জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন পুনর্গঠনের দাবি

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, ঢাকা | 2024-10-05 17:17:12

জনপ্রশাসন শব্দের মধ্যেই লুকিয়ে আছে মানুষকে শাসন শোষণ ও নির্যাতনের বীজ। তাই আমরা আধুনিক বাংলাদেশের সেবা ব্যবস্থাপনা থেকে 'জনপ্রশাসন' শব্দটি বাতিল করতে চাই। জনগণের টাকায় বেতনভুক্ত ব্যক্তি কোন ভাবেই জনগণের প্রশাসক হতে পারে না। তাই জনপ্রশান শব্দটির যথাযথ নয়। এজন্য আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনে সকল ক্যাডার থেকে সদস্য নিয়ে সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে।

শনিবার (৫ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সাগর-রুনি হলে 'জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্যদের প্রত্যাখ্যান কমিটিতে সকল ক্যাডারের প্রতিনিধিত্ব চাই' শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন এসব কথা বলেন বক্তারা। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তথ্য ক্যাডারে কর্মরত মনির হোসেন।

তিনি বলেন, সমাজ গড়তে ইতোপূর্বে জনপ্রশাসন সংস্কারের জন্য যেসব কমিটি গঠন করা হয়েছিলো, সেগুলো তাঁদের দিয়েই করা হয়েছিলো, যারা নিজেদের সুবিধার্থে বৈষম্য আরও বৃদ্ধি করেছেন। অতীত অভিজ্ঞতা এবং অসমর্থিত সূত্রের বরাত দিয়ে আমরা সকলকে অবগত করেছিলাম যে, এবারও তেমন কমিটি গঠন হতে পারে। বিষয়টি খেয়াল রেখে সকল পেশার সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করে কমিটি গঠনের জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করি। সেই সাথে সকল পেশার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে ২৫টি ক্যাডারের সদস্যদের সংগঠন 'আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ'-কে অন্তর্ভুক্ত করে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিটি করতে সকল উপদেষ্টাকে লিখিতভাবে অনুরোধ করা হয়েছে। সাক্ষাতে বিষয়টি উপস্থাপন করলে উপদেষ্টামণ্ডলী আমাদেরকে আশ্বস্তও করেছিলেন। আমরাও আশা করেছিলাম, প্রকৃত জনসেবা ব্যবস্থাপনায় প্রজাতন্ত্রের সকল কর্মচারীর মতামতের ভিত্তিতে এবার একটি আধুনিক জনসেবা ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার সুযোগ হবে।

তিনি আরও বলেন, গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম 'জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন' যে আট সদস্যের কমিটি গঠন করেছে, সেখানে ২৫টি ক্যাডারের কোনও সদস্য নেই। বরং কমিশন প্রধানসহ ছয়জন সদস্য একটি ক্যাডারের, যারা সিভিল প্রশাসনের বৈষম্য সৃষ্টিকারী। এছাড়া ইতোপূর্বেও বৈষম্য নিরসনে তাঁদেরকে দিয়েই কমিটি গঠিত হয়েছিলো, এবং তাঁরা সেই সুযোগে বৈষম্য আরও বৃদ্ধি করেছেন। বিগত ১৫ বছরে যারা জনপ্রশাসনে থেকে ভোটারবিহীন নির্বাচনে সহযোগিতা করেছেন, যারা এদেশের জনসেবা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছেন নিজস্ব স্বার্থে, যারা প্রশাসন ব্যবস্থাকে চরম কেন্দ্রীভূত করে সকল ক্ষমতা নিজেদের হাতে কুক্ষিগত করেছেন, তাদেরকেই কমিশনের সদস্য করা হয়েছে; যেনো এদেশের উন্নয়ন ব্যবস্থাপনায় প্রশাসন ক্যাডারের সদস্য ব্যতীত আর কারো কোনো ভূমিকা নেই। এ কারণেই স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশে জনসেবা ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। বস্তুত বাংলাদেশের প্রশাসন ব্যবস্থায় পেশাদারিত্বের কোন মূল্য দেওয়া হয়নি, এখনও হচ্ছে না। একটি ক্যাডার যাদের প্রকৃত কাজ ছিল ভূমি ব্যবস্থাপনা। কালের প্রবাহে চানক্য-নীতি অবলম্বন করে, আজ তারা পুরো প্রশাসন ব্যবস্থা গিলে ফেলেছেন। নিজেদের মূল দায়িত্ব ফেলে আজ তাঁরা সকল ক‍্যাডারের মধ্যে কর্তৃত্ববাদের নীতি গ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনার দুর্গতি সম্পর্কে আমরা সবাই কমবেশি অবগত আছি।

তিনি বলেন, যদিও কমিশন গঠনের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার জনমুখী, জবাবদিহিমূলক, দক্ষ ও নিরপেক্ষ জনপ্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনক্রমে 'জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন' নামে এ কমিশন গঠন করল। কিন্তু 'আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ' মনে করে, বৈষমাপূর্ণ এ কমিশন কোনোভাবেই বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারবে না বরং বিদ্যমান সিভিল প্রশাসন আরও গণবিরোধী হবে। তাই, পরিষদ এ কমিশনকে প্রত্যাখ্যান করছে এবং সকল পেশাজীবীদের অন্তর্ভুক্তি করে পুনর্গঠন করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।

মনির হোসেন বলেন, এভাবে জনমুখী সেবা ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। জনপ্রশাসন শব্দের মধ্যেই লুকিয়ে আছে মানুষকে শাসন, শোষণ ও নির্যাতনের বীজ। তাই আমরা আধুনিক বাংলাদেশের সেবা ব্যবস্থাপনা থেকে 'জনপ্রশাসন' শব্দটিই বাতিল করতে চাই। জনগণের টাকার বেতনভুক্ত ব্যক্তি কোনভাবেই জনগণের প্রশাসক হতে পারেন না। তাই জনপ্রশাসন শব্দটি যথাযথ নয়। সময় এসেছে এসব চিন্তা করার এবং ভ্রান্তনীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার। কিন্তু এসব চিন্তা যেন করা না যায়, জনসেবার প্রকৃত রূপরেখা যেন প্রকাশ না পায়, সে জন্য একটা স্বার্থান্বেষী মহল বাংলাদেশে সব সময় ক্রীড়ানকের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ দেশের ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে ২৫টি ক্যাডারের প্রতিনিধিত্ব করে। প্রায় ৬০ হাজার কর্মকর্তার মধ্যে ২৫টি ক্যাডারে প্রায় ৫৩ হাজার কর্মকর্তা চাকরি করেন। দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি, জনসেবা এ ২৫টি ক্যাডারের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। তাই ২৫টি ক্যাডারকে পাশ কাটিয়ে শুধু একটি ক্যাডারের প্রতিনিধি দিয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার সম্ভব নয়।

তিন দফা প্রস্তাব তুলে ধরে তিনি বলেন, ১. বিদ্যমান জনপ্রশাসন সংস্কার কমিটি পুনর্গঠন করতে হবে। ২. আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের মাধ্যমে সকল ক্যাডারের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। ৩. সিভিল সার্ভিসের বাইরে জনপ্রশাসন বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞকে কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করতে হবে বলে জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিসিএস তথ্য কর্মকর্তা মোঃ ওমর ফারুক দেওয়ান, কৃষি ক্যাডারের কর্মকর্তা মোঃ আরিফ হোসেন, শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা ডঃ মোঃ মফিজুর রহমান, রেলওয়ে কর্মকর্তা মোঃ শহিদুল ইসলাম, গণপূর্ত কর্মকর্তা মোঃ জামিলুর রহমান, পশু সম্পদ কর্মকর্তা ডঃ মোঃ আহসান হাবিব, সমবায় কর্মকর্তা মোছাঃ নূর ই জান্নাত প্রমুখ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর