শেষ মুহূর্তে দম ফেলার ফুরসত নেই প্রতিমা শিল্পীদের

, জাতীয়

অভিজিত রায় (কৌশিক), স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-10-04 21:41:57

ঘনিয়ে এসেছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয়া দুর্গাপূজা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এই উৎসবকে কেন্দ্র করে শেষ মুহূর্তে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা। রঙতুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলছেন দেবীদুর্গা, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিকের রূপ। দম ফেলারও যেন ফুরসত নেই তাদের।

শুক্রবার (৩ অক্টোবর) রাজধানীর রমনা কালীমন্দির ঘুরে ও প্রতিমা শিল্পীদের সঙ্গে কথা বললে এসব তথ্য জানা যায়।

রাজধানীর রমনা কালীমন্দির প্রাঙ্গণ ঘুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, বাংলা একাডেমির সড়ক সংলগ্ন মন্দিরের গেট দিয়ে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে বাঁশের স্তূপ। প্রধান সড়ক থেকে মন্দিরের প্রধান ফটক পর্যন্ত সড়কের দুইপাশে বাঁশ বেঁধে তার ওপর দিয়ে করা হয়েছে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা। কর্কশিট দিয়ে সাজানো হচ্ছে প্রধান গেট। অনেকে আবার রাস্তার দুপাশে স্টলের কাজে পার করছেন ব্যস্ত সময়।

এছাড়া শিশুদের জন্য নাগরদোলা, দোলনাসহ বিনোদনের বিভিন্ন অংশবিশেষ প্রস্তুত করতেও দেখা গেছে।


প্রধান ফটক পেরিয়ে ভেতরে যেতেই সেখানেও দেখা মেলে বাঁশ কাঠ দিয়ে প্যান্ডেল নির্মাণে ব্যস্ত শ্রমিকদের। অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে একটি মঞ্চও। বাঁশ কাঠ দিয়ে নির্মাণ প্যান্ডেলের ওপরে দেয়া হয়েছে তাঁবু। নিচেই রেখে দেয়া হয়েছে অর্ধ রঙিন প্রতিমা। ঠিক তার পাশেই রয়েছে প্যান্ডেলের কাজে ব্যবহারের জন্য রঙিন কাপড়। এদিকে মন্দিরের পেছনেও রাখা হয়েছে নির্মাণাধীন প্রতিমা যা এখনও রঙের কাজ বাকি।

রমনা কালী মন্দিরের প্রতিমা শ্রমিক বিবেক পাল বার্তা২৪.কমকে বলেন, এখন শেষ মুহূর্তে কাজের প্রচুর চাপ। আর তো মাত্র কয়েকদিন বাকি, এই শেষ সময়ে প্রচুর ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। এই বছরে ১১টা প্রতিমার অর্ডার ছিল। এর মধ্যে ৭টা প্রতিমা রঙ করা শেষ হয়েছে। এখনও ৪টার রঙের কাজ বাকি আছে। পূজার বাকি আছে আর মাত্র ৪ দিন। এই অল্প সময়ের মধ্যে রাত-দিন কাজ করে প্রতিমার কাজ শেষ করতে হবে। বুধবার থেকে পূজা। সোমবারের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে। তারপর মঙ্গলবার প্রতিমাগুলো মন্দিরে পাঠিয়ে দিতে হবে।

এদিকে চলতি বছরে সারাদেশে দুর্গাপূজায় মণ্ডপের সম্ভাব্য সংখ্যা ৩২ হাজার ৬৬৬টি। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১৫৭টি ও উত্তর সিটিতে ৮৮টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। তবে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তবে পূজা মণ্ডপের যে সংখ্যা বলা হচ্ছে তা সরকারি বা পূজা উদযাপন পরিষদের তালিকা নয়। এটি একটি সম্ভাব্য তালিকা।


গত (১০ সেপ্টেম্বর) মঙ্গলবার সচিবালয়ে দুর্গাপূজার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে পূজামণ্ডপে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকবে জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আরও জানান, দুর্গাপূজার সময় সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, এবার একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেটি হলো স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা। এবারের স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ একটু আলাদা হবে। বাংলাদেশের যে কোনো নাগরিককে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হবে। এই স্বেচ্ছাসেবকদের সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। যেমন ধরুন, স্বেচ্ছাসেবক (ক) রাত একটা থেকে রাত তিনটা পর্যন্ত, স্বেচ্ছাসেবক (খ) রাত তিনটা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত। তাদের সংখ্যা সর্বনিম্ন রাতে তিন জন এবং দিনে দুই জন হবে। ব্যবস্থা নেওয়া হবে যানজট নিরসনেও।


এদিকে এবার পূজা মণ্ডপগুলোর জন্য বরাদ্দ বাড়ানোর কথাও জানিয়েছেন ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন। তিনি বলেছেন, দুর্গাপূজায় প্রধান উপদেষ্টা চার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে অসচ্ছল মণ্ডপগুলোতে এই টাকা বিতরণ করা হবে। প্রতি পূজা মণ্ডপের জন্য ৫০০ কেজি চাল বরাদ্দ দেওয়া হতো। আমার মন্ত্রণালয় থেকে এটা ২০০ কেজি পর্যন্ত বাড়ানো সুপারিশ করেছি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর