‘সফট লোন না পেলে অনিশ্চয়তায় পড়বে জাহাজভাঙা শিল্প’

, জাতীয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো | 2024-07-03 20:39:58

হংকং কনভেনশন অনুসারে ২০২৫ সালের মধ্যেই জাহাজভাঙা শিল্পের সবকটি শিপ ইয়ার্ডকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে গ্রিন ইয়ার্ডে রূপান্তর করতে হবে। এই কনভেনশন অনুসারে গ্রিন শিপ ইয়ার্ড ব্যতিত কোনো ইয়ার্ড ইউরোপ বা উন্নত দেশ থেকে পুরাতন স্ক্রাপ জাহাজ আমদানি ও কাটার সুযোগ নেই। কিন্তু দেশের সবকটি ইয়ার্ড গ্রিন ইয়ার্ডে রূপান্তরে বড় অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে। মূলত অর্থের সংকুলান না হওয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জাহাজভাঙা শিল্পের আধুনিকায়নে সফট লোন (সহজ শর্তে ঋণ) দেওয়ার দাবি এসেছে।

বুধবার (৩ জুলাই) থেকে চট্টগ্রামে শুরু হওয়া দুইদিনের জাহাজভাঙা শিল্পের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রথমদিন জাহাজভাঙা শিল্পের মালিকেরা এই দাবি জানিয়েছেন। সম্মেলনে সফট লোনের পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় জাহাজ কাটার বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

প্রথমদিন নগরীর পাঁচ তারকা হোটেল রেডিসন ব্লুতে দিনভর চলে এক সামিট। সামিটে সফট লোন দেওয়া না হলে এই শিল্প অনিশ্চয়তায় পড়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন জাহাজভাঙা শিল্প মালিকেরা।

ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন বিজনেস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট অপরচুনিটি ফর শিপ রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রি অব বাংলাদেশ শীর্ষক এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন যৌথভাবে আয়োজন করছে শিল্প মন্ত্রণালয়, আন্তর্জাতিক সমুদ্র চলাচল সংস্থা (আইএমও), নরওয়ে দূতাবাস এবং বিএসবিআরএ। মূলত সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক, দেশি, বিদেশি বিনিয়োগকারী ও অর্থদাতা সংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই জাহাজভাঙা শিল্প মালিকদের সংগঠন বিএসবিআরএ-এর অনুরোধে এই সামিট আয়োজন করা হচ্ছে।

সম্মেলনের প্রথমদিন ৫টি রাউন্ড টেবিল সেশন অনুষ্ঠিত হয়। এই সেশনগুলো হলো, শিপ রিসাইক্লি: এনভায়রনমেন্টাল কেইস, বাংলাদেশ: ১০ বছরে শিপ রিসাইক্লিং শিল্পের অগ্রগতি, প্রত্যাশিত বাজার ও মুনাফা, হিউম্যান এলিমেন্ট, সাপোটিং ইন্ডাস্ট্রি ডেভলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ, ওভারভিউ অব ইন্ডাস্ট্রি ডেভলপমেন্ট চ্যালেঞ্জেস, ডিসকাসিং ফিন্যান্সিয়াল সল্যুশান।

সম্মেলনে অনলাইনে অংশে নেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা। আরও অংশ নেন জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস, আইএমও-এর কর্মকর্তা জন আলনসো, শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. শাহ মো. হেলাল উদ্দিন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত এসপেন রিকটার ভেন্ডসেন, ক্লাস এনকে এর গ্রিন সার্টিফিকেশন বিভাগের তাকোশি নারোশি, আইএমও এর প্রতিনিধি জন এলনচো, আইআইইউসির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শফিকুল ইসলাম আজিজ, জাহাজভাঙা শিল্পের পরামর্শক ইঞ্জিনিয়ার মো. মাহবুবুর রহমান, বিএসবিআরএ-এর সভাপতি আবু তাহের, সহসভাপতি জহিরুল ইসলাম রিংকু, গ্রিন শিপ ইয়ার্ড স্বীকৃতি পাওয়া কে আর শিপ রিসাইক্লিং ইয়ার্ডের কর্ণধার মো. তসলিম উদ্দিনসহ এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংক, জাইকা, আইএমও, আইএলও ও বিভিন্ন বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) প্রতিনিধিরা।

জাহাজভাঙা শিল্পকে দেশের সম্ভাবনাময় খাত উল্লেখ করে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা এই শিল্পকে ঝুঁকিমুক্ত এবং পরিবেশবান্ধব করতে অর্থায়নের জন্য উন্নয়ন অংশীদারদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

বাংলাদেশের জাহাজভাঙা শিল্পে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন নরওয়ের রাষ্ট্রদূত এসপেন রিকটার ভেন্ডসেন। তিনি বলেন, নরওয়ে এই শিল্পকে এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করছে। সরকারেরও সহযোগিতা দরকার। আমরা প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। নরওয়ের জাহাজ মালিকরা বাংলাদেশে রিসাইক্লিং করতে আগ্রহী।

বিএসবিআরএ-এর সহসভাপতি ও পিএইচপি শিপ ব্রেকিং অ্যান্ড রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিজের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর জহিরুল ইসলাম রিংকু বলেন, জাহাজভাঙা শিল্প খাত থেকে প্রতি বছর আয় হয় প্রায় ৭৭০ মিলিয়ন ডলার। সরকারের রাজস্ব আয় হয় প্রায় ১১০ মিলিয়ন ডলার। এ শিল্পে প্রত্যক্ষভাবে ২০ হাজার থেকে ৪০ হাজার মানুষ কাজ করেন। পরোক্ষভাবে প্রায় ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ফলে দেশের সামগ্রিক টেকসই উন্নয়নে এ শিল্প ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছে।

বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স রিসাইক্লিং অ্যাসোসিয়েশন (বিএসবিআরএ) সূত্রে জানা গেছে, ইয়ার্ডগুলোকে কমপ্লায়েন্ট হিসেবে উন্নীত করার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় ১০৮টি ইয়ার্ডের শিপ রিসাইকিং ফ্যাসিলিটি প্ল্যান (এসআরএফপি) অনুমোদন দিয়েছে। দেখা যায়, প্রতিটি ছোট আকারের ইয়ার্ডে এসআরএফপি বাস্তবায়ন করার জন্য প্রায় ৩০ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকা, মাঝারি আকারের ইয়ার্ডের জন্য ৪০ কোটি থেকে ৭০ কোটি টাকা এবং বড় আকারের ইয়ার্ডের জন্য ৮০ কোটি থেকে ১১০ কোটি টাকা প্রয়োজন। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত চারটি ইয়ার্ড গ্রিন হয়েছে। এগুলো হলো পিএইচপি শিপ ব্রেকিং অ্যান্ড রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিজ, কবির স্টিল, এস.এন করপোরেশন (ইউনিট-২) এবং কে আর শিপ রিসাইকিং ইয়ার্ড। অর্থ সংকটের কারণে বাকি ইয়ার্ড মালিকদের পক্ষে গ্রিন ইয়ার্ডে উন্নীত করা সম্ভব হচ্ছে না।

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন চট্টগ্রামের জাহাজাভাঙা শিল্পের বিভিন্ন ইয়ার্ড পরিদর্শন করবেন অতিথিরা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর