ব্যর্থতার মধ্যেই নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নে হাত জিইডির

, জাতীয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2024-07-04 20:38:07

অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি, বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণ, সরকারের রাজস্ব আহরণ ও ব্যয় বৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থতার মধ্যেই নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজে হাত দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)।

নতুন পরিকল্পনায় সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে রাজস্ব আহরণ ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারা পুনরুদ্ধারের বিষয়টিকে শীর্ষ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নের অংশ হিসেবে জিইডির আয়োজনে বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে উচ্চ পর্যায়ের স্টিয়ারিং কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী আবদুস সালামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শহিদুজ্জামান সরকার, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এম এ মান্নান, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।

সভা শেষে জিইডির সদস্য (সচিব) ড. মো. কাউসার আহাম্মদ বলেন, আগামীতে আমাদের প্রধান ফোকাস হবে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি বাড়ানো। এটা করা না গেলে ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উচ্চ আয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না।

তিনি আরও বলেন, জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়তে হলে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ প্রয়োজন। বেসরকারি বিনিয়োগ টানতে হলে অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যয় বাড়তে হবে। আর এর জন্যে প্রয়োজন হবে সরকারের বাড়তি রাজস্ব।

অবকাঠামো ছাড়াও বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা ও উৎসাহ দিতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের পর ভর্তুকি ও প্রণোদনা কমিয়ে দিতে হবে। এই অবস্থায় আগামীতে বিনিয়োগ, শিল্পায়ন ও রফতানিতে ভর্তুকি ও প্রণোদনার বিকল্প হিসেবে কী ধরনের সুযোগ দেওয়া যায়, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

তিনি বলেন, নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিশ্রুতিগুলোকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আগামী পরিকল্পনায় দক্ষতা উন্নয়নের বিষয়কে বিশেষভাবে প্রধান্য দিয়ে শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়ানো হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

ড. মো. কাউসার আহাম্মদ বলেন, এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পর নমনীয় ঋণ পাওয়ার সুযোগ কমে আসবে। রফতানিতে প্রণোদনা বন্ধ করে দিতে হবে। কৃষি ও শিল্পসহ বিভিন্ন খাতে ভর্তুকিও কমাতে হবে। মেধাস্বত্বের রেয়াতি সুবিধাও থাকবে না। অগ্রাধিকার বাজার সুবিধা (জিএসপি) কমে আসবে। এ সব সমস্যার সমাধানে করণীয় সংক্রান্ত একটি আলাদা চ্যাপ্টার নতুন পরিকল্পনায় থাকবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

শিল্পায়নে আগামীতে চামড়া ও চামড়াজাত, পাট ও পাটজাত পণ্য এবং কৃষি নির্ভর শিল্পকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জিইডি সদস্য।খাতভিত্তিক সিএমএসএমই শিল্প প্রাধান্য পাবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

আগামীতে ব্লু ইকোনমি ও স্পেস ইকোনমিতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেছেন, নতুন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত ব্যবসা বাণিজ্য বাড়ানো হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন সরকারের দায়িত্ব নিয়ে প্রথম সভা করেছেন পরিকল্পনা কমিশনে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য এবং ব্লু ইকোনমিতে গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। নতুন পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এ সব নির্দেশনার প্রতিফলন থাকবে বলেও তিনি জানান।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২০ সাল থেকে বাস্তবায়নে আসা অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ৩২ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য থাকলেও গত অর্থবছরে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে প্রাথমিক হিসাবে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।

চলতি অর্থবছরে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সাড়ে আট শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য থাকলেও নতুন বাজেটে ৬.৭৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বিদায়ী অর্থবছরে মুল্যস্ফীতির হার ৪ দশমিক ৭০ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য থাকলেও গত মে মাস পর্যন্ত আগের এক বছরের গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িযেছে ৯.৭৩ শতাংশে।

অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় ২০২০ সালে বেসরকারি বিনিয়োগ ছিল জিডিপির ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা জিডিপির ২৬.১ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য থাকলেও পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে তা ২৩.৫১ শতাংশে নেমে এসেছে।

বিনিয়োগের মত রাজস্ব আহরণ এবং সরকারি বিনিয়োগেও লক্ষ্য পূরণ হয়নি বলে জানিয়েছে বিবিএস। রাজস্ব আহরণ ২০২০ সালে জিডিপির ৯ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে গত অর্থবছরে ১২ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য থাকলেও তা ৯ দশমিক ৫ শতাংশে সীমাবদ্ধ রয়েছে।

২০২০ সালে সরকার জিডিপির প্রায় ১৫ শতাংশ ব্যয় করলেও গত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে তা জিডিপির ১৪ দশমিক ২ শতাংশে নেমে এসেছে। অথচ এ সময়ে সরকারি ব্যয় জিডিপির প্রায় ১৮ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য ছিল।

এ সম্পর্কিত আরও খবর