রাজশাহীর তানোর উপজেলার তালন্দ আনন্দমোহন উচ্চ বিদ্যালয়ে বীজ গ্রন্থাগারের যাত্রা শুরু করা হয়েছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক, বরেন্দ্র কৃষক বীজ ব্যাংক ও তালন্দ আনন্দমোহন উচ্চ বিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে এ গ্রন্থাগার স্থাপান করা হয়।
শনিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে এই বীজ গ্রন্থাগারের উদ্বোধন করেন তানোর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চৌধুরী মো. গোলাম রাব্বী।
উদ্যোক্তদের দাবি, এটি বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত প্রথম বীজ গ্রন্থাগার। এই গ্রন্থাগারে বরেন্দ্র অঞ্চলের দেশীয় প্রজাতির ধান, রবিশস্য ও সবজির বীজসহ প্রায় শতাধিক জাতের বীজ ও বীজ সম্পর্কিত তথ্য প্রদর্শন করা হচ্ছে। এছাড়া বীজ সম্পর্কিত চাষাবাদ এবং বীজ আদান-প্রদান বিষয়ে বরেন্দ্র কৃষক বীজ ব্যাংক সহায়তা করছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- বরেন্দ্র বীজ ব্যাংকের সভাপতি ও জাতীয় পরিবেশ পদকপ্রাপ্ত কৃষক ইউসুফ আলী মোল্লা, জাতীয় কৃষি পদকপ্রাপ্ত আদর্শ কৃষক নুর মোহাম্মদ, তানোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এমদাদুল ইসলাম, তালন্দ আনন্দমোহন উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষব বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক, বর্তমান প্রধান শিক্ষক আলতাফ হোসেন, বারসিক বরেন্দ্র অঞ্চল সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
বীজ গ্রন্থাগার উদ্বোধন শেষে ‘বীজ ও আমাদের লোকায়ত কৃষি বিজ্ঞান’ শীর্ষক সচেতনতামূলক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভার শুরুতে বীজ গ্রন্থাগারের গুরুত্ব বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন বারসিক বরেন্দ্র অঞ্চল সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘দেশের কৃষিতে তরুণসহ নতুন প্রজন্মের আগ্রহ দিন দিন কমে যাচ্ছে। ১৯৯১ সালের বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী জানা যায়, কৃষিতে ২৫-২৯ বছরের তরুণদের অংশগ্রহণ ছিল ৫২.১ ভাগ। কিন্তু ২০১১ সালে এসে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৮.৯ ভাগে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষিতদের মধ্যে এই হার অনেক বেশি। এভাবে কৃষি প্রধান বাংলাদেশে কৃষিতে তরুণদের অংশগ্রহণ কমতে থাকলে তাদের মধ্যে একসময় বাস্তবধর্মী কৃষিজ্ঞান, কৃষিকেন্দ্রিক লোকায়ত চর্চার দিকগুলো কমতে থাকবে। এলাকাভিত্তিক জাতগুলো না চেনার কারণেও হারিয়ে যেতে পারে। নতুনদের মধ্যে এই জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই এই বীজ লাইব্রেরি স্থাপন করা হয়েছে।’
উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী মো. গোলাম রাব্বী বলেন, ‘বাংলাদেশে এই প্রথম বীজ লাইব্রেরি তানোরে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে। এটা আমাদের জন্যে একটি গর্বের বিষয়। কৃষি সম্পর্কিত জ্ঞান শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে এই বীজ লাইব্রেরি অনেক বেশি ভূমিকা পালন করবে।’
ধীরে ধীরে তানোরের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও এই বীজ লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার কথা বলেন তিনি।