ডেঙ্গুতে মুগদা হাসপাতালে ৯ মাসে ১৯ জনের মৃত্যু

, জাতীয়

জাহিদ রাকিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪ | 2024-09-23 19:52:11

ডেঙ্গু সংক্রমণ ও মৃত্যুর সব হিসাব পাল্টে যাচ্ছে দেশে। ধারণার বাইরে চলে গেছে সংক্রমণের ভয়াবহতা। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত সারাদেশে ১৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। তারমধ্য রাজধানীর মুগদা হাসপাতালেই মারা গেছেন ৯ মাসের ১৯ জন। হাসপাতালটিতে এখন পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়েছেন ১৯৭৩ জন।

সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, মুগদা হাসপাতালে রোগী ও স্বজনদের অসহনীয় চিত্র। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর অস্বাভাবিক ভিড়, শয্যা ছাড়িয়ে চিকিৎসা চলছে বারান্দা ও মেঝেতে। ডেঙ্গু আক্রান্তদের সেবা দিতে খোলা হয়েছে বিশেষ ইউনিট। রোগীর চাপে কর্তৃপক্ষের যেন নাজেহাল অবস্থা।

হাসপাতালটিতে প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। রোগীর সংখ্যা বাড়ায় বেড ছাড়িয়ে চিকিৎসা চলছে এখন মেঝেতে। এদিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে অভিযোগ না থাকলেও রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসকরা।

ডেঙ্গু আক্রান্ত সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ডেঙ্গু পজিটিভ হওয়ার পরই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। শুরুর দিনে পেট ফুলে যাওয়া, বমি, খাবার খেতে না পারা ও জ্বর ছিল। প্লাটিলেট ২০ হাজারে নেমেছিল। এখন ভালো, ৫০ হাজারের ওপরে। ডাক্তার বলছেন ৪ ব্যাগ রক্ত দিতে। এখন পর্যন্ত দুই ব্যাগ দিয়েছি।

মুগদা হাসপাতালের ৮ তলার মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা মাহফুজা (১৯)। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, আজই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। বলা হয়েছে কোনও শয্যা খালি নেই। মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হবে। শয্যা না পাওয়া নিয়ে আমাদের কোনও অভিযোগও নেই। চিকিৎসা পেলেই হলো।

ভোলা থেকে এনে সাত দিন আগে ডেঙ্গু আক্রান্ত ছোট ভাইকে মুগদা হাসপাতালে ভর্তি করেছেন মিজান হোসেন। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, মুগদায় আমার এক আত্মীয়ের বাসা হওয়ায় এখানে ভাইকে ভর্তি করেছিলাম। সাত দিন আগে তার পেট ব্যথা, শরীর ব্যথা, বমি, খাবারে রুচি ছিল না। খাবার খেলে বমি করত, সঙ্গে প্রচণ্ড জ্বর ছিল। তার প্লাটিলেট ১৫ হাজারে নেমেছিল। আজ ছাড়পত্র দিতে পারে। দূর থেকে এসেছি, সেবাও পেয়েছি। ভাই অনেকটা সুস্থ।

এদিকে হাসপাতালটির চিকিৎসা কার্যক্রম নিয়ে পরিচালকের সাথে কয়েক দফা যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া চিন্তিত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ঢাকায় বসবাসরত নাগরিকরাও মশার ব্যাপারে সচেতন নন। ঢাকার বাসা-বাড়িতে ছাদবাগান প্রথা চালু হয়েছে। বাড়ির ছাদে নানা ফুল-ফলের বাগান করা হচ্ছে। অথচ ওই সব বাগানের টবে পানি জমে এডিসের লার্ভার প্রজনন ক্ষেত্র গড়ে তোলা হয়েছে। এসব বিষয়ে নিজেদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

ডা. লেলিন চৌধুরী আরও বলেন, এডিস মশা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। সাধারণত অক্টোবর মাসে ডেঙ্গু রোগীর আক্রান্তের হার কমতে থাকে, এবার তার ব্যতিক্রম হয়েছে। জুলাই ও আগস্ট মাসেই সর্বাধিক আক্রান্ত ও মৃত্যু। কারণ এবার জুলাই থেকে থেমে থেমে বৃষ্টিতে এডিস মশার বিস্তার হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সিটি করপোরেশনেরও কিছুটা গাফিলতি রয়েছে।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেব মতে, চলতি বছর সারাদেশে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ২০ হাজার ৩৪ জন। তারমধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৩১ জনের। এরমধ্য চলতি মাসের ২৩ দিনের আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১১ হাজার ১৯৩ জনের। আর মৃত্যু হয়েছে ৪৮ জনের।

এ সম্পর্কিত আরও খবর