বাণিজ্যিক সুবিধা বাড়াতে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরে নির্মাণাধীন অত্যাধুনিক কার্গো টার্মিনালটি অবশেষে বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। ৪১ একর জমিতে টার্মিনালটির মোট নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২৯ কোটি টাকা।
অন্তবর্তীনকালীন সরকারের নৌ-পরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এম সাখাওয়েত হোসেন কার্গোভেহিকেল টার্মিনালটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন বলে জানা গেছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইতিমধ্যে উদ্বোধনের সব আয়োজন সম্পূর্ণ হয়েছে। এ টার্মিনালে একসঙ্গে দেড় হাজার পণ্যবাহী ট্রাক পার্কিংসহ নানা সুবিধা পাবেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। এতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য যেমন গতিশীল হবে, তেমনি রাজস্ব আহরণ দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাবে। টার্মিনালটি নির্মাণে কাজ করছেন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এসএসআর গ্রুপ।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক মামুন কবির তরফদার জানান, সরকার ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের পাশে বেনাপোল বন্দরে ৪১ একর জায়গায় বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৩২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে শুরু করে কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল নির্মাণ। এখানে একসঙ্গে ভারতীয় পণ্যবাহী ২ হাজার ট্রাক পার্কিং, ট্রাক চালকদের জন্য অত্যাধুনিক ৩টা টয়লেট কমপ্লেক্স ও থাকা, খাওয়ার সু ব্যবস্থায় বিল্ডিং, ফায়ার সার্ভিস, কেমিকেল শেড থাকছে।
এর ফলে বন্দরের পণ্যজট ও যানজট যেমন মুক্ত হবে তেমনি নিরাপত্তা ব্যবস্থা বহুগুণ বাড়বে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সামসুর রহমান জানান, টার্মিনালটিতে সেবা শুরু হলে বন্দরে চলমান নানা সমস্যার ৯০ শতাংশ সমাধান হবে। বাণিজ্য সুবিধা বাড়াতে রাজস্বও আগামীতে দ্বিগুণ বাড়বে। এটি সরকারের এ যাবতকালের বেনাপোল বন্দরে সবচেয়ে বড় প্রকল্প।
ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার কর্মাসের পরিচালক মতিয়ার রহমান জানান, প্রতি বছর ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যত বাণিজ্য হয়ে থাকে। যার ৮০ শতাংশ হয় বেনাপোল বন্দর দিয়ে। ভারত অংশে বেশ আগে তাদের অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে। তবে চাহিদা মতো বেনাপোল বন্দরের অবকাঠামো গড়ে না ওঠায়, স্বাভাবিক বাণিজ্য পরিচালনায় নানাভাবে বিঘ্ন ঘটতো। দিনে ৬ থেকে ৭শ’ ট্রাক পণ্য আমদানির চাহিদা থাকলেও জায়গার অভাবে ৩০০ থেকে ৪০০ ট্রাকের বেশি পণ্য আমদানি সম্ভব হতো না। রাসায়নিক পণ্যগারের অভাবে প্রায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ছাড়াও ব্যবসায়ীরা বিভিন্নভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছিলেন। এক্ষেত্রে দাবি ছিল জায়গা অধিগ্রহণ করে বন্দর আধুনিকায়নের। বাণিজ্যিক গুরুত্ব বিবেচনা করে অবশেষে সরকার বেনাপোল বন্দরে কার্গোভেহিকেল টার্মিনাল তৈরি করেছেন। টার্মিনালটিতে সেবা শুরু হলে বন্দরে চলমান সমস্যার অনেকটা সমাধান হবে।
ভারতীয় ট্রাক চালক রুহুল বিশ্বাস বলেন, ‘ট্রাক পার্কিং নিয়ে বড় সমস্যার মধ্যে ছিলাম। বাংলাদেশ সরকারের এ টার্মিনালে সে সমস্যা থেকে ভারতীয় ট্রাক চালকদের মুক্তি মিলবে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি সাজেদুর রহমান বলেন, প্রতি তবছর বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার আমদানি ও ১০ হাজার কোটি টাকার রফতানি বাণিজ্য হয়। বন্দর আধুনিকায়ন হয়েছে, এতে আমরা খুশি। এটির সেবা শুরু হলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য যেমন গতিশীল হবে তেমনি রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি পাবে। তিনি আরো বলেন, এর আগেও দুইবার উদ্বোধনের দিন ঠিক হয়েছিল তবে নানান জটিলতায় তা হয়নি। অবশেষে বৃহস্পতিবার উদ্বোধন হচ্ছে এতে ব্যবসায়ীরা সবাই খুশি।
বন্দরের প্রকল্প প্রকৌশলী মশিউর রহমান বলেন, কাজের মান ঠিক রাখতে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছেন অর্থ, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ঢাকায় নিযুক্ত কলকাতা দূতাবাস কর্মকর্তারা টার্মিনাল পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।