জনস্বার্থকে উপেক্ষা করে হয়রানিমূলক প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধ করা না হলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সাধারণ বিদ্যুৎ গ্রাহক ফোরাম। সেই সাথে গণবিরোধী প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ দাবি করেন তারা।
রোববার (১২ জানুয়ারি) দুপুরে রংপুর মহানগরীর শাপলা চত্বরে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে এই দাবি জানান বিক্ষুব্ধ বিদ্যুতের গ্রাহকরা।
মানববন্ধন শেষে আন্দোলনকারীরা রংপুর নগরীর খামার মোড় নেসকোর প্রধান কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন। এ সময় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোসহ নিরাপত্তার স্বার্থে প্রধান ফটক বন্ধ রাখেন কর্তৃপক্ষ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হলে গ্রাহকদের অতিরিক্ত চার্জ পরিশোধসহ নানা হয়রানির শিকার হতে হবে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, বিতর্কিত এই প্রিপেইড মিটার সংযোগের মাধ্যমে গ্রাহকরা মিটার ভাড়া ও সারচার্জ বাবদ ৩০% আর্থিক ক্ষতি ও ভোগান্তির শিকার হবেন। প্রিপেইড মিটারে প্রতিবার এক হাজার টাকা রিচার্জে এজেন্ট কমিশন বাবদ ২০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। প্রতিমাসে গ্রাহকদের মিটার ভাড়া বাবদ ৪০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। কতদিন এই ভাড়া পরিশোধ করতে হবে তা অস্পষ্ট। গ্রাহকরা নিজেদের টাকায় ইতিপূর্বে অ্যানালগ ও ডিজিটাল মিটার ক্রয় করলেও তার জন্য কোনো টাকা বিদ্যুৎ বিভাগ পরিশোধ করেনি। প্রতি এক হাজার টাকা রিচার্জে গ্রাহকরা কত ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবে, বাণিজ্যিক ও আবাসিক রেট কীভাবে নির্ধারিত হবে- এসব নিয়েও সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। ধোঁয়াশার মধ্যে গ্রাহককে রেখে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের বিতর্কিত প্রিপেইড মিটার স্থাপন কার্যক্রম কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন, ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে নিম্নমানের প্রিপেইড মিটার কেনার নামে ২৬ হাজার কোটি টাকা মধ্যে ১৫ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। সেই নিম্নমানের প্রিপেইড মিটার এখন জনগণকে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। জনস্বার্থ উপেক্ষা করে নেসকো নিম্নমানের প্রিপেইড মিটার স্থাপনের মাধ্যমে প্রতি মাসে অবৈধভাবে ভাড়া আদায়ের চেষ্টা করছে।
প্রিপেইড মিটার স্থাপনের নামে জনগণের পকেট থেকে টাকা লোপাটের নতুন ফাঁদ পাতা হয়েছে দাবি করে নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রিপেইড মিটারে ব্যালেন্স শেষ হয়ে গেলে ২০০ টাকা ইমার্জেন্সি ব্যালেন্সের জন্য ৫০ টাকা হারে গ্রাহকদের সুদ পরিশোধ করতে হবে। প্রিপেইড মিটার কোনো কারণে লক হয়ে গেলে লক খোলার জন্য ৬০০ টাকা জমা দিতে হবে। বিদ্যুতের ওভার লোডের কারণে অনেক সময় বিদ্যুৎপ্রবাহ আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া এই প্রিপেইড মিটারের রিচার্জ করার সঙ্গে সঙ্গে টাকা কেটে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
প্রিপেইড মিটারের নানাবিধ অসুবিধা উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট না থাকলে রিচার্জ করা যাবে না। কৃষিকাজে ব্যবহৃত সেচ পাম্পগুলো মৌসুমের শুরুতে কৃষকরা বাকিতে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। ফসল তুলে বিক্রি করে সেই টাকা পরিশোধ করে। বর্তমানে এই প্রিপেইড মিটার পদ্ধতিতে আর সেই সুযোগ থাকছে না। পাশাপাশি প্রিপেইড মিটার স্থাপন করলে বিদ্যুৎ বিভাগের হাজার হাজার কর্মচারীকে পেশা হারিয়ে পথে বসতে হবে। এই প্রিপেইড মিটার পদ্ধতিতে কোনো কারণে সার্ভার ডাউন হলে উক্ত সার্ভারের আওতাধীন প্রিপেইড মিটারের গ্রাহকদের জন্য বিকল্প কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি বলেও অভিযোগ করেন বক্তারা।
ক্ষুব্ধ বিদ্যুৎ গ্রাহকরা বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে দফায় দফায় বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছিল। রেন্টাল-কুইক রেন্টালের নামে বিদ্যুৎ খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। যার খেসারত জনগণকে এখনো দিতে হচ্ছে। সারা দেশের মানুষকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবার আওতায় নিয়ে আসার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। অথচ তার পরিবর্তে একের পর এক গণবিরোধী সিদ্ধান্ত জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। গণশুনানি ব্যতীত নেসকো কর্তৃপক্ষ একতরফাভাবে এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে না।
এ বিষয়ে নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম হোসেন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রকৌশলী বলছেন, গণশুনানি অচিরেই করা হবে। তাছাড়া জেলার সমন্বয় সভা ও বিভাগীয় কমিশনার এবং সিটি কর্পোরেশনের বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। প্রিপেইড মিটারের ভালো দিক রয়েছে, তবে অনেকে হয়ত ভালোভাবে বিষয়টি জানেন না, যার কারণে গ্রাহক পর্যায়ে নেতিবাচক আলোচনা হচ্ছে।
এর আগে, গত ৯ জানুয়ারি মহানগর নাগরিক কমিটি হয়রানিমূলক প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধে পাঁচ দফা দাবি ঘোষণা করে। এর আগে ২৬ ডিসেম্বর বিদ্যুৎ গ্রাহক স্বার্থরক্ষা কমিটি এবং সাধারণ বিদ্যুৎ গ্রাহক পৃথকভাবে মানববন্ধনসহ গ্রাহকদের স্বার্থরক্ষায় গত ১৭ ডিসেম্বর নেসকোর প্রধান প্রকৌশলী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন, মির্জা বাবর বাবলু, সাইফুল ইসলাম, অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, লিখন চৌধুরী, মনির হোসেন মিন্টুসহ অনেকেই।