কমেছে চাহিদা ও প্রতিমার মূল্য, মজুরি নিয়ে শঙ্কায় কারিগররা

, জাতীয়

অভিজিত রায় কৌশিক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪ | 2024-09-24 09:42:31

ঘনিয়ে আসছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এই উৎসবের প্রধান উপকরণ প্রতিমা। আর এই উৎসবকে ঘিরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। ফলে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা। দেবী দুর্গা, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মীকে আকৃতি দিতে ঘাম ঝরাচ্ছেন তারা। রাত দিন চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। শিল্পী আর সহযোগীরা মিলে বানাচ্ছেন দুর্গার প্রতিমা।

তবে বিগত বছরের তুলনায় প্রতিমার মূল্য কমে যাওয়া এবং নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়া অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন প্রতিমা তৈরির কারিগররা। একই সঙ্গে বিগত বছরের তুলনায় প্রতিমার চাহিদা কম এবং অর্ডার কমে অর্ধেকে নেমে যাওয়াই খরচ পুষিয়ে লাভের মুখ দেখা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা।

এমন পরিস্থিতির কারণ হিসেবে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশে টালমাটাল পরিস্থিতিকে দায়ী করছেন মৃৎশিল্পীরা।

সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর একাধিক মন্দিরের প্রতিমা নির্মাণ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বললে এসব তথ্য জানা যায়।

প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে কারিগররা, ছবি: বার্তা২৪.কম

রমনা কালী মন্দিরের প্রতিমা শ্রমিক রতন পাল বলেন, পরিবেশ পরিস্থিতি ভালো না। দেশের যে অবস্থা এই পরিস্থিতিতে কোথাও পূজা হয়, কোথাও হয় না। কোন কমিটির কেউ কোন দায়িত্ব নিতেও চায় না। কত কী সমস্যা আছে। তাছাড়া গত বছর আমি যেভাবে কাজ করেছি এ বছর তার অর্ধেক মূল্যে কাজ করছি। তারপরও ভাবি যে দেখি মণ্ডপগুলো ধরে রাখা যায় কিনা।

তিনি বলেন, গত বছর যে প্রতিমার কাজ আমি ১ লাখ টাকায় করেছি, এবার সেটা ৬০ হাজার থেকে ৬৫ হাজার টাকায় করতে হচ্ছে। কাজ না করেও পারছি না।

প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম প্রতিবছরের মতন এবারও কাজ হবে। আমরাও সেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। মাঝে দেশে ঝামেলার কারণে এক মাসের বেশি সময় আমরা কাজ করতে পারিনি। গতবারের মতন এবার অর্ডারও নেই। গতবছর ১৬টা প্রতিমার কাজ করেছি। এ বছর ৯টা প্রতিমার কাজ করছি।

গতবারের তুলনা এবার সবকিছুর দাম বেড়েছে, প্রতিমার দাম কমেছে। সেই হিসেবে এবার লাভ তো পরের কথা, আমাদের দৈনিক হাজিরা মজুরিই তো থাকবে না। যাদের নিয়ে কাজ করছি তাদের বেতনই বা কীভাবে দেবো, নিজেই বা কীভাবে চলবো; একটা হিমসিম খাওয়া অবস্থার মধ্যে আছি আর কী!

এ বছর সর্বোচ্চ অর্ডার কত এবং অনুরূপ প্রতিমার মূল্য গত বছর কত ছিল, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এবছর সর্বোচ্চ অর্ডার ৮০ হাজার। এই একই প্রতিমা গত বছর ছিল ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

তিনি বলেন, গত আড়াই মাস ধরে ৬ জন মানুষ এক সাথে কাজ করছি। এরপর বাঁশ-কাঠ-মাটি-খড় আরওতো কতকিছু আছে, সবই নিজের খরচ। আমিনবাজার থেকে মাটিও আমাদের ফিট হিসেবে কিনে আনতে হয়। বেলে মাটি কিনে আনতে ২০০ ফিট মাটির দাম পড়ে ৬ হাজার টাকা। এঁটেল মাটি কিনতে লাগে ১৫/১৬ হাজার টাকা। তারপর নিয়ে আসাযাওয়া খরচ আছে আরও। এই বিচুলি (খড়) এক এক মুঠো কিনছি ১১ টাকা করে। এক মুঠো বিচুলি দিয়ে একটা হাতের কাজও হয় না। তারপর আবার ভ্যান ভাড়া আছে। আমি যদি ৩০০ মুঠোও কিনে আনি তাহলেও ৬০০ টাকা ভ্যান ভাড়া আছে। এরপর রং খরচ, প্রতিমার সাজসজ্জা কেনার খরচ, কত খরচ; কিন্তু প্রতিমার দাম নেই।

মাটির প্রলেপে প্রতিমা গড়ছেন, ছবি: বার্তা২৪.কম

বিবেক পাল বলেন, এবার আমাদের প্রতিমার অর্ডার কম। গতবছর আমদের ১২/১৩টা প্রতিমার অর্ডার ছিল। এবার অর্ডার কমে গেছে। মাত্র ১০টা অর্ডার পেয়েছি। এবার প্রতিমার অর্ডারই ছিল না। শুরুতে দেশের এই পরিস্থিতিতে কেউই অর্ডার দেয়নি। শেষে এসে তবুও এগুলো অল্প টাকায় অর্ডার নিয়েছি।

গত বছরের তুলনায় এবার প্রতিমার দামের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিমার দামটা নির্ধারণ হয় আকার ও মডেলের ওপর। তবে এবার প্রতিমার দাম অনেক কম।

প্রতিমা তৈরির মালামালের দাম বাড়ছে আর প্রতিমার দাম কমছে। আগে যেটা ১০ টাকা দিয়ে কিনেছি, এখন সেই একই জিনিস ১৫ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। গত বছর যে প্রতিমার দাম ১ লাখ ছিল, এবার সেই প্রতিমা ৭০ হাজার ৮০ হাজারে এসে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, এভাবে চললে আমদের অবস্থা কী হয়? মজুরি-লেবার খরচ আরও কত খরচ। এসব খরচ বাদ দিয়ে তো আমাদের কিছুই থাকে না। আমরা মালিকের আন্ডারে কাজ করি। মালিক অর্ডার ধরে, আর আমরা কাজ করি। তারপর মাসিক হিসেব করে লাভের একটা অংশ আমাদের দেয়। কিন্তু প্রতিমার বর্তমান যে বাজার সেখানে তো কিছুই থাকবে না মালিকের। মালিকের যদি না থাকে, তাহলে আমাদের কী দেবে? মালিক বাঁচলে আমরা বাঁচবো।

এ সম্পর্কিত আরও খবর