কর আরোপ নিয়ে ক্ষুব্ধ বরিশালের সাধারণ মানুষ

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ক্ষুব্ধ বরিশালের সাধারণ মানুষ/ছবি: সংগৃহীত

ক্ষুব্ধ বরিশালের সাধারণ মানুষ/ছবি: সংগৃহীত

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে দাবি করে সম্প্রতি বেশ কিছু পণ্যের ওপর নতুন করে কর আরোপ করেছে সরকার। একদিকে শীতকালীন সবজির দাম কমেছে দাবি উঠলেও, অপরদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবার মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ জনগণের কাঁধে নতুন বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে। মোবাইল রিচার্জ, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা থেকে শুরু করে গ্যাস সিলিন্ডারসহ একাধিক খাতে শুল্ক বৃদ্ধি করে সরকারের এই পদক্ষেপ ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে।

সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, বাজার এখন নিয়ন্ত্রণে। তবে সরেজমিনে বরিশালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। সবজি যেমন ফুলকপি ও শালগমের দাম ১০ থেকে ১৫ টাকায় নেমে এলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যেমন আলু, পেঁয়াজ, রসুন, ডাল, তেল এবং গরম মসল্লার দাম এখনো আকাশছোঁয়া। মুদি দোকানগুলোতে চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা, রসুনের দাম ২২০ টাকা, আর ২৮ চালের বস্তা ১,৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

বরিশাল নগরী পলাশপুর এলাকার গৃহিণী হাসিনা আক্তার জানান, বাজার করতে গেলে প্রতি দিন দুশো-তিনশো টাকা লাগে। আলু, তেল, ডালের দাম সব আকাশচুম্বী। তার সঙ্গে মোবাইল আর গ্যাসের দাম বাড়লে কীভাবে ঘর চালাব? সরকার কি আমাদের নিঃশেষ করে দিতে চায় । শ্রমিক আমিনুল হক বললেন, চিনি ১৭০, রসুন ২২০ টাকা। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতেই পকেট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। এইভাবে কি আর সংসার চালানো সম্ভব।

একদিকে কৃষকদের ফসলের মূল্যহীনতা, অন্যদিকে ভোক্তাদের ওপর চড়া দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি বাজার ব্যবস্থাপনার চরম ব্যর্থতা তুলে ধরেছে।

বিজ্ঞাপন

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) মোবাইল রিচার্জ, কলরেট, এবং ইন্টারনেট সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৩ শতাংশ করেছে। এ সিদ্ধান্তের ফলে মোবাইল ফোনে ১০০ টাকার রিচার্জে গ্রাহককে ৫৬ টাকার বেশি কর দিতে হবে। নতুন এই কর আরোপের ফলে সরকার বছরে প্রায় ১,০০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব অর্জন করবে। তবে সাধারণ জনগণের ক্ষোভ বাড়ছে। বিশেষত শ্রমজীবী মানুষ ও গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারীদের জন্য এই বাড়তি ব্যয় তাদের আয়ের সাথে একেবারেই বেমানান বলে মনে করছেন অনেকে।

বরিশাল নগরীর বিবি পুকুর পাড়ের মোবাইল রিচার্জের দোকানের মালিক রাসেল মিয়া জানান, এখন প্রতিদিন রিচার্জ কম হচ্ছে। মানুষ তো মোবাইল ব্যবহার কমাচ্ছে। শুল্ক বাড়ানোর পর গ্রাহক কমে যাবে। দিনে হাজার টাকার রিচার্জ বেচতে পারতাম, এখন হয়তো সেটাও হবে না। এর থেকে ভালো আমি দোকান বন্ধ করে অন্য কাজে চলে যাই।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা সরকারের এই সিদ্ধান্তকে জনগণের সঙ্গে নির্মম প্রতারণা বলে মন্তব্য করেছেন। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম শাহেদ বলেন, জনগণ এখন সরকারের কাছ থেকে ইতিবাচক পদক্ষেপ আশা করছিল। এই মুহূর্তে নতুন করে কর আরোপ জনমানসের বিপরীতে অবস্থান নেওয়ার প্রমাণ।

বরিশাল মহানগরের সমন্বয়ক সুজয় শুভ একে গভীর ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে বলেন, শীতের সবজি নিয়ে সাধারণ মানুষ কিছুটা স্বস্তিতে ছিল। ঠিক সেই সময়ে কর আরোপ জনগণকে নিঃস্ব করার পরিকল্পনা ছাড়া কিছুই নয়।

বরিশালের পোর্ট রোর্ডের এলাকার মুদি দোকানি মনিরুল ইসলাম জানান,চিনি, ডাল, চাল এসব পণ্য কিনে আনতে গিয়ে প্রতিদিন দাম বেড়েই চলছে। এখন এনবিআরের এই নতুন শুল্ক যোগ হয়ে গেলে দাম আরও বেড়ে যাবে। খুচরা বিক্রিতে গ্রাহকরা তো বেশি দামে নিতে চান না। তারা মনে করেন, আমরা দোকানদার লাভ করছি। অথচ মূল সমস্যা শুল্ক আর কর। আমাদের ব্যবসা আর চলবে না এভাবে।

জাতীয় নাগরিক কমিটির বরিশাল মহানগর সংগঠক শাকিল মৃধা একে জুলাই বিপ্লবের চেতনার পরিপন্থী উল্লেখ করে বলেন, অন্যায়ভাবে কর আরোপ সাধারণ মানুষের উপর নতুন বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। সরকার শ্রমজীবী ও হতদরিদ্র মানুষকে আরও বিপদে ফেলতে চলেছে।

এ বিষয়ে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর মতো বড় রাজনৈতিক দলগুলো কোনো মন্তব্য করতে চাননি। বিএনপির বরিশাল মহানগর আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক জানিয়েছেন, তিনি এখনও এই বিষয়ে জানেন না। অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের মহানগর আমীর জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর জানান, বিষয়টি বিস্তারিত জানার পর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।

বাজারে সাধারণ মানুষের দুর্দশা ও নতুন করে শুল্ক বৃদ্ধির এই পরিস্থিতি দেশে এক সংকটজনক অবস্থা তৈরি করেছে। সরকার যেখানে সমাধান খোঁজার কথা, সেখানে এমন সিদ্ধান্ত জনমনে চরম নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করছে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী সবাই ক্ষোভ প্রকাশ করলেও রাজনীতিতে বিরাজ করছে এক অস্বাভাবিক নীরবতা।