যে ঘটনা সিনেমা-সিরিয়ালকেও হার মানায়!

, জাতীয়

মাজেদুল হক মানিক, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, মেহেরপুর | 2024-07-03 15:51:25

সিরিয়াল, সিনেমা আর টিকটক দেখে চলতো অপহরণের প্র্যাকটিস। বেশ কয়েকদিন প্র্যাকটিস শেষে কাজে নেমে পড়েন দুই বন্ধু হাবিব ও পলাশ। এক বন্ধু অন্য বন্ধুকে অপহরণের নাটক সাজিয়ে তার মায়ের কাছে পাঠানো হয় মুক্তিপণ পরিশোধের আকুতি জানানো কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ।

ভিডিও পেয়ে মুক্তিপণ পরিশোধে ব্যাকুল হয়ে পড়েন পরিবারের লোকজন। তবে পুলিশের চৌকস তদন্তে বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। ঘটনাটি মেহেরপুরের গাংনীর বামন্দী বাজারের।

পলাশ গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামের মন্টু মিয়ার ছেলে ও হাবিব একই গ্রামের মৃত মাসুমের ছেলে। পুলিশ ওই দুই বন্ধুকে আটক করে মুচলেকা নিয়ে তাদের পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেয়।

জানা গেছে, বামন্দী বাজারে পলাশের ওয়েল্ডিং কারখানায় কাজ করতেন তারই বন্ধু আহসান হাবিব। পলাশের নিজের দোকান থাকলেও হাবিবের ছিল না। পিতৃহারা হাবিব মায়ের কাছে ব্যবসার জন্য টাকা চাইলেও মায়ের সামর্থ্য ছিল না। মায়ের কাছ থেকে টাকা নিতে দুই বন্ধু মিলে একটি অপহরণের নাটক করে। পলাশের ওয়েল্ডিং দোকানে বসে টিকটক, সিরিয়াল আর সিনেমা দেখে রপ্ত করে অপহরণ নাটকের।

সে অনুযায়ী, গেল সোমবার (১ জুলাই) সন্ধ্যায় পলাশ তার বন্ধু হাবিবের মায়ের কাছে খবর দেয় হাবিব অপহরণ হয়েছে। তাকে মুক্ত করতে হলে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে। সাজানো নাটকের অংশ হিসেবে হাবিবকে কাপড় দিয়ে বেঁধে টাকা দেওয়ার আকুতি জানানো ভিডিও পাঠানো হয় মাসহ অন্যান্য আত্মীয়স্বজনের কাছে। যা দেখে প্রকৃত অপহরণ মনে করে দিশেহারা হয়ে পড়েন হাবিবের মাসহ আত্মীয়স্বজন। অপহরণের বিষয়টি জানানো হয় পুলিশকে।

গাংনী থানা পুলিশের ওসির নেতৃত্বে একটি চৌকস টিম শুরু করে তদন্ত। ভিডিও বিশ্লেষণ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় পলাশ ও হাবিবের অবস্থান নিশ্চিত হয় পুলিশ। পরে বামন্দী বাজারের একটি ঘর থেকে দু’জনকে আটক করা হয়।

ব্যবসার টাকার জন্য মায়ের সাথে এই নাটক বলে স্বীকার করেন তারা। আটক পলাশ ও হাবিবকে তাদের পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

গাংনী থানার ওসি তাজুল ইসলাম জানান, তথ্য প্রযুক্তি ছাড়াও ভিডিও বিশ্লেষণে অপহরণ নাটক বোঝা যায়। পরে দুই বন্ধুর মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে তাদের অবস্থান নিশ্চিত হয়েই অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা সব সত্যি স্বীকার করে। পরিবারের অসচেতনতা এবং তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহারে যুবসমাজ বিপথে যাওয়ার চিত্রই ফুটে উঠেছে এই অপহরণ নাটকের মধ্যে। এমনটিই মনে করছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর