ সেন্টিামিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ধরলার পানি কুড়িগ্রাম সেতু পয়েন্টে ২১ সেন্টিমিটার এবং দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে ২১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ক্রমেই বিপৎসীমার দিকে ধাবিত হচ্ছে। রাতভর তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ৩৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে।

ব্রহ্মপুত্রে অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে এর নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারও মানুষ। উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চর বালাডোবা, বতুয়াতলি মূসার চর, ব্যাপারিপাড়া নতুন চর এবং পূর্ব ও পশ্চিম মশালের চরের শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। বাধ্য হয়ে এসব পরিবারের অনেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে নৌকায় আশ্রয় নিয়েছেন। বসতভিটা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় নৌকাতেই রান্না ও খাবার সেরে নিচ্ছেন। তবে শৌচাগার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন পানিবন্দি মানুষজন।

বতুয়াতলি মূসার চরের বাসিন্দা শরিফুল বলেন, ‘আমাদের গ্রামে ৪০টিরও বেশি পরিবারের বসবাস। সবকটি পরিবারের ঘরের ভেতর পানি। বাইরে চারপাশে পানি। পানি বাড়তে আছে।’

উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আতাউর রহমান বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতিতে পানিবন্দি পরিবারে খাদ্য সহায়তা দেওয়া জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে। এছাড়াও দুর্গত পরিবারের সদস্যদের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’

জেলা সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র বিধৌত নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। কালির আলগা ও গোয়াইলপুরির চরে গত দুই দিনে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সেখানকার বেশ কিছু পরিবারের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। বেশিরভাগ পরিবারের বসতবাড়িতে পানি।

গোয়াইলপুরির চরের বাসিন্দা মাহবুব বলেন, ‘পরিস্থিতি খারাপ। বন্যার কবলে পইড়া গেছি। ঘরবাড়িতে পানি ঢুকতাছে। এলাকার অনেক বাড়িঘরে পানি।’

কালিরআলগার বাসিন্দা হোসেন বলেন, ‘ চরে নিচা জায়গার ঘরে (পরিবারে) পানি ঢুকছে। পানি বাড়লে আরও ঘরবাড়িতে পানি ঢুইকা পড়বো।’

পুরান কালির আলগা গ্রামের বাসিন্দা পল্লী চিকিৎসক আনছার আলী বলেন, ‘অবস্থা খারাপ। দুই দিনে ৩ হাত পানি বাড়ছে। বেশিরভাগ বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করছে। মানুষ এখনও আশ্রয়কেন্দ্রে যায় নাই।’ ওই গ্রামে অর্ধশতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে ব্রহ্মপুত্রের অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়ন সহ চিলমারী উপজেলার নদ তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়ছে প্লাবিত এলাকার বাসিন্দারা।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। আমরা ত্রাণ সহায়তা বিতরণ অব্যাহত রেখেছি। জেলা জুড়ে ৪ শতাধিক আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আবারও পানি বৃদ্ধির ফলে যেসব এলাকা প্লাবিত হচ্ছে আমরা সেদিকে বাড়তি নজর রাখছি।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর